সাঈদ খোকন

সাঈদ খোকন ভেঙ্গে দিল সেই রেকর্ড

পরিচ্ছন্নতার রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে বাংলা সনের শেষ দিনে নগর পরিষ্কারের অভিযানে নেমেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কর্মসূচি শুরুর এক ঘন্টার মধ্যে নগরপিতা সাঈদ খোকনের উল্লাস, ‘হ্যালো ঢাকা, রেকর্ড তো ভেঙে গেছে!’ ততক্ষণে রেকর্ড সত্যিই ভেঙে গেছে। কারণ, এর আগে ২০১৭ সালের ২৮ মে ভারতের গুজরাট রাজ্যের ভাদোধারায় ঝাড়ু হাতে এক সাথে একই সময় ৫ হাজার ৫৮ জন ব্যক্তি নগর পরিষ্কারে অংশ নিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড –এ রেকর্ড গড়েছিলেন।

আর সাঈদ খোকন যখন মঞ্চে ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখন ঝাড়ু হাতে একসঙ্গে ৯ হাজার ১৮ জন গুলিস্তানের রাস্তায় পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। এদিকে সচল ছিল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের এন্ট্রিগেটও। সকাল পৌনে ১১টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে কর্মসূচিতে বারকোড এন্ট্রি করে অংশ নেয় ১৫ হাজার ৩১৩ জন। যদিও মহৎ এ উদ্যোগে অংশ নিতে এসেছিল অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন এই কথাই। কারণ, যে প্রক্রিয়ায় লোক গণনা হয়েছে তা যথাযথ ছিল না বলে মনে করছেন অনেকেই।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, ডেটল নগর পরিষ্কার অভিযানে অংশ নিতে আসা লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে যারা কেবল হাতে বারকোডের ব্যাজ পরে এন্ট্রি করেছেন কেবল তাদেরই আনুষ্ঠানিকভাবে গোনা হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু প্রবেশপথ দিয়ে ঢোকা মানুষদের সংখ্যা গোনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর বাইরে বিভিন্ন পথ দিয়ে আসা আরো হাজারো মানুষের অনেকেই বারকোড স্ক্যানারে প্রবেশ করাননি। এছাড়া সচেতনতার অভাবেও অনেকেই নিজের বারকোড প্রবেশ করাননি।

অনুষ্ঠানস্থলের আশেপাশে ঘুরে দেখা গেছে, শতকরা ১০ ভাগ লোকও হাতে বারকোডের ব্যাজ পরেননি। অনেকে আবার হাতে ব্যাজ পরলেও স্ক্যান করাননি। স্ক্যান করিয়েছেন কি না জানতে চাইলে অনেকেই বলেন, কোথায় স্ক্যান করাতে হবে তা তারা জানেনই না। এদিকে কর্মসুচিতে লোক গননার দায়িত্বে থাকা পরিসংখ্যানবিদ পিনাকি রঞ্জন সেন জানান, বারকোড প্রবেশ না করিয়ে চলে যাওয়ায় কর্মসূচিতে আসা অনেককেই রেকর্ডে গণনা করে অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হয়নি। সবার সংখ্যা গণণা করা গেলে এই রেকর্ডে লোকসংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেত বলে জানান তিনি।

তবে নগর পিতা সাঈদ খোকন ১৫ হাজার ৩১৩ জন লোক ঝাড়ু হাতে নগর পরিষ্কারে নেমে বিশ্ব রেকর্ড গড়ায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে বারবার উল্লসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন। কড়া রোদে প্রায় দেড়ঘণ্টা মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে নগরবাসীকে এই মহৎ কাজে উৎসাহ যোগান তিনি। মঞ্চের মাইকে তিনি বার বার উচ্চারণ করেন, ‘বাঙালি জাতি মাথা নত করতে জানে না। একের পর এক রেকর্ড গড়া ও রেকর্ড ভাঙার মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব।’

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে কাতারে প্রবেশ করেছে। আমরা একের পর এক নতুন নতুন লক্ষ্য অর্জন করছি। আজ নতুন আরেকটি রেকর্ড গড়লাম। এভাবেই আমরা সামনে দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে আমি এক সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলাম। সেই কারণেই আজকের এই মহতী উদ্যোগে না এসে পারিনি। ভালো লাগা ও দায়িত্ববোধ থেকে এখানে ছুটে এসেছি। আপনারা যারা এই কাজে অংশ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

সংসদ সদস্য ও গাজি গ্রুপের চেয়ারম্যান গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীক বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু থাকি ঢাকায়। সেই কারণে ঢাকার প্রতি আমার ভালবাসা অপরিসীম। আজকের এই উদ্যোগে শরিক হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।’ অভিনেতা রিয়াজ বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য আজকের এই অভিযান এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এই জন্য আমরা সবাই নগর পিতা সাঈদ খোকনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই কড়া রোদের মধ্যে যারা কষ্ট করে এই কাজে অংশ নিয়েছেন।’

এর আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতিকী কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর নগর ভবনে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। ‘ডেটল পরিচ্ছন্ন ঢাকা, সাপোর্টেড বাই ডিএমপি এন্ড পাওয়ার্ড বাই জিটিভি’শীর্ষক এই প্রতীকী কর্মসূচি সকাল পৌনে ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও সকাল ৭টার মধ্যেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে নগর ভবনে এসে জড়ো হতে থাকেন। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে নগর ভবনের সামনের সড়ক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিকী এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে নগর ভবনে আসেন। তারা সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সিটি করপোরেশনের দেওয়া ঝাড়ু, ক্যাপ, বারকোড, মাস্ক, গ্লাভস ও আইডি কার্ড সংগ্রহ করেন। বড়দের পাশাপাশি মহৎ এ কাজে শিশুরাও অংশ নেয়। সকাল পৌনে ১০টায় মেয়র সাঈদ খোকন ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা ও ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের নিয়ে সঙ্গে নিয়ে নগর ভবন থেকে বের হন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে যান। এ সময় তার হাতে ছিল জাতীয় পতাকা।

জিরোপয়েন্টে নির্মিত মঞ্চে উঠে ঝাড়ু হাতে প্রতীকী কর্মসূচির রিহার্সেল দিতে থাকেন মেয়র সাঈদ খোকন। পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াও দুই হাতে ঝাড়ু উঁচিয়ে নাড়তে থাকেন। মঞ্চের সামনে থেকে গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো হাজার হাজার লোক তখন প্রতীকী ঝাড়ু দিতে ব্যস্ত। এভাবেই ঢাকা শহরকে পরিষ্কার রাখার প্রতীকী এ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে সকাল ১১ টায়। নগরবাসীকে আবারো ধন্যবাদ জানিয়ে নগর ভবনে ফিরে যান সাঈদ খোকন।

এদিকে ঢাকা শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতীকী এই আয়োজন ঘিরে পল্টন, শাহবাগ, গুলিস্তানসহ বেশ কয়েকটি সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের প্রতীকী এ কর্মসূচি বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানোর ব্যবস্থা করে ডিএসসিসি। ঢাকা ওয়াসা, মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি মেডিকেল বুথ স্থাপন করা হয় কর্মসূচি এলাকায়।

শেয়ার করুন: