ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মধ্যরাতে সুফিয়া কামাল হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে ছাত্রীদের

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছাত্রীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। হল প্রশাসন অভিভাবক ডেকে এনে তাদের বের করে দিয়েছে বলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার পর থেকে তারা হল ত্যাগ করেন। রাত ১২ টার পর এক ছাত্রীকে তার অভিভাবকের সাথে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা জানান, সন্ধ্যার পর হল প্রাধ্যক্ষ কোটা আন্দোলনে জড়িতদের ডেকে হল ছেড়ে দিতে বলেন। তাদের কারণে হলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান। বের করে দেয়া ছাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন অন্তি (পদার্থ), রিমি (পদার্থ), শারমিন (গণিত)। এছাড়াও অনেকের নাম পাওয়া যায়নি। সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন ছাত্রী। তারা বলেন, প্রাধ্যক্ষ অন্য মেয়েদের হল থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। ফেসবুকে যেন কোনো ধরনের পোস্ট দেয়া না হয় সে ব্যাপারেও হুঁশিয়ার করছেন।

ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর বাবা ফারুক হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে হল থেকে একজন মহিলা ফোন দিয়ে হলে আসতে বলেছে। তখন আমি বললাম আমার বাসা ধামরাই। আমি ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে আসব। তখন ওই মহিলা আমাকে বলে হলে আপনাকে আসতেই হবে। আমি কিছু বলতে পারব না। কী কারণে আমাকে আসতে বলেছে। এখন আমি আসলাম দেখি করে।

চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাদের ফেসবুকে কোন কিছু লিখলে ও হলের কোন কিছু ভিডিও করলে বহিষ্কার করার কথা বলেছেন প্রাধ্যক্ষ ম্যাম। রাত ১০টার গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন অভিভাবক তাদের মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছেন। এসময় অনেককে কান্না করতে দেখা গেছে।

সাধারণ ছাত্রীরা হলের এই অবস্থানের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা বলছেন হলের প্রাধ্যক্ষ আরও বহু ছাত্রীর ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন। সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, আমরা অনেক ছাত্রীকে ডেকেছি। তাদের মোবাইল চেক করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সাংবাদিকদের সামনেই বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনাটা শুনেছি। প্রাধ্যক্ষকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করব। রাত ১২টা ৪০মিনিটে এক ছাত্রীর বাবা হলের ফটক দিয়ে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ফোন করে হলে এসে তাঁর মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপর থেকে ওই ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ধামরাই থেকে হলের গেটে পৌঁছে অপেক্ষা করছিলেন। পরে তিনি একাই সেখান থেকে চলে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তাঁর মেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আন্দোলনের কারণে সে (ওই ব্যক্তির মেয়ে) রাতেও হল থেকে বের হয়েছিল।

কোটা পদ্ধতির সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও জেলা পর্যায়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছিলেন চাকরি প্রত্যাশীরা। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত থাকে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি না থাকায় প্রশাসনিক কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা ১২ এপ্রিল আন্দোলন স্থগিত করেন। বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রীদের বের করে দিচ্ছে কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ। হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা নিজেই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে একথা জানান।

সাধারণ ছাত্রীরা হলের এই অবস্থানের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা বলছেন হলের প্রাধ্যক্ষ আরও বহু ছাত্রীর ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন। সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, আমরা অনেক ছাত্রীকে ডেকেছি। তাদের মোবাইল চেক করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঠিক কত ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্ক বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত নিশ্চিত হওযা যায়নি। প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এমন চারজন ছাত্রীর পরিচয় জানতে পেরেছেন।

এরপর থেকে ওই ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ধামরাই থেকে হলের গেটে পৌঁছে অপেক্ষা করছিলেন। পরে তিনি একাই সেখান থেকে চলে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তাঁর মেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আন্দোলনের কারণে সে রাতেও হল থেকে বের হয়েছিল। ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না হয় হল থেকে এসব বিষয়ে তাঁকে ডেকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

সাবিতা রেজওয়ানা বলেছেন, দুই ছাত্রীর স্থানীয় অভিভাবককে ডেকে ছাত্রীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেছেন, রাতে আটজনকে বের করে দেওয়া হয়েছে। হল কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, রাত ৯টা থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে সবাইকে একসঙ্গে বের করে দেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলের ফ্লোরে ফ্লোরে রাতে হাউস টিউটররা পাহারা বসান। ছাত্রীরা আতঙ্কে আছেন। তাঁরা বলছেন, মূলত যে ২৬ ছাত্রী ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন প্রথম ধাপে তাদের বিচার করছে হল প্রশাসন।

প্রাধ্যক্ষের সাইবার ক্রাইমে মামলার হুঁশিয়ারিঃ রাত ১১টায় কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রদীপ্ত ভবনের নিচে প্রাধ্যক্ষ ছাত্রীদের ডেকে হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর অডিও ক্লিপ প্রথম আলোর হাতে রয়েছে। তিনি যা বলেছেন হুবহু তাই তুলে ধরা হলো-

‘অনেকে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয়। ইনেটলিজেন্স সেল দেখবে যে কারা কারা বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিচ্ছে। আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি ইনভলভমেন্ট। এরপরে এই হলে ছাত্রলীগ যদি গণ্ডগোল করে আমাকে বিচার দেবে। জেনারেল মেয়ে গণ্ডগোল করলে আমাকে বিচার দেবে। এখন থেকে হল সিট হল প্রশাসন দেবে। আর কোনো পয়েন্টে এর বাইরে আর কোনো সিট হবে না।

হলে যদি আর কেউ বিশৃংখলা করার চেষ্টা করে বা তোমরা কোনো পোস্ট দেওয়ার চেষ্টা কর হলকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাহলে কিন্তু আমরা সরকারকে বলব...আমার নলেজের বাইরে আমার ভিডিও যে আপলোড করে সেটা কিন্তু ক্রাইম, আজকে আমি বলে দিলাম সেটা কিন্তু সাইবার ক্রাইম...আই ওয়ান্ট টু বি লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। কারও কিছু প্রশ্ন আছে?

জবাবে ছাত্রীরা ওই রাতে ছাত্রলীগ সভানেত্রী ইফফাত জাহান এশাকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছে তাতে দুই হাজার মেয়ে সম্পৃক্ত ছিল বলে উল্লেখ করেন। তখন সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, দুই হাজার মেয়ে কিছু করেনি। আমার সিসিটিভি ফুটেজে আছে কারা কারা করেছে। দুই হাজার মেয়ে সাক্ষর দাও, আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেব। আমি দুই হাজার মেয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেব।

আমার শিক্ষকেরা দেখেছে, আমার সিসিটিভি প্রমাণ আছে ওরা মেরেছে। তোমরা যদি মেরে থাক, নাম লেখ। ওদিন যেটা হয়েছে সেটা অপপ্রচার। ওই মেয়ে যার পা কেটেছে সে নিজে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ওর শুধু পা-ই কাটা হয়েছে। এই মেয়েটাকে যে পরিমাণ মারা হয়েছে সেটা কি বিচারে মারা হয়েছে। যে মেয়ে ভয় পেয়েছে সে নিজে বলেছে। মোবাইল দিয়ে কি করছ?

শেয়ার করুন: