মানে যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাঁরা জানেন বিমানবালারা বেশ আন্তরিকতার সঙ্গেই যাত্রীদের সেবা প্রদান করে থাকেন। দীর্ঘ যাত্রায় পানি, খাবার, কম্বল দেওয়া থেকে শুরু করে ডিপারচার কার্ড বা প্রস্থানের ফরম বিলি কিংবা প্রাথমিক চিকিৎসা—সবকিছুতেই বিমানবালারা চেষ্টা করেন যেন যাত্রীসেবায় কোনো ত্রুটি না থাকে।
তবে যাঁরা নিয়মিত বিমানে চড়েন না, তাঁরা হয়তো না বুঝেই অনেক প্রশ্ন করে ফেলেন। এতে বিমানবালারা বিরক্ত হতে পারেন, আবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন আপনিও। তাই বিমানবালাদের কী প্রশ্ন করবেন আর কী করবেন না, তার একটি তালিকা পাওয়া গেছে বিমানযাত্রাবিষয়ক ওয়েবসাইট বোর্ডিং এরিয়া ডটকমে। বিমানযাত্রার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক:
১. আমি কি ফার্স্ট ক্লাসের বাথরুম ব্যবহার করতে পারি? এ প্রশ্ন করে থাকেন অনেকেই। তাঁরা হয়তো জানেন না, ফার্স্ট ক্লাসের বাথরুম শুধু যাঁরা ফার্স্ট ক্লাসের জন্য টিকেট কেটেছেন, তাঁদের জন্যই বরাদ্দ। এ ধরনের প্রশ্ন করেও নিজের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেওয়া হয় আর বিমানবালাদেরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা হয়।
২. সিনেমা শুরু হচ্ছে না কেন? ওয়াই-ফাই নেই? বিমানে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আপনার সামনের মনিটরে সিনেমা দেখার সুযোগ নেই। কারণ, সেখানে উড্ডয়ন-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার পর আপনি সিনেমা দেখতে পারবেন বা গান শুনতে পারবেন। আর এতে সময় লাগে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। তাই বিমানে উঠেই জিজ্ঞেস করবেন না, সিনেমা দেখানো হচ্ছে না কেন? শুরুর সময়টাতে ম্যাগাজিনে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা শেষ হলে সামনের মনিটর আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, তখন আপনি পছন্দমতো ছবি বা গান শুনতে পারবেন।
আর হ্যাঁ, বিমান পুরোপুরি আকাশে ওঠার আগে ওয়াই-ফাই সেবা পাওয়া যায় না। কাজেই বিমানে উঠেই ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে প্রশ্ন করবেন না। ধৈর্য ধরুন, কর্তৃপক্ষই বলে দেবে কখন আপনি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারবেন। তা ছাড়া সব বিমানে ওয়াই-ফাই সেবা নাও থাকতে পারে। যদি থাকে সেটা বিমান কর্তৃপক্ষই আপনাকে বলে দেবে।
৩. কানেক্টিং ফ্লাইটটা আটকে রাখতে পারবেন? গন্তব্যে পৌঁছাতে বিমান পরিবর্তন করে অন্য যে বিমানে উঠতে হয়, তাকেই কানেক্টিং ফ্লাইট বলা হয়। আপনি যে বিমানে আছেন, সেই বিমানের বিমানবালার সঙ্গে আপনার কানেক্টিং বিমানের কোনো যোগাযোগ থাকে না। তার পরও আপনি যদি বর্তমান বিমানের বিমানবালাকে প্রশ্ন করেন, কানেক্টিং ফ্লাইটটা একটু দেরি করতে পারবে কি না, তাহলে সেটা ঠিক হবে না। কারণ, এই বিষয়টি বিমানবালার হাতে নেই। বরং ট্রানজিট বিমানবন্দরে নেমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সুরাহা আপনাকেই করতে হবে।
৪. এটা (বকশিশ) রাখুন! রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পর মোটা অঙ্কের বকশিশ দেওয়ার অভ্যাস আপনার আছে। সে জন্য মনে মনে বেশ গর্ব বোধ করেন আপনি। তাই বলে বিমান অবতরণের পর বিমানবালাকে ডেকে তাঁর হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলবেন না, ‘এটা রাখুন। কিছু কিনে খাবেন!’ প্রথমত, বিমানের নীতিমালার ঘোরবিরোধী এটি। দ্বিতীয়ত, বিমানবালাদের জন্য এটি অপমানজনক। তাই যদি তাঁদের সেবা বা ব্যবহারে আপনি মুগ্ধ হয়ে থাকেন, হাসিমুখে একটা ধন্যবাদ দিন, সেটাই যথেষ্ট।
৫. আমি কি বিজনেস ক্লাসের খালি আসনে বসতে পারি? বাসে এ রকম হরহামেশাই করে এসেছেন। সামনের দিকের সিট খালি থাকলে পেছনের সিট ছেড়ে সামনে চলে এসেছেন। এটা আপনার কাছে কোনো ব্যাপারই না। এ জিনিসই চেষ্টা করতে গেলেন বিমানে। দেখলেন, বিজনেস ক্লাসের সিটগুলো খালিই পড়ে আছে। গিয়ে বসে পড়লেই হয়। কিন্তু বিজনেস ক্লাসে বসতে হলে আপনাকে বিজনেস ক্লাসের টিকেট করতে হবে আগে। সেটা যদি না করে থাকেন, তাহলে ইকোনমি ক্লাসেই নিজের মতো স্বচ্ছন্দ হয়ে নিন।
৬. ব্যাগটা ওপরে রেখে দেবেন? কষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না, ডাকলেন একজন বিমানবালাকে। বললেন, ব্যাগটা একটু ওপরে উঠিয়ে রাখুন। এটা কিন্তু তাঁদের কাজের মধ্যে পড়ে না। নিজের ব্যাগ নিজেই উঠিয়ে রাখুন এবং চাইলে সহযাত্রীকে সহযোগিতা করতে পারেন; কিন্তু বিমানবালাদের এ ধরনের অনুরোধ করবেন না।
৭. ওষুধ আছে কি? যাত্রীদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সামাল দেওয়ার জন্য ফ্লাইটেই চিকিৎসক থাকেন। যদি অসুস্থ বোধ করেন, তাহলে সেটা বিমানবালাদের জানাতে পারেন; সাহায্য চাইতে পারেন। কিন্তু নিজেই ডাক্তারি ফলিয়ে তাঁদের কাছে ওষুধ চাইবেন না। কারণ, তাঁদের ওষুধ দেওয়ার এখতিয়ার নেই এবং দ্বিতীয়ত, সেটা তাঁদের কাজও নয়।
৮. আসন বদলাতে পারি? অনেকেই একই ফ্লাইটে বন্ধুবান্ধব বা পরিচিতি কারো দেখা পেয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে পাশাপাশি সিটে বসে যাওয়ার ইচ্ছা জাগতেই পারে। সে ক্ষেত্রে কখনোই বিমানবালাদের অনুরোধ করবেন না, সিট বদলে দেওয়ার জন্য। বড়জোর আপনি নিজে সেটা বিনীতভাবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আপনার অনুরোধে যদি কোনো যাত্রী নিজের সিট পরিবর্তন করে আপনার পরিচিত বা বন্ধুর সঙ্গে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে রাজি থাকেন, তাহলেই কেবল আপনার আশা পূরণ হবে।
৯. আমরা এখন কোথায় আছি? দুম করে জিজ্ঞেস করে বসবেন না, বিমান এখন কোথায় আছে বা কোন জায়গার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে? কারণ, আকাশে কোনো সাইনবোর্ড দেওয়া থাকে না, যা দেখে বিমানবালা আপনার প্রশ্নের জবাব দেবেন। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন, কারণ কাছাকাছি এলে সেটা ক্যাপ্টেন জানিয়ে দেবেন। সামনের মনিটরেও সেটা আপনি দেখতে পারবেন, যদি মনিটরের চ্যানেল পরিবর্তন করেন।
১০. কলম আছে? এটি খুবই সাধারণ একটি প্রশ্ন মনে হতে পারে আপনার। এটা কিন্তু বেশ বিরক্তিকর একটা ব্যাপার বিমানবালাদের জন্য। তাঁরা প্রায়ই এ ধরনের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন। কারণ, অনেকেই তাঁদের কাছে কলম ধার চান। কলম সঙ্গে নিয়ে ঘোরাটা তাঁদের কাজ নয়। তাই এ ধরনের প্রশ্ন করবেন না।