ইসলাম

লাইলাতুল কদর: একটি মহিমাময় রজনী

ইসলামের প্রথম নবী ও রাসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে প্রসিদ্ধ নবী ও রাসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত কোনো নবী ও রাসূল বা তাদের উম্মতগণ মহামান্বিত ও ফজিলতপূর্ণ রজনী ‘লাইলাতুল কদর’ প্রাপ্ত হননি।

রমজানের ২৭তম রাত শবেকদরের অন্যতম সম্ভাব্য ক্ষণ। যদিও লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট কোনও তারিখ নেই। তবে রাসুলুল্লাহর (সা.) বিভিন্ন হাদিস থেকে এ রাতটির মর্যাদার কথা বোঝা যায়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শবেকদরকে রমজানের ৯ রাত বাকি থাকতে অথবা সাত রাত বাকি থাকতে অথবা পাঁচ রাত বাকি থাকতে অথবা তিন রাত বাকি থাকতে অথবা রমজানের শেষ রাতে (অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ রমজানের রাতে) তালাশ করবে। (তিরমিজি)।

২১ রমজান থেকে নিয়ে ২৯ রমজান পর্যন্ত বেজোড় যে কোন রাতেই শবে কদর হতে পারে। শবেকদরের সম্ভাব্য রাতগুলোর মধ্যে আর মাত্র দু’টি রাত আমাদের হাতে রয়েছে। আজ রমজানের ২৭তম রাতে হাজার বছরের চেয়ে দামি সৌভাগ্যের সময়টুকু অর্জনে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।

আল্লাহতায়ালা শবেকদরকে এত মর্যাদাবান করেছেন যে, এর সঠিক মূল্যায়ন মানুষের বোধ-বুদ্ধির বাইরে। আল্লাহ নিজেই এ বিষয়ে রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করছেন,‘আপনি কি জানেন, লাইলাতুল কদর কী?’ আল্লাহতায়ালা কোরআন নাযিলের মাধ্যমে এ রাতে মানবজাতিকে এক অভাবনীয় উপহার দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সে ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে- ‘নিঃসন্দেহে আমি মহিমান্বিত রজনীতে কোরআন অবতীর্ণ করেছি। আপনার কি জানা আছে, মহিমান্বিত রজনী কী? মহিমান্বিত রজনী হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা এবং রুহুল কুদুস (জিবরাঈল আ.) তার প্রতিপালকের নির্দেশে মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে অবতরণ করেন। শান্তিই শান্তি সেই রাতে, ফজর হওয়া পর্যন্ত তা থাকে।’ (সুরা কদর)

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে ‘লাইলাতুল কদর’ লাভ করার জন্য রমজানের শেষ দশরাত জাগ্রত থেকে ইবাদতে কাটিয়েছেন এবং উম্মতে মুহাম্মাদীকেও সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করার নির্দেশ দিয়েছেন।

রাসূল (সা.) বলেন, শবে কদরকে নির্দিষ্ট না করার কারণ হচ্ছে যাতে বান্দা কেবল একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম করেই যেন ক্ষান্ত না হয়ে যায় এবং সেই রাতের ফজিলতের উপর নির্ভর করে অন্য রাতের ইবাদত ত্যাগ করে না বসে। তাই বান্দার উচিত শেষ দশকের কোন রাতকেই কম গুরুত্ব না দেয়া এবং পুরোটাই ইবাদাতের মাধ্যমে শবে কদর অন্বেষণ করা।

এ রাতের মূল আমল হল নিজের গুনাহখাতা আল্লাহ থেকে মাফ করিয়ে নেয়া। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলে দিন যদি আমি জানতে পারি যে, শবেকদর কোন রাতে হবে, তাতে আমি কী বলব? রাসুল (সা.) বললেন- তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আননি।’ (অর্থ) হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস। অতএব, আমাকে ক্ষমা করো। (তিরমিজি)।

রাসুলের (সা.) বিভিন্ন হাদিস থেকে আমরা এটিই বুঝি যে, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি মুহূর্তই অত্যন্ত দামি। তাই দুনিয়াবি ব্যস্ততা ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থেকে এ সময়ে বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়ায় মগ্ন থাকতে হবে। সময়কে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন কদরের সৌভাগ্য হাতছাড়া না হয়ে যায়। মূলত কদর হল প্রভুর প্রেমে মত্ত হওয়ার অন্তরঙ্গ এক মুহূর্ত।

কদরের তালাশে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগীতে মনোনিবেশ করতে হবে। এ রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ, উমরী কাজা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সাদকা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার, দুয়া-দুরূদসহ ইত্যাদি নফল আমলের প্রতি মনযোগী হওয়া একান্ত জরুরি।

মূল্যবান এ ক্ষণটির তালাশে আমাদের রাতভর নিমগ্ন হতে হবে। এক মুহূর্তের অবহেলায়ও যেন হারিয়ে না যায় কদরের এ মহান নিয়ামত।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১ জুন ২০১৯, ৮:৪০ অপরাহ্ণ ৮:৪০ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ