"সালাফিয়্যা" শব্দটি ইবনে তাঈমিয়া সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন । অতঃপর তার শিষ্য ইবনে কাইয়েম আল্ জাওযিয়া 'সালাফিয়্যা মযহাবকে' সমৃদ্ধ করতে সচেষ্ট হন । এই দুই ব্যক্তির আগে “সালাফিয়্যা” নামের কোনো মাযহাব ছিল না, এমন কি “সালাফিয়্যা” শব্দটিও ইতিহাসে পাওয়া যায় না ।
বরং হাদীস শরীফে প্রশংসিত প্রথম দুই ইসলামী শতাব্দীর মুসলমান তথা সালাফ-ই-সালেহীনগণের একটি মযহাবই আছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে আগমনকারী ইসলামী উলামাকে বলা হয় “খালাফ আস সোয়াদেকীন”। এ সকল সম্মানিত জ্ঞান বিশারদদের এ’তেকাদ বা বিশ্বাসসমূহকেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাতের মতাদর্শ বলে। এটা হচ্ছে ঈমানের মযহাব।
আসহাবে কেরাম ও তাবেয়ীনগণেরও এই একই ঈমান ছিল। তাঁদের ঈমানের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। বর্তমানকালে পৃথিবীর প্রায় সকল মুসলিমই আহলে সুন্নতের আদর্শে বিশ্বাসী। ইসলামী দ্বিতীয় শতাব্দীর পরে বাহাত্তরটি মহাভ্রান্ত বিদআতী দলের আবির্ভাব ঘটতে শুরু করে; তাদের মধ্যে কয়েকটি দলের স্থপতিরা পূর্বেই আগমন করেছিল, কিন্তু তাবেয়ীনগণের পরেই তাদের বইপত্র পকাশ পায় এবং তারা দলে দলে আবির্ভূত হয়ে আহলে সুন্নাতকে আক্রমণ করতে শুরু করে।
রাসুলুল্লাহ (দঃ)-ই আহলে সুন্নাতের বিশ্বাসসমূহ নিয়ে এসেছিলেন। এগুলোই সলফে সলেহীন তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা যা সাহাবায়ে কেরামগণ ঈমান সংক্রান্ত এ সকল শিক্ষা হুজুর পাক (সঃ) থেকে গ্রহণ করেছিলেন। আর তাবেয়ীন ও তাবে’ তাবেয়ীনগণ ক্রমানুসারে এগুলো তাদের থেকে গ্রহণ করে নেন।
এরপর তাঁদের উত্তরসূরীগণ এগুলো শিক্ষা করেন; ফলশ্রুতিতে এই শিক্ষাসমূহ আমাদের কাছে ‘তাওয়াতুর’ (জনশ্রুতি) ও বর্ণনার মাধ্যমে পৌঁছে গিয়েছে। এ শিক্ষাগুলো যুক্তি বা বিশ্লেষণ দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। মস্তিষ্ক এগুলোকে পরিবর্তিত করতে পারে না, বরং উপলব্ধি করতে সহায়তা করতে পারে।
সকল হাদীসের উলামাই আহলে সুন্নতের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। আমল সংক্রান্ত চারটি মযহাবের (যথা হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী) ইমামগণও এ আদর্শে বিশ্বাস করতেন। আর বিশ্বাস সংক্রান্ত এ মযহাবটির দুইজন ইমাম হযরত মাতুরিদী এবং হযরত আশআরী উভয়ই এই মযহাবের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। উভয় ইমামই এই মযহাবটি প্রচার করেছিলেন। তাঁরা সব সময়ই গোমরাহ ব্যক্তিবর্গ এবং প্রাচীন গ্রীক দর্শনের চোরাবালিতে আটকে পড়া বস্তুবাদীদের বিরুদ্ধে এই মযহাবের পক্ষাবলম্বন করে এটাকে সমর্থন যুগিয়েছেন।
যদিও তাঁরা সমসাময়িককালের ছিলেন, তবুও তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন স্থানের অধিবাসী হওয়ার কারণে এবং তাঁদের মোকাবিলাকৃত বিরুদ্ধবাদীদের চিন্তা-চেতনা ভিন্ন হওয়ার দরুন তাঁদের জওয়াব দেবার পদ্ধতিও পৃথক হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন মযহাবের অন্তর্গত ছিলেন। এই দুই জন মহান ইমামের পরবর্তীকালে আগত শত সহস্র উচ্চ শিক্ষিত উলামা ও আউলিয়া তাঁদের বইপত্র অধ্যয়ন করে সর্বসম্মতভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তাঁরা আহলে সুন্নতের অনুসারী ছিলেন।
সুন্নী উলামাগণ ’নাস্’সমূহের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং প্রয়োজন ব্যতিরেকে সেগুলোকে তাবিল তথা ভিন্নতর ব্যাখ্যা প্রদান কিংবা পরবর্তিত করেন নি। আর তাঁরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ধ্যান-ধারণা মাফিক কোনো পরিবর্তনও করেন নি। কিন্তু যারা গোমরাহ ও লা-মযহাবী দলগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল, তারা ইসলামের দুষমন গ্রীক দার্শনিক ও ভণ্ড বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষানুযায়ী ঈমান ও এবাদতের শিক্ষাসমূহের পরিবর্তন সাধন করতে কালবিলম্ব করে নি।
তথ্যসূত্র: নব্য ফিতনা “সালাফিয়্যা