তারেক রহমান
তারেক রহমান

ইন্টারপোলের তালিকায় নাম নেই তারেক রহমানের

ব্রিটেনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরানো সম্ভব হবে না। কেননা ইন্টারপোলের তালিকায় তারেক রহমানের নাম নেই। ফলে যুক্তরাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত ও দেশটির আইন অনুযায়ী তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) থেকে পাঠানো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রথমে ইন্টারপোল ২০১৫ সালের শুরুর দিকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে। ওই বছরের ২ জুলাই তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল কমিশন।

বিষয়টি জানতে পেরে আইনি লড়াইয়ে নামেন তার আইনজীবীরা। ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ অবৈধ ও ইন্টারপোলের ৩ অনুচ্ছেদ বিরোধী বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে রেড নোটিশের তালিকা থেকে তারেক রহমানের নাম প্রত্যাহারের আদেশ দেয় ইন্টারপোল কমিশন। এরপরই রেড নোটিশের তালিকা থেকে তারেক রহমানের নাম প্রত্যাহার করে নেয় ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি সূত্র জানায়, ইন্টারপোলের নীতি অনুযায়ী রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগত ব্যক্তিত্ব এবং কোনও দেশের সেনাবাহিনীর কোনও সদস্যের নামে রেড নোটিশ জারি করার বিধান নেই। বাংলাদেশসহ ১৯২টি দেশ ইন্টারপোলের সদস্য। এসব দেশ নিজেদের পুলিশ বাহিনীর এনসিবি শাখার মাধ্যমে ভিন্ন কোনও দেশে পালিয়ে থাকা অপরাধী ও আসামির অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেফতার করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে।

কোনও মামলার আসামি বা অপরাধী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে মর্মে নিশ্চিত হলে ওই মামলার আসামি পুলিশ সদর দফতরে বিষয়টি জানান। এরপর পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখা থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে ইন্টারপোলের সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেফতারের অনুরোধ জানানো হয়।

তখন তারা কাউকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে পারলে এনসিবিকে জানানো হয়। এরপর পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে আটক ব্যক্তিকে ওই দেশ থেকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করে।

পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, কোনও ব্যক্তিকে অন্য কোনও দেশ থেকে নিয়ে আসতে চাইলেই আনা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ওই দেশের সরকার বা কর্তৃপক্ষকেও আন্তরিক হতে হবে। তাদের দেশের আইন তা অনুমোদন করে কিনা তাও বিবেচনায় নিয়ে থাকেন তারা। সম্পর্ক ও সমঝোতা না থাকলে কোনও পলাতক আসামি বা অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

১৯৭৬ সালে ইন্টারপোলের সদস্য হয় বাংলাদেশ। নব্বই দশকের পর থেকেই মূলত ইন্টারপোলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও আসামির নাম পাঠানো শুরু করে বাংলাদেশের পুলিশ। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারত ও সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ থেকে এ পর্যন্ত আট-১০ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামও আছে। ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর দেশে ফিরিয়ে আনা হয় তাকে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, চিকিৎসার নামে এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন তিনি। দেশটির সরকারও তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে বলে জানা যায়। তারা যদি তারেক রহমানকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েই থাকে, তাহলে কোন পদ্ধতিতে তাকে বাংলাদেশকে ফেরত দেবে, তা নির্ভর করছে যুক্তরাজ্য সরকারের ওপর।

শেয়ার করুন: