বিনোদন

'লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ' আসলে কি?

“লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ” আসলে কি? বছরের যে ক’টি রাত ফজিলতপূর্ণ এর একটি লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ। রাসুল (সা.) জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজিজা বা অলৌকিক ঘটনাগুলোর একটি মিরাজ। ২৬ রজব দিবাগত রাতে রাসুল (সা.) আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন। ঐতিহাসিক সেই সফরকেই মিরাজ বলা হয়। মিরাজ আরবি শব্দ, শাব্দিক অর্থ ঊর্ধ্বগমন, আকাশপথে ভ্রমণ করা, সোপান ইত্যাদি।

রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে উম্মে হানির ঘর থেকে জাগ্রত অবস্থায় বোরাকে করে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা, সেখান থেকে প্র্রথম আকাশ হয়ে সপ্তাকাশ, সেখান থেকে বায়তুল মামুর, সিদরাতুল মুনতাহা, আরশে আজিম পৌঁছে আল্লাহর দিদার লাভ করা—এসবই মেরাজের অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি তার বান্দাকে তার নির্দশনগুলো দেখানোর জন্য রাতকালে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ পবিত্র, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (বনি ইসরাইল, আয়াত-১)।

ঐতিহাসিকদের মতে, ৫২ বছর বয়সে হিজরতের এক বছর আগে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মিরাজের ঘটনা ঘটে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, মিরাজের রাতে রাসুল (সা.) উম্মে হানি বিনতে আবু তালিবের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। হঠাত্ হজরত জিবরাইল (আ.) এসে রাসুলকে মসজিদুল হারামে নিয়ে যান। যেখানে তার বুক বিদীর্ণ করে জমজম কূপের পানি দিয়ে সিনা ধুয়ে পরিষ্কার করে শক্তিশালী করেন। এ ঘটনাকে ‘শাক্কুস সদর’ বলে। নবীর (সা.) জীবনে অন্তত তিনবার এমনটা হয়েছে। তারপর সেখান থেকে তিনি ‘বোরাক’ নামক এক ঐশী বাহনে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে এসে সব নবীর ইমাম হয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্বে গমন করতে থাকেন। একের পর এক আসমান অতিক্রম করতে থাকেন।

রাস্তায় মুসাসহ (আ.) বেশ কয়েকজন নবী-রাসুলের সঙ্গে সাক্ষাত্ হয়। সপ্তম আসমানের পর হজরত রাসুলুল্লাহকে (সা.) বায়তুল মামুর পরিদর্শন করানো হয়। বায়তুল মামুরে দৈনিক ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। ফেরেশতাদের সংখ্যা এত বেশি যে, যারা একবার এই বায়তুল মামুরে প্রবেশ করেন কেয়ামত পর্যন্ত তাদের সেখানে প্রবেশ করার পালা আসে না। সেখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেন। এরপর হজরত রাসুলুল্লাহের (সা.) সামনে একপাত্র মদ, একপাত্র দুধ এবং একপাত্র মধু আনা হয়। তিনি এর মধ্য থেকে দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন।

তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, এটা ফিত্রত বা স্বভাব ধর্মের নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত এই স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন। বায়তুল মামুরে হজরত জিবরাইলকে (আ.) রেখে তিনি ‘রফরফ’ নামক আরেকটি আসমানি বাহনে চড়ে মহান আল্লাহর দরবারে হাজির হন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, মেরাজের রাতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালার এতটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন যে, দুজনের মধ্যখানে মাত্র এক ধনুক পরিমাণ ব্যবধান ছিল।

এখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। পরবর্তী সময়ে বারবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতে মোহাম্মদীর ওপর ফরজ করেন, যা ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম রুকন বা ভিত্তি। যেহেতু মিরাজের রাতে নামাজের নির্দেশ হয়েছে, এজন্য নামাজকে ‘মিরাজুল মুমিনিন’ মুমিনের মিরাজ বলা হয়।

রাসুলের (সা.) মিরাজ সম্পর্কে অকাট্য প্রমাণাদি রয়েছে। এজন্য কোনো মুসলমানের পক্ষে তা অস্বীকার করা কিংবা এ ব্যাপারে সংশয় দেখানো উচিত নয়। এমনকি একজন খাঁটি মুসলমানের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মেরাজের সত্যতা প্রমাণের অপেক্ষা না করে এ বিষয়ে মনেপ্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানি কর্তব্য। রাসুল (সা.)-এর মিরাজে যাওয়ার কথা একজন অবিশ্বাসীর মুখে শুনে হজরত আবু বকর (রা.) তত্ক্ষণাত্ বিশ্বাস করেছিলেন বলেই হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ‘সিদ্দিক’ উপাধি দিয়েছিলেন।

মিরাজ নবী জীবনের নিছক একটি ঘটনাই নয়, এর তাত্পর্য ও শিক্ষা অনেক বিস্তৃত। যখন নবী করিম (সা.) জাগতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থার মুখোমুখি হন, তার প্রিয়তমা স্ত্রী উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (রা.) ও বিপদে আশ্রয়দাতা চাচা আবু তালিবের আকস্মিক ইন্তেকাল হয়, অন্যদিকে কাফেরদের অত্যাচার তাকে বিপর্যস্ত করে তোলে, তখন মিরাজের মাধ্যমে আল্লাহতাআলা তার বন্ধুকে নিজের সান্নিধ্যে ডেকে এনে সান্ত্বনা দিয়ে সমাজ সংস্কারের একটি পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন। ইসলামের প্রধানতম স্তম্ভ নামাজ ফরজ করা হয় ওই রাতে। তাছাড়া ওই রাতে রাসুলকে (সা.) স্বচক্ষে এমন কিছু বিষয় দেখানো হয়, যা একটি আদর্শিক সমাজ গঠনে পরবর্তী জীবনে কাজে লাগে।

ওই রাতে নবীদের ইমাম বানিয়ে আল্লাহতায়ালা মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর (সা.) শ্রেষ্ঠত্বের বাস্তব উদাহরণ স্থাপন করেন। শুধু নবীকেই শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়নি, এই নবীর উম্মতদেরও শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয় শবে মিরাজে। এজন্য মিরাজের শিক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোই একজন আদর্শ উম্মত তথা মুসলমানের কাজ।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৪ এপ্রিল ২০১৮, ৩:২০ পূর্বাহ্ণ ৩:২০ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ