মুফতি আবদুল্লাহ আল মামুন প্রশ্ন: বর্তমানে বডি স্প্রে বা পারফিউমে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে স্প্রে ব্যবহার করে নামাজ আদায় করা যাবে কিনা? আর এই স্প্রে বিক্রি করা শরীয়তসম্মত কিনা?
উত্তর: প্রচলিত অধিকাংশ বডি স্প্রে ও সেন্ট শর্তসাপেক্ষে ব্যবহার ও বিক্রিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে না করাই উত্তম। এর বিপরীতে অ্যালকোহল মুক্ত আতর ব্যবহার করা উচিত। অ্যালকোহল মিশ্রিত পারফিউম নিয়ে কিছু কথা মনে রাখা জরুরি।
১) যেসব অ্যালকোহল খেজুর বা আঙ্গুর দ্বারা তৈরি করা হয়নি, সেগুলো মৌলিকভাবে নাপাক নয় এবং যতটুকু ব্যবহারে নেশার উদ্রেক হয় না ততটুকু ব্যবহার জায়েজ। এটি ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এবং ইমাম আবু ইউসুফের (রহ.) মতানুসারে। (ফাতহুল ক্বদীর-৮/১৬০, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৫/৪১২, আল বাহরুর রায়েক-৮/২১৭-২১৮, ফাতওয়ায়ে মাহমূদিয়া-২৭/২১৯; তানভীরুল আবসার মা'আত দুররিল মুখতার ২/২৫৯)
২) বর্তমানে সুগন্ধিযুক্ত বস্তু যেমন- সেন্ট, বডি স্প্রে ইত্যাদি অ্যালকোহল ছাড়া প্রস্তুত করা দুষ্কর। আর এখনকার সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সাধারণত আঙুর, খেজুর বা কিসমিস থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল থাকে না; বরং বিভিন্ন শস্যদানা, গাছপালার ছাল, ভাত, মধু, শস্য, যব, আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট, অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ইত্যাদি থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল মেশানো হয়। (এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৪৪- প্রকাশকাল ১৯৫০) আল্লামা তাকী উসমানীসহ বেশ কিছু আলেমদের স্বতন্ত্র গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, বর্তমানে বেশিরভাগ অ্যালকোহল আঙ্গুর ও খেজুর থেকে তৈরি হয় না। সুতরাং এসব বৈধ উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। তদ্রুপ ওষুধ তৈরিতে বা চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যাবে। অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৩৪৮,৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ূ ১/২৯৮)
৩) অনুরূপভাবে বিভিন্ন হালাল-হারাম উপাদান মিক্সড করে যদি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় রিফাইন করার মাধ্যমে এর মৌলিকত্ব নিঃশেষ করা হয় তাহলে সেটিকে হারাম বলা যাবে না। আর যদি সেসব হারাম বস্তুর মৌলিকত্ব বাকি থাকে, তাহলে এ বস্তু যাতে মিশ্রিত করা হবে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। (নিহায়াতুল মুহতাজ লির রামালি-৮/১২) কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৪৩৪৩) মদকে যখন লবণ বা অন্য কিছু দ্বারা সিরকা বানিয়ে ফেলা হয়, তখন তা আমাদের (হানাফীদের) কাছে হালাল হয়ে যায়। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪১০, মাজমাউল আনহুর-৪/২৫১, ফাতওয়ায়ে মাহমূদিয়া-২৭/২১৮) তাই এসব বডি স্প্রে ও সেন্ট নাপাক নয়। আর এগুলো নেশার উদ্রেকও হয় না। উপরন্তু এসব উপাদানগুলো রিফাইনও হয় এবং শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করে না। তাই এগুলো ব্যবহারে আপত্তি নেই। তবে এরূপ সেন্ট পরিত্যাগ করাই উত্তম। (জাদীদ ফিকহি মাসাইল: ১/৩৮; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম: ১/৩৪৮, ৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ূ : ১/২৯৮)
৪) আর যদি এতে নেশাজাতীয় উপাদান বিদ্যমান থাকে, তবুও আহনাফদের কাছে এটি খাওয়া ব্যতীত এর পানীয় কাপড়ে বা অন্য কোথাও ব্যবহার করা সরাসরি হারাম ও নাপাক নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে বডি স্প্রে ব্যবহার করলেও সালাত আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ইমাম আবূ হানীফার (রহ.) মতে পানি না পেলে নাবীয (এক প্রকার মাদকতাময় পানীয়) দিয়ে ওজু করা যাবে। এদিক বিবেচনা করলেও সেন্ট ও বডি স্প্রের ব্যবহার সম্পূর্ণ হারাম বলা যায় না। একইসঙ্গে এই বিধান হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন হ্যাক্সিসল ইত্যাদি। যদিও এতে শতকরা ৭০ ভাগ অ্যালকোহল থাকে। তবুও এটি হাতে দিয়ে নামাজ আদায়ে সমস্যা নেই।
এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ৬ মার্চ ২০২১, ৭:০৩ অপরাহ্ণ ৭:০৩ অপরাহ্ণ
মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…
ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…