ক্যাটেগরীজ: স্বাস্থ্য

চায়না হোমিওপ্যাথি: ব্যবহার, উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

ইউরোপের চিকিৎসা পদ্ধতিতে চায়নার (পেরুভিয়ান গাছের ছাল বা বাকল) প্রচলন একাধারে যেমনি রোমাঞ্চকর তেমনি ভয়াবহ বিয়োগান্তক। প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ পাউন্ড এই ছাল/ বাকল ইউরোপে আমদানী করা হত। সে গুলো কুইনাইনে পরিণত করে টনিক ও ঔষধ হিসাবে ম্যালেরিয়া বা বিরামশীল কম্পজ্বরে ব্যবহৃত হত। এর যথেষ্ট প্রয়োগে রোগচাপা দেওয়ার ভয়াবহ কুফল দেখা গেল। রোগার্ত মানুষের যতটা সুফল হল তার চেয়ে কুফলই অনেক বেশি হল। দৈহিক ও মানসিক দুর্বলতা, রক্তহীনতা, পরিপাকশক্তির হানি, পাতলা পায়খানা, অনিদ্রা এবং পরিনতিতে অকাল মৃত্যু। চিকিৎসার দরুণ মানুষের এই ভয়াবহ পরিণতিতে হানেমান শিহরিত হলেন। তিনি এই ঔষধটির ক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য নিজের উপর পরীক্ষা করেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে গেল। হানেমানের মাহাত্ম্য এবং হোমিওপ্যাথদের স্বার্থ এই ঔষধের ইতিহাসের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা হয়ে গেল। এটিই ছিল প্রথম ঔষধ যা হানেমান স্বয়ং পরীক্ষা করেন। এটি বহুল ব্যবহারিত (পলিক্রেষ্ট) ঔষধ।

যে কোন কিছুই চাইনা সে হচ্ছে চায়না অর্থাৎ অসুখ হলে কাউকে বলেনা, ডাক্তারের কাছে যায়না, ঔষধ চাইনা। ক্ষুধা লাগলে বলেনা, খাবার চাইনা। শারীরিক বা মানসিক আঘাত পেলে কাউকে বলেনা, কষ্টের জন্য কোন সেবা যত্ন চাইনা। নিজে কাউকে ভালবাসতে চাইনা, এমনকী কারো ভালবাসা ও সহানুভূতি চাইনা।

সমজাতীয় ও বৈজ্ঞানিক নাম
১. সিঙ্কোনা অফিসিন্যালিস
২. সিঙ্কোনা ক্যালিসিয়া
৩. সিঙ্কোনা কডিফোলিয়া
৪. সিঙ্কোনা ফ্লাভা
৫. কুইন কুইনা
৬. জেসুইস বার্ক
৭. পেরুভিয়ান বার্ক

প্রুভার:- ১৭৯০ সালে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান তার নিজের উপর সিঙ্কোনা ছালের গুনাগুন পরিক্ষা করেন।

প্রাপ্তিস্থান:- ভারতের নিলগিরি, সিকিম, এবং পশ্চিম বঙ্গ। দক্ষিন ভারতের কাঠমুন্ডু আসামের খাসিয়া ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ে, মধ্য ভারতের সাতপুরা এলাকা ও বার্সার কেরাণ পাহাগে এই সকল গাছড়ার চাষ করা হইয়া থাকে।

উৎস:- সিঙ্কোনা গাছ এই ঔষধ প্রস্তুত হয়। গাছের শাখা-প্রশাখা, কান্ড এবং মূল হইতে সিঙ্কোনা ছাল সংগ্রহ করা হয়। এই গাছ বিভিন্ন জাতীয় হইতে পারে। এই গাছ গুলো ৬০ হইতে ৮০ ফুট উঁচু হয়ে থাকে।

ধাতু প্রকৃতি:- বলিষ্ট ব্যক্তি অথবা এক সময় সবল ছিল কিন্তু অতিরিক্ত রক্তস্রাব, মৈথুনের ফল, স্বপ্নদোষের ফলে, শুক্রক্ষরণ, প্রদরস্রাব, লালাস্রাব, মলস্রাব, পুঁজস্রাব, স্থন্যদান ইত্যাদির ফলে শরীর হইতে তরল পদার্থের ক্ষয় দুর্বল হয়ে পড়িয়াছে।

ক্রিয়াস্থান:- সমস্ত স্নায়ুমন্ডলীর উপর, লিভার, পাকাশয়, রক্তে বিশেষ ক্রিয়া।

মানসিক লক্ষণ:-

  • মেজাজ খিটখিটে, বিষর্ম, বিরক্ত এবং উদাসীন।
  • বাচিঁয়া থাকিতে ইচ্ছা নাই, কিন্তু আত্নহত্যার সহসের অভাব।
  • রাত্রিকালে শুয়ে শুয়ে আকাশ কুসুম চিন্তা।
  • সমান্য স্পর্শে অসহ্য, জোরে চাপে উপশম।
  • দুধ পানে পেটে গন্ডগোল।

চরিত্রগত লক্ষণ:-

  • শরীর হতে তরল পদার্থের ক্ষয়ের ফলে নানা রকম দুর্বলতা ও পীড়া।
  • নেশা জাতীয় দ্রব্যর গন্ধ সহ্য করিতে পারেনা।
  • ক্ষুদা থাকার সত্ত্বেও খাইতে পারেনা, সব খাদ্য তিতা মনে হয়।
  • মুখের চেহারা মলিন থাকবে, চোখ বসে যাবে, দেখতে মরার মত।
  • মৈথুনের ফলে বা স্বপ্নদোষের ফলে শুক্রপাত জনিত দুর্বলতা।
  • সবিরাম জ্বর-শীত, উত্তাপ এবং ঘর্ম-এই তিনটি লক্ষন স্পর্ষ্ট।
  • দিনের শেষে দিকে রোগলক্ষন বাড়ে।
  • নিদ্রায় তৃপ্তি নাই, রাত ৩ টার পর লক্ষণ বৃদ্ধি।

প্রয়োগক্ষেত্র:- রক্তহীনতা, রক্তস্রাব, দুর্বলতা, অজীর্ন, উদারাময়, কামলা বা ন্যাবা, শ্বাসযন্ত্রর পীড়া, শিরঃপীড়া, জ্বর, স্বপ্নদোষ, দন্ত ও চক্ষুর পীড়া, স্ত্রীরোগ।

রক্তস্রাব:- শরীলের যে কোন স্থান হইতে রক্তস্রাব হইলে। অতিরিক্ত পরিমানে রক্তস্রাব হয়ে রোগী ফ্যাকাশে ও দুর্বল হইয়া পড়ে। সমস্ত শরীল ঠান্ডা হইয়া যায়। গর্ভস্রাবের পর অতিরিক্ত রক্তস্রাব হইলে, রক্তস্রাবের পর মাথাঘোরা থাকিলে।

দন্তপীড়া:- দাঁত আলগা হইয়া যায়, মাড়ি ফুলিয়া উঠে। মনে হয় যেন দাঁত গুলো লম্ভা হয়ে গেছে। দাাঁত ও মাড়ি হইতে রক্তস্রাব, দাঁত কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত।

চক্ষুপীড়া:- অধীক পরিমানে কুইনাইন সেবনজনিত চক্ষুতে অন্ধকার দেখা। রক্ত, বীর্য প্রভৃতি শরীরের পদার্থের ক্ষয় হেতু অন্ধকার, দৃষ্টিহীনতা, রাতকানা, চক্ষুর পাতা যন্ত্রনাদায়ক বেদনা।

লক্ষণ বৃদ্ধি:- অল্প স্পর্শে, বায়ু প্রবাহে, একদিন অন্তর, তরল পদার্থের ক্ষয়ে, রাত্রে, আহারের ফলে, সামনের দিকে ঝুঁকলে।

লক্ষণ উপশম:- উপড় হিইলে, দাঁতে ও মাথায় জোরে চাপ দিলে, মুক্ত বাতাসে এবং উত্তপে।

ক্রিয়ানাশক:- ফেরাম মেট, আর্সেনিক, সালফার, বেলেডোনা, ন্যাকেসিস, মার্কসল, পালসেটিলা।

ক্রিয়াকাল:- ক্রিয়া – ২১ দিন।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ৪:০৬ অপরাহ্ণ ৪:০৬ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ