পীর হাবিবুর রহমান

‘সিলেটের গান্ধী’ জননেতা কমরেড পীর হাবিবুর রহমান

আদর্শকে কেন্দ্র করে এদেশের গরীব দুঃখী, কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তাদের মধ্যে জননেতা কমরেড পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন অন্যতম।

পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি রাজনীতি করেছেন শোষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতার সংগ্রামে, পাকিস্তান আমলে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদ ও স্বৈরাচার বিরোধী প্রতিটি গণসংগ্রামে এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়েছেন এক অক্লান্ত যোদ্ধার ভূমিকায়।

এদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজ প্রগতির লড়াই সংগ্রামে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। এক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এই লক্ষ্যেই আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক, ভাষা সৈনিক, উপমহাদেশের বাম আন্দোলনের কিংবদন্তী পুরুষ, বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ‘সিলেটের গান্ধী’ খ্যাত গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মজলুম জননেতা কমরেড পীর হাবিবুর রহমান।

পাকিস্তানী শাসনামলে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা রাজনীতিবিদ জননেতা পীর হাবিবুর রহমান ১৯২৭ সালের ৯ অক্টোবর সিলেটের জালালপুর ইউনিয়নের বাগের খলা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।

পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন গরীব দুস্থ ও বিপদগ্রস্থ মানুষের আপনজন, বিপদের সহায়। মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ, ধর্মের নামে ভন্ডামী ও সাম্প্রদায়িকতাকে তিনি মনে প্রাণে ঘৃনা করতেন। মাতৃভূমি ও দেশের মানুষের কল্যান ও মঙ্গল সাধনাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনীতির পুরোধা পীর হাবিব তাঁর সারাটি জীবনই উৎসর্গ করেছেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্যে।

পাকিস্তানী অন্ধকার যুগে প্রগতিশীল রাজনীতির ইতিহাসে তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তী পুরুষ। পাকিস্তান সৃষ্টির পর এতদঞ্চলে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনীতির গোড়াপত্তনে এবং মুসলিম লীগ ও শাসক গোষ্ঠির ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপরিতে হাতে গুনা যেকজন যুবক অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঝান্ডা তুলে ধরেন পীর হাবিবুর রহমান তাদের অন্যতম।

প্রথম জীবনে বাংলার মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিমের প্রভাবে তিনি মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত থাকলেও পাকিস্তান সৃষ্টির পরেই তাঁর উপলব্দি হয় যে, মুসলিম লীগ ধনীদের পার্টি। পীর হবিবের উপলব্দি শুধু সঠিকই হয়নি, পরবর্তীতে তা একেবারে আক্ষরিক অর্থেও সত্য বলে প্রমাণিত হয়।

পাকিস্তানে সর্বাগ্রে বাংলা ভাষার পক্ষে প্রান্তিক জেলা সিলেটেই প্রথম কর্মসূচী নিয়ে জনসমক্ষে হাজির হয়েছিলেন পীর হাবিবুর রহমান। পাকিস্তান সৃষ্টির পরের বছর যখন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয় তখন পীর হাবিবুর রহমান এই চক্রান্ত প্রতিরোধে প্রস্তুতি শুরু করেন। সিলেটের মহিলা মুসলিম লীগের সভানেত্রী জোবেদা খাতুনের পরামর্শে মুসলিম সাহিত্য সংসদের পক্ষ থেকে প্রথম কর্মসূচী ঘোষণা করেন তিনি। ধার্মিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠলেও এবং মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র হয়েও পীর হাবিব ধর্মীয় গোড়ামীর উর্ধ্বে ছিলেন। শুধু অসাম্প্রদায়িকই ছিলেন না, আপাদমস্তক একজন সেকুল্যার মানুষ ছিলেণ তিনি।

১৯৫০ সালে কলকাতা, বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা শেষে সিলেটেও যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধার উপক্রম হয়, তখন পীর হাবিবুর রহমান দাঙ্গা প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহন করেন।
দাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রথম একক উদ্যোগ ছিল পীর হাবিবুর রহমানের। এ মহৎ কাজে তিনি সাথি হিসেবে পান সাবেক মন্ত্রী নুরুর রহমান, সাবেক আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আলী ও কৃষক নেতা মতছির আলী (কালা মিয়া) প্রমুখকে। সকলের সহযোগিতায় তিনি গঠন করেন ‘মুসলিম লীগ শান্তি মিশন’। পীর হাবিবের অনুপ্রেরণায় প্রায় ৭ শ’ স্বেচ্ছাসেবক শান্তি মিশনে সংগঠিত হয় এবং সিলেটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুখে ইতিহাস সৃষ্টি করে তারা।

দাঙ্গা বিরোধী মূল নেতা পীর হাবিবকে গ্রেফতারের জন্যে হন্যে হয়ে ওঠে পুলিশ। দাঙ্গা প্রতিরোধ হওয়ায় সিলেটে প্রগতিশীল শক্তির বিশাল অর্জন সাধিত হয়। এই অর্জনের মধ্য দিয়েই পরবর্তীকালে সিলেটে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

দাঙ্গা শেষ হওয়ার পর পাকিস্তানের সংখ্যালঘু মন্ত্রী ডা: মালিক ও ভারতের সংখ্যালঘু মন্ত্রী সি.সি বিশ্বাস (চারু চন্দ্র বিশ্বাস) যৌথভাবে দুই দেশের দাঙ্গাকবলিত অঞ্চল সফর করেন। সিলেটের দাঙ্গা প্রতিরোধ বিষয়ে দু’ মন্ত্রীর মন্তব্য ছিল ‘সিলেট ক্রিয়েটেড এন এক্সসেপশনাল রেকর্ড ইন ইন্দো-পাক সাব-কন্টিনেন্ট ইন রেজিস্টিং রায়ট’। (Sylhet created an exceptional record in Indo-Pak sub-continent in resisting riot)।

পীর হাবিবুর রহমানের বড় মাপের একটি অবদান ছিল পাকিস্তানের প্রথম অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা। কড়া বিধিনিষেধ ও দমননীতির মধ্যে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এক রোমঞ্চকর অথচ বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে শহর থেকে দুরে ফেঞ্চুগঞ্জে এক বিশেষ ছাত্র সম্মেলনে মোনাজাতের মাধ্যমে এই ছাত্র সংগঠনের জন্ম।

১৯৫২ সালে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পূর্বে ১৯৫১ সালের ১৬ নভেম্বর এই সংগঠনের জন্ম হয়। এই ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ায় পীর হাবিবুর রহমান শীর্ষ নেতৃত্বের পুরোধা ছিলেন। সংগঠনটির জন্ম রোধের জন্যে প্রশাসন ছাত্রনেতা তারা মিয়া আসাদ্দর আলী ও নাসির উদ্দিনের ওপর ব্যক্তিগত ভাবে ১৪৪ ধারা আরোপ ছাড়াও সিলেট সদর, গোলাপগঞ্জ ও কুলাউড়ায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

আই এ পড়ার সময় ১৯৪৮ সালেই পীর হাবিব সিলেটের নানকার আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। গণতান্ত্রিক যুবলীগের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এর সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তিনি এই সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

সিলেটে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রথম উদ্যোক্তা হলেন পীর হবিবুর রহমান। আওয়ামী মুসলীম লীগ নেতা এম এ বারীর নিকট এক চিঠি লিখে মাওলানা ভাসানী সিলেট আগমনের ইচ্ছে ব্যক্ত করলে এই চিঠিকে উপলক্ষ করে পীর হাবিব ভাসানীকে সিলেটে আসার আমন্ত্রণ জানান। এই পটভূমিতে পঞ্চাশের শুরুর দিকে মাওলানা ভাসানী সিলেট সফর করেন এবং এখান থেকেই সিলেটে আওয়ামী লীগের নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়। পরে ১৯৫৬ সালে অনুষ্ঠিত জেলা সম্মেলনে পীর হাবিবুর রহমান সিলেট জেলা আওয়ামী মুসলীম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতার প্রশ্নে ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠাকালে তিনি এর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন।

পীর হাবিবুর রহমান ১৯৪৮ সালে গোপন কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যপদ লাভের গৌরব অর্জন করেন। পার্টির সিদ্ধান্তক্রমে তিনি প্রকাশ্যে অন্য পার্টির মধ্যে থেকে কাজ করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৫ সাল পরযন্ত তিনি কমিউনিষ্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বগুড়া কৃষক সম্মেলনে পীর হবিব বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।

পীর হাবিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে সিলেট সদরের একটি আসনের উপনির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য এবং বাংলাদেশে ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আট দলের প্রার্থি হিসেবে সিলেট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।ত্যাগী, নির্লোভ, আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক এই মহৎ বক্তির জীবনের এক উল্লেখযোগ্য অংশ ১৯৫৪ সালে ও ৬০ এর দশকে কারাপ্রাচীরের অন্তরালে কেটেছে। দীর্ঘদিন তাঁকে আত্মগোপন করে থাকতে হয়েছে।

১৯৬৮ সালে প্রগতিশীল ও ব্যতিক্রমধর্মী সাংষ্কৃতিক সংগঠন উদীচীর জন্মলগ্নে পীর হাবিব নৈতিক সমর্থন দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা রনেশ দাশগুপ্ত ও গোলাম মোহাম্মদ ইদু প্রমুখের সঙ্গি ছিলেন। ঢাকায় তখন পীর হাবিব যে ঘরে থাকতেন সে ঘরই উদীচীর আঁতুর ঘর। একসময় উদীচীর অস্থিত্ব রক্ষার দু:সময়ে পীর হাবিব উদীচীকে ঢাকায় তাদের আবাসস্থলে রিহার্সেলের সুযোগ করে দেন।

১৯৬৭ সালে ন্যাপ বিভক্ত হলে পীর হাবিব ন্যাপ মোজফ্ফরের পক্ষে অবস্থান নেন। ১৯৬৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদক এবং পরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন।

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে পূর্ববঙ্গে এবং বাংলাদেশ আমলে যত গণতান্ত্রিক–প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে সবগুলোর সাথে যুক্ত ছিলেন পীর হাবিব। এইসব আন্দোলনে তিনি সংগঠক ও নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। জাতির দুঃসময়-দুর্দিনে বিরোধীদল সমূহের মধ্যে ঐক্য ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার পেছনে পীর হাবিবুর রহমান বিভিন্ন সময় পালন করেন বিশেষ ভূমিকা।

১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লেগে থেকে তিনি আইয়ুব বিরোধী মোর্চা গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। শেখ মুজিব জেলে অন্তরীন থাকায় বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর এক সময় তিনি আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার বাসায় জড়ো করতে সক্ষম হন এবং মানিক মিয়ার উপস্থিতিতে ১৯৬৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর জুলুম প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচী ঘোষণা করেন ও তা পালনে সক্ষম হন।

ন্যাপ-আওয়ামী লীগের এই জুলুম প্রতিরোধ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। অতঃপর অন্যান্য বিরোধী দলও মাঠে নামতে বাধ্য হয়। এরপরই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ঢাকায় আহমেদুল কবিরের বাসায় মিলিত হয়ে ডেমোক্রেটিক একশন গ্রুপ (ডাক) গঠন করেন।

একই সময় গোপন কমিউনিষ্ট পার্টির নেপথ্য ভূমিকায় ছাত্রদের ‘স্টুডেন্ট একশন কমিটি’ (সেক) গঠন তরান্বিত হয়। এরকম পটভূমিতে পীর হাবিবুর রহমানের লালিত ঐক্যের পথ ধরে ছাত্র-জনতার বৃহত্তর ঐক্য দেশে গণঅভুত্থানের জন্ম দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে শুরু হয় আমাদের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সংগঠনে পীর হাবিবুর রহমান অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সংগঠনের ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও সফলতার জন্যে তিনি সমুদয় মেধা, শ্রম, ও জ্ঞান নিয়োজিত করেন।

ভারতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে এবং শরনার্থিদের দুর্ভোগ লাঘবে তিনি দিনরাত নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। মেঘালয় বালাট শরানার্থী শিবিরে মহামারিরূপে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়লে শরনার্থিদের দুর্দশা ও অসহায়ত্ব দেখে তিনি অস্থির হয়ে ওঠেন। এসময় মূলত তাঁর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ভারত সরকার মহামারি প্রতিরোধে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহন করে। সদ্য স্বাধীন ও যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ও পুনর্বাসনেও তিনি দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে ন্যাপ মোজাফ্ফরের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পীর হাবিবুর রহমান। রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে ন্যাপ এর সাথে মতবিরোধ দেখা দিলে ১৯৮৬ সালে সৈয়দ আলতাফ হোসেন, পীর হাবিবুর রহমান ও চৌধুরী হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে গঠিত হয় এনএপি, এবং তাঁরা তিনজনই এনএপি’র আহবায়ক নির্বাচিত হন। গণতন্ত্রী পার্টির জন্মলগ্ন থেকে পীর হাবিব পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে ২০০১ সালে স্বাস্থগত কারণে গণতন্ত্রী পার্টি ও রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহন করেন এই প্রবাদপ্রতীম জননেতা।

২০০৪ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী ‘সিলেটের গান্ধী’ খ্যাত এই জননেতা তাঁর প্রিয় শহর সিলেটেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর নিজ এলাকা সিলেটের জালালপুর ইউনিয়নের ছায়াসুনিভির গ্রাম বাগের খলায় চীর নিদ্রায় শায়িত আছেন শোষন মুক্তির আন্দোলনের প্রবাদপ্রতীম জননেতা কমরেড পীর হাবিবুর রহমান।

শেয়ার করুন: