মুখে দুর্গন্ধ

মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা

মানুষের ব্যক্তিত্বের বেশ বড়ো অংশজুড়ে থাকে তার মৌখিক সৌন্দর্য। কিন্তু মুখের দুর্গন্ধ সেই সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয় নিমিষেই। মার্কিন এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ২৫ শতাংশ মানুষ এই মুখের দুর্গন্ধ বা Bad Breath এর কারণে মানসিক অস্বস্তিতে ভোগেন। মূলত মুখের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এই দুর্গন্ধের জন্য দায়ী।

আপনিও কি একই সমস্যায় কাতর? সমাধান খুঁজছেন? তাহলে ধৈর্য ধরে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। দেহ সবসময়েই আপনাদের অসুবিধাগুলোর সহজ সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। তাই আজ আমরা আপনাকে এমন ১০টি ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বলবো, যা এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ দেখাবে।

আমাদের অনেকেই এই দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনে সময় বের করে আনতে পারি না নিজের জন্য। যারা সহজ সমাধান খুঁজছেন তাদের জন্য লবণ পানি একটি কার্যকরী উপায়। এক চা চামচ লবণ নিন এবং কুসুম গরম পানিতে সেই লবণ গুলিয়ে কুলি করুন। দুর্গন্ধ দূর হবে ঝটপট।

গ্রিন টি মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা দেয়: এই সবুজ চা বা গ্রিন টি’র অনেক গুণের কথা আমরা জানি। শরীরের মেদ কমানো থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গ্রিন টির জুড়ি নেই। আবার মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতেও বাধা দিতে পারে এই চা। সকালে ঘুম থেকে উঠে, এক কাপ গ্রিন টি আপনার কর্মচাঞ্চল্য তো বাড়াবেই সাথে মুখের ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা দিয়ে আপনার নিশ্বাসকে করবে সজীব।

পুদিনা পাতা মুখের দুর্গন্ধ তাড়ায় ম্যাজিকের মত: দ্রুত নিশ্বাসকে আরও বাজে গন্ধ থেকে মুক্তি দিতে পুদিনাপাতা ম্যাজিকের মত কাজ করে। পুদিনাপাতা প্রাকৃতিক ‘মাউথ ফ্রেশনার’ হিসেবে বেশ সুপরিচিত। ধনিয়াপাতাও যদি যোগাড় করে ফেলতে পারেন তবে এই দুই ধরনের পাতা চিবিয়ে খেলে সাময়িকভাবে মুখের গন্ধ থেকে মুক্তি পাবেন। তবে হ্যাঁ, বেশ লম্বা সময়ের জন্য এই পদ্ধতি কাজে আসবে না।

মুখের দুর্গন্ধ তাড়াতে পানির বিকল্প নেই: শুনতে অবাক লাগলেও, দৈনিক ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি আপনার মুখের দুর্গন্ধ থেকে আপনাকে রেহাই দিতে পারে। পানি মানুষের শরীরের জন্য অপরিহার্য এক উপাদান। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার ফলে মুখের ভেতরে লালা তৈরি হয় যা মুখকে দ্রুত পরিষ্কার করে।

দুধ হতে পারে মুখের দুর্গন্ধ তাড়ানোর হাতিয়ার: বাঙালি মানেই, বরাবরই তেল-মশলা জাতীয় খাবারের প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা কাজ করে। ভাজাপোড়া, অথবা একটু ভারী খাবার খেলে অনেকের মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় যেটা বেশ বিরক্তিকর। এই ক্ষেত্রে খাবারের আগে অল্প পরিমাণে দুধ পান করলে মুখের এই অস্বস্তি ভাবটা কমে যায়।

দাঁতন হিসেবে নিমের ডাল: নিমগাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে ইট কাঠের এই শহরে নিমগাছ খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন বৈকি। কিন্তু নিমের দাঁতন যোগাড় করে ফেললে এবং নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের দুর্গন্ধের পাশাপাশি অনেকে যারা মাড়ি থেকে র’ক্তপড়া জনিত সমস্যায় আক্রান্ত তারাও মুক্তি পেতে পারেন।

লেবুর রস আর গরম পানি: লেবুর রসে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড মুখের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রাণঘাতী। নিয়মিত লেবুর রস খেলে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া আর জন্মাতে পারে না। প্রতিদিন হালকা গরম পানিতে অল্প লেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে খেতে পারেন।

গোটা মেথি ফোটানো পানি: মেথি আপনাকে এই সমস্যা থেকে নিমিষেই দিতে পারে মুক্তি। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি নিন। এর পর পানিতে ফোটান। পরে সেই পানি থেকে মেথি ছেঁকে ফেলে দিয়ে, পানিটা পান করুন। এই পানীয়টা মেথি চা হিসেবে পরিচিত।

খাবার সোডা মিশ্রিত পানি দিয়ে কুলকুচি: মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে খাবার সোডা বেশ উপকারী। প্রতিদিন টুথব্রাশে অল্প সোডা লাগিয়ে দাঁত মাজুন। এবং অবশ্যই দুই বেলা। আবার আরেকভাবেও খাবার সোডাকে ব্যবহার করতে পারেন। হাফ চামচ খাবার সোডা নিয়ে পানিতে মেশান। নিয়মিত সেই পানি দিয়ে কুলি করুন। মুখের বিকট গন্ধ পালাবে অচিরেই।

নারিকেল তেল গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা দেয়: প্রতিদিন সকালে নারিকেল তেল নিয়ে মুখের ভেতর আলতো করে মালিশ করুন। এরপর কুলি করে ফেলুন। নারিকেল তেলে আছে বিশেষ অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান যা গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা দেয়।

এই দশটি ঘরোয়া উপায়ের যেকোনোটি ব্যবহার করে আপনি মুখের সমস্যা থেকে সাময়িক এমনকি চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন। তবে সমস্যা দীর্ঘদিনের হলে দন্ত চিকিৎসকের সাহায্য নিতে ভুল করবেন না।

শেয়ার করুন: