লাল রং নিষেধের প্রতীক কেন? জেনেনিন

আবহমানকাল ধরে আমরা লাল রংকে নিষেধের রং হিসেবে জেনে এসেছি। জেনে এসেছি, লাল দেখলে থেমে যেতে হয়। ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে খেলার মাঠের লাল কার্ড, সিঁদুর থেকে অপারেশন থিয়েটারের লাল আলো— সর্বত্রই নিষেধাজ্ঞা। কীভাবে লাল রং আর নিষেধ একাকার হয়ে গেল, সে কাহিনিকে দেখা যাক।

লাল রং 'চরম'-এর প্রতীক। আবার একই সঙ্গে লাল প্যাশন, যৌনতা, ভায়োলেন্স, রাগ ইত্যাদিরও প্রতীক। কিন্তু সব কিছুকেই ছাপিয়ে যায় লালের নিষেধাজ্ঞা-প্রতীক। রক্ত এবং আগুন— এই দুইয়ের লালবর্ণকে লক্ষ করত আদিম মানুষ।

তারা দেখেছিল, রক্তপাত মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। লাল আগুন সব কিছুকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। তখন থেকেই লাল সম্পর্কে মানুষের একটা ভীতি ও সমীহ গড়ে ওঠে।

আদিম মানুষ এ-ও লক্ষ্য করেছিল যে, নারীর ঋতুকাল সহবাসের পক্ষে অযোগ্য এক সময়। এখানেও রক্তের অনুষঙ্গ হিসেবে লাল রং সামনে এসেছিল। আদিম সমাজে উর্বরাশক্তির কালই প্রচলিত ছিল 'ধর্ম' হিসেবে। ফলে, ঋতু-সংক্রান্ত ভাবনা অন্যত্রও প্রযুক্ত হতে শুরু করে। লাল রং-ও ছড়িয়ে পড়ে নিষেধের অনুজ্ঞা নিয়ে।

লালকে একটা সীমানা-চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয় আদিকালেই। সেই সীমানা অতিক্রম করলে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে, এমন এক বার্তা অঘোষিতভাবে প্রচলিত হয়ে যায়। ক্রমে লাল হয়ে ওঠে সর্বজনমান্য বিপদের রং।

আদিকালে গণেশ সিদ্ধিদাতা নন, 'বিঘ্নকারী' হিসেবেই চিহ্নিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন দার্শনিক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়-সহ অসংখ্য বিদ্বজ্জন। সেকারণেই গণপতিকে লাল রঙে চিহ্নিত করার প্রথা শুরু হয়।

লাল এসে বসে সনাতন ধর্মের বিবাহিতা নারীদের সিঁথিতে। এই নারী তার স্বামী ব্যতীত অন্যের কাছে কাম্য নয়— একথা জানাতেই সিঁদুরের উৎপত্তি বলে জানিয়েছেন নৃতত্ত্ববিদরা।

এছাড়া ষাড়ের লড়াই বা ষাড়ের সঙ্গে খেলা করার রীতি প্রাচীন কাল থেকেই। আর ষাড়কে ক্ষেপিয়ে তুলতে লাল রঙের কাপড় ব্যবহার করা হয়। লাল রং দেখলেই মাথায় রক্ত উঠে যায় পাগলা ষাড়ের। লাল নিষেধের রং হয়ে ওঠার পেছনে এটিও একটি কারণ বলে মনে করেন অনেকে। - সূত্র: ইন্টারনেট।

শেয়ার করুন: