ক্যাটেগরীজ: ইসলাম

টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে স্বর্ণের নেসাব মানদণ্ড হবে নাকি রূপার?

মুফতি মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম: ইসলামী শরীয়তে স্বর্ণ ও রুপা প্রত্যেকটির নেসাব সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। একটি অপরটির অনুগামী নয়। একটিকে মূল ধরে অন্যটি নির্ধারণ করা হয়নি। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হাদিসে স্বর্ণের নেসাবের আলোচনা খুবই কম এসেছে। রুপার নেসাবের কথাই অধিক এসেছে। অধিক আলোচিত হয়েছে। হাদিসের বার বার যে নেসাবের কথা এসেছে, সেটা ছিল রুপার নেসাব; সোনার নেসাব নয়। যদিও সাহাবা ও তাবেয়ীগণ থেকে স্বর্ণের নেসাব প্রমাণিত; তদুপরি তৎকালীন ব্যাপাক আমল ছিল রুপার নেসাব অনুযায়ী। এ কারণেই শাইখ আহমদ খলিল বলেন,

أنّ الأصل في النصاب هو الفضة ويقدر به الذهب والمتاع لأنّ النبي - صلى الله عليه وسلم - لما سرق الرجل المجن قدره بالفضة ولم يقدره بالذهب.

‘নেসাবের ক্ষেত্রে রুপার নেসাব-ই মূল। রুপার মাধ্যমেই স্বর্ণ ও অন্যান্য সম্পদের নেসাব নির্ধারণ করা হবে। কারণ নবিজি সা. ঢাল চুরির বেলায় চোরের হাত কাটার ক্ষেত্রে রুপার নেসাবই নির্ধারণ করেছিলেন, স্বর্ণের নেসাব নির্ধারণ করেননি।’ [শরহু যাদিল মুসতাকনা ৬/২০১]

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু উমার রা. থেকে বর্ণিত, যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঢাল চুরির বেলায় হাত কেটেছেন, যার মূল্য ছিল তিন দিরহাম। [বুখারী ৬৭৯৫, মুসলিম ১৬৮৬]

মুফতিয়ে আযম রফি উসমানি রহ. বলেন, ‘এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, নবিজি সা. প্রথমে স্বর্ণের নেসাব নির্ধারণ করেছেন, এরপর মূল্যের দিকে লক্ষ রেখে রুপার নেসাব ঘোষণা করেছেন। অতচ বাস্তবে বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ এর উল্টো। প্রথমে রুপার নেসাবই ঘোষণা করা হয়েছে। এর উপরই সাহাবায়ে কেরামের আমল ছিল। অতএব এ ধারণা সঠিক নয় যে, আমরা স্বর্ণের নেসাবকে মূল সাব্যস্ত করে রুপার নেসাবকে এর অনুগামী করে দেবো। যেখানে নস (স্পষ্ট ভাষ্য) রয়েছে, সেখানে এ ধরণের ইজতিহাদের কোনো সুযোগ নেই। [নাওয়াদিরুল ফিকহ ১/৩৫৪]

অনেকের দাবি বর্তমানে যেহুতু সোনা ও রুপার মূল্যমানের মাঝে বিশাল তফাৎ দেখা যায়, তাই যাকাতের ক্ষেত্রে রুপার নেসাবকে সম্পূর্ণ উঠিয়ে দিয়ে স্বর্ণের নেসাবকেই মানদণ্ড বানানো উচিৎ। আমরা তাদের জবাবে বলবো, সোনা ও রুপার মূল্যমানের মাঝে বর্তমানে যে তফাৎ দেখা যায়, তা নবি যুগ থেকে নিয়ে পরবর্তী যুগেও বিদ্যমান ছিল। নবি যুগে একটি স্বর্ণমুদ্রা সমান দশটি রৌপ্যমুদ্রা ছিল। বনু উমাইয়ার শেষার্ধে এই অনুপাত বৃদ্ধি হয়ে ১২ রৌপ্যমুদ্রাই পৌঁছে। আব্বাসী শাসনামলে সেটি ১৫ রৌপ্যমুদ্রাই এবং ফাতেমি আমলে তা ৩৫ রৌপ্যমুদ্রাই গিয়ে পৌঁছে। অর্থাৎ একটি স্বর্ণমুদ্রা সমান ৩৫ টি রৌপ্যমুদ্রা ছিল।

মূল্যমানের এতো বিশাল তফাৎ হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন ফুকাহায়ে কেরাম স্বর্ণের নেসাবকে মূল ধরে রুপার নেসাবকে এর অনুগামী করেননি। বা রুপার নেসাব তারা উঠিয়ে দেননি। এটা সম্ভবও না। কারণ রুপার নেসাব স্পষ্টভাবে নবিজি সা. কর্তৃক ঘোষিত নেসাব। এর উপর উম্মতের ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

এখন মূল আলোচনায় আসি, টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে স্বর্ণের নেসাব মানদণ্ড হবে নাকি রুপার?

এ ব্যাপারে আসল কথা হলো, আমাদের সমাজে প্রচলিত কাগুজে মুদ্রা বা টাকা-পয়সা যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এবং কারো দ্বিমতও নেই।

তবে কাগুজে মুদ্রা বা টাকা-পয়সার নেসাব কোনটি হবে—এ ব্যাপারে সমকালীন ফকীহগণ মতভেদ করেছেন।

প্রথম মাযহাবঃ টাকা-পয়সা বা কাগুজে মুদ্রার
ক্ষেত্রে স্বর্ণের নেসাব প্রযোজ্য হবে। এ মতের প্রবক্তা হলেন ড. হামিদুল্লাহ, মুফতি শুআইব মিফতাহি, শাইখ আবু জাহরা, শাইখ ওয়াহবা জুহাইলি, ড. ইউসুফ আল কারজাবি, শাইখুল আজহার জাদুল-হক জাদ, ড. আলি জুমআ, শাইখ খাল্লাপ প্রমুখ স্কলারগণ। [ফাতাওয়া দারুল উলুম যাকারিয়া ৩/১১৪-১১৫]

তাদের বক্তব্য হলো, প্রচলিত টাকা-পয়সা বা কাগুজে মুদ্রায় সাধারণত ফকিহগণ রুপার নেসাব প্রযোজ্য হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্বর্ণ ও রুপার মূল্যমানে বিশাল তফাৎ তৈরী হয়েছে। স্বর্ণের মূল্যের বিপরীতে রুপার মূল্য গণনাযোগ্যই নয়। আর শরীয়তের প্রত্যাশা হলো, যাকাত আবশ্যক হবে সম্পদশালীর উপর। এখন যদি রুপাকে এক্ষেত্রে নেসাবের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয় তাহলে এমন বহু লোকের উপর যাকাত, কুরবানী আবশ্যক হয়ে যাবে, যারা অল্প-স্বল্প টাকা-পয়সা ও সোনা-রুপার মালিক। তারা নিজেরাই অভাবী। প্রয়োজন পূরণের সামর্থ রাখে না। এসব বিবেচনায় যাকাত আবশ্যক হওয়ার জন্য সোনার নেসাবকেই মানদণ্ড বানানো উচিৎ। [আল ফিকহুল হানাফী ও আদিল্লাতুহ ১/৩৫২, ফাতাওয়া দারুল উলুম যাকারিয়া ৩/১১৪-১১৫]

দ্বিতীয় মাযহাবঃ টাকা-পয়সা বা কাগুজে মুদ্রার সুনির্দিষ্ট নেসাব নেই। স্বর্ণ-রুপার মধ্য থেকে যে নেসাব আগে পূর্ণ হবে, সেটিই ধর্তব্য হবে। যেমন কারো কাছে এ পরিমাণ টাকা-পয়সা আছে যে, স্বর্ণের নেসাব ধরলে যাকাত আসে না, কিন্তু রুপার নেসাব ধরলে যাকাত আসে, তাহলে সেক্ষেত্রে রুপার নেসাবই ধর্তব্য হবে। আর এর বিপরীত হলে স্বর্ণের নেসাব ধর্তব্য হবে। এ মতের স্বপক্ষে যারা ফতোয়া দিয়েছেন—

ক. সৌদির জাতীয় ফতোয়া বোর্ড ‘আল লাজনাতুদ দাইমা লিল-বুহুসিল ইসলামিয়্যাহ ওয়াল ইফতা’ তাদের একাধিক ফতোয়ায় এরূপ সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। একটি ফতোয়ায় এসেছে,

كم نصاب الزكاة بالنسبة البانكنوت التركية وتقدير البانكنوت بالذهب أولى أم بالفضة؟

...فإذا اجتمع لدى المسلم من العملة المذكورة التركية ما يعادل نصاب الذهب أو الفضة وحال عليها الحول وجبت فيه الزكاة، وأخرج منه ربع العشر، وفي حالة بلوغ الموجود من العملة المذكورة كلا من نصاب الذهب أو نصاب الفضة فتقدر بالأحظ للفقراء منهما لكونه أنفع لهم أما إذا بلغت مقدار نصاب أحدهما دون الآخر فيجب تقديرها بما بلغته منهما.

প্রশ্ন: তুর্কি কাগুজে মুদ্রায় যাকাতের নেসাব কত? কাগুজে মুদ্রায় যাকাতের নেসাব সোনা দিয়ে ধরা উত্তম হবে নাকি রুপা দিয়ে ধরা উত্তম হবে?

উত্তর: কোনো মুসলিমের নিকট যদি এ পরিমাণ তুর্কি কাগুজে মুদ্রা থাকে, যা স্বর্ণ বা রুপার নেসাবে পৌঁছে যায়। এবং এর উপর ‘হাওল’ তথা এক বছর অতিবাহিত হয়, তাহলে সে মুদ্রার ওপর যাকাত আবশ্যক হবে। যদি তা উভয়টির নেসাবেই উপনীত হয়, তখন যে নেসাব বিবেচনা করলে দরিদ্রদের বেশি উপকার হবে, সেটির হিসাবে যাকাত আদায় করে দেবে। তদ্রূপ যদি কোনো একটির হিসাবে নেসাব হয়, আর অন্যটির হিসাবে নেসাব অপূর্ণ থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে যেটি ধরলে নেসাব হয়, সেটিই ধরা আবশ্যক। আল লাজনাতুদ দাইমা ৯/২৫৪ (শামেলা)

খ. সৌদির হাইআতু কিবারিল উলামা তাদের ১০ তম শরিয়া রেজুলেশনে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘কাগুজে মুদ্রায় যাকাত আবশ্যক হয় সোনা অথবা রুপার যেকোনো একটি নেসাবের মূল্যমানে পৌছলে। অথবা কাগুজে মুদ্রা যখন অন্যান্য মুদ্রা (সোনা-রুপা), মালিকানাধীন ব্যবসার পণ্যের সাথে মিলে নেসাব পূর্ণ হবে, তখনও যাকাত আবশ্যক হবে’। (হাইআতু কিবারিল উলামা, রেজুলেশন সমগ্র ৩৩ পৃ., আবহাসু হাইআতি কিবারিল উলামা ১/৯৩ (শামেলা)

গ. বিখ্যাত ফতোয়া ওয়েবসাইট ‘ইসলাম ওয়েব নেটে’ এসেছে—

فاعلم ابتداء أن الزكاة لا تجب في النقود عموما إلا إذا توافر فيها شرطان: أولهما:أن تبلغ قيمتها ما يساوي نصاب الذهب، وهو 85 جراما، أو نصاب الفضة وهو 595 جراما.

‘সাধারণত নগদ ক্যাশে যাকাত আবশ্যিক হওয়ার
জন্য দুটি শর্ত থাকতে হবে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো স্বর্ণের নেসাবে উপনীত হওয়া, যার পরিমাণ ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ। অথবা রুপার নেসাবে উপনীত হওয়া, যার পরিমাণ ৫৯৫ গ্রাম রুপা।

দ্বিতীয় শর্ত, চান্দ্রবর্ষ অনুযায়ী এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া। [ইসলাম ওয়েব, ফতোয়া নং 217846]

ঘ. শাইখ ইবনে বায রহিমাহুল্লাহও অনুরূপ ফতোয়া প্রদান করেছেন।

وقال الشيخ عبد العزيز بن باز رحمه الله : " الزكاة تجب فيها – أي : الأوراق النقدية - إذا بلغت قيمتها أدنى النصابين من ذهب أو فضة ، أو كانت تكمل النصاب مع غيرها من الأثمان والعروض المعدة للتجارة إذا كانت مملوكة لأهلها وقت وجوبها " انتهى من " مجموع فتاوى ابن باز " (14/125) .

[মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বায ১৪/১২৫]

তাছাড়া প্রচলিত কাগুজে মুদ্রা মূলত প্রাচীন যুগের ফুলুসের মতো। ফুলুস হলো স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা ছাড়া অন্যান্য ধাতব পদার্থের তৈরী মুদ্রা। শাইখ আল্লামা সিরাজুদ্দিন হানাফি রহ.(৫৬৯ হি.) ফুলুসের মুদ্রা সম্পর্কে বলেন,

الزَّكاة في الفلوس الرائجة كما في دراهمنا اليوم لا تحب ما لم يكن قيمتها مئتي درهم من الدراهم التي تَغْلِبُ النقرة فيها على الغش، أو عشرين مثقالاً من الذهب، ولا يُشترط فيها التجارة-

‘প্রচলিত ফুলুস দিরহামের মতই। তাতে যাকাত আবশ্যক হবে, যদি তা রোপার নেসাবে পৌঁছে....। অথবা স্বর্ণের নেসাবে পৌঁছে। অর্থাৎ সোনা-রুপা যেকোনো একটির নেসাবে পৌঁছলে এর যাকাত দিতে হবে। অন্যথায় দিতে হবে না।’ (ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া ১৩৭ পৃ.)

তৃতীয় মাযহাবঃ টাকা-পয়সা বা প্রচলিত কাগুজে মুদ্রায় রুপার নেসাব প্রযোজ্য হবে। এটা সমকালীন অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরামের মত। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে আয়োজিত ইন্ডিয়ার ইসলামি ফিকহ একাডেমি তাদের দ্বিতীয় ফিকাহ সেমিনারের রেজুলেশনে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এতে ভারত ও এর বাইরে থেকে ৭০ জন ফকিহ ও মুফতি সাহেবগণ একত্রিত হয়েছিলেন। (যাকাতের আধুনিক প্রয়োগ ১১২ পৃ.)

এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ ফাতোয়াও এটিই।

জাদিদ ফিকহি মাবাহিসে এসেছে,‘‘নোটের উপর যাকাত আবশ্যক হওয়ার ক্ষেত্রে রুপার নেসাবকে মানদণ্ড ধরা হবে। এবং কারো কাছে যখন সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য টাকা-পয়সা, নোট থাকবে, তাঁর উপর যাকাত আবশ্যক হবে’’। [জাদিদ ফিকহি মাবাহিস ২/ ১৫২]

প্রাচীন যুগে দিরহামের পাশাপাশি ‘আতারিফ’ (العطارف) নামে এক ধরণের মুদ্রা সমাজে প্রচলিত ছিল। এর অধিকাংশ উপাদান ছিল তামা-পিতল, সাথে সামান্য পরিমাণ রুপা থাকত। বর্তমান সময়ের টাকা-পয়সার মতো আতারিফও সামাজিক মুদ্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর বিখ্যাত ফকিহ ইমাম আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনে ফজল রহ.(৩৮১ হি.) উক্ত ‘আতারিফ’ মুদ্রায় রুপার নেসাব অনুযায়ী যাকাত আবশ্যক হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ২০০ আতারিফ মুদ্রায় ৫ আতারিফ যাকাত আবশ্যক হতো। পরবর্তী সময়ে ইমাম শামসুল আইম্মা হালওয়ানি (৪৪৮ হি.), ইমাম শামসুল আইম্মা সারাখসি রহ. (৪৮৩ হি.) প্রমুখ হানাফী বিখ্যাত স্কলারগণও উক্ত মতামত গ্রহণ করেছেন। [আল মুহিতুল বুরহানী ২/২৪৩]

পাকিস্তানের বিখ্যাত ফতোয়া ওয়েবসাইট—জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া বিন্নুরি টাউনেও রুপার নেসাব ধরার কথা এসেছে—

اگر کسی کے پاس صرف نقد رقم ہو، اس کے علاوہ نہ اس کے پاس سونا ہو، نہ چاندی اور نہ ہی مالِ تجارت تو اس صورت میں اگر اس کے پاس ساڑھے باون تولہ چاندی کے قیمت کے برابر نقد رقم ہو تو سال مکمل ہونے کے بعد اس کی زکوۃ کی ادا ئیگی فرض ہوگی، بشرطیکہ وہ رقم اس کی حاجتِ اصلیہ (ماہانہ ضروری اخراجات اور واجب الادا اخراجات) سے بھی زائد ہو۔

[ফতোয়া নম্বর 144307100230]

বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া ওয়েবসাইটেও রুপার নেসাব ধরার কথা এসেছে—

چاندی ارو سونا دونوں کا نصاب منصوص اور مقرر ہے، یعنی اگر کسی کے پاس صرف سونا یا صرف چاندی ہو دیگرا موال زکاة بالکل نہ ہوں تو چاندی اور سونے کے نصاب کا اعتبار کیا جائے گا اور اگر سونے یا چاندی کے علاوہ کرنسی یا مال تجارت ہو تو فقہاء نے یہ ضابطہ تحریر کیا ہے کہ دراہم یا دنانیر کسی سے بھی قیمت مقرر کی جاسکتی ہے الا یہ کہ ایک سے نصاب کو پہنچتا ہو دوسرے سے نہیں تو پہلے سے نصاب مقرر کرنا متعین ہوجاتا ہے۔

ثم في تقویم عروض التجارة التخییر یقوم بأیہما شاء من الدراہم والدنانیر إلا إذا کانت لا تبلغ بأحدہما نصابًا فحینئذٍ تعین التقویم بما یبلغ نصابا ہکذا في البحر الرائق․ (الہندیة: ۱۷۹/۱)

اس لیے اگر کسی کے پاس اموالِ زکاة ہوں اور سونے کی قیمت کے اعتبار سے نصاب کو نہ پہنچتے ہوں؛ لیکن چاندی کی قیمت کے اعتبار سے آدمی صاحب نصاب ہوجاتا ہو تو زکاة وقربانی کے نصاب میں اسی کا اعتبار ہوگا، اس کے علاوہ جو اشکال ہے کہ آپ صلی اللہ علیہ وسلم کے دور میں دونوں نصابوں کی مالیت تقریباً برابر تھی اب نہیں رہی اس لحاظ سے اب نصاب سونے سے مقرر ہونا چاہیے تو اس تعلق سے عرض یہ ہے کہ یہ محض حکمت ہے علت نہیں جو موجب ہو اور جب چاندی کا نصاب منجانب شرع مقرر ہے تو اس کو ختم نہیں کیا جاسکتا۔

(ফতোয়া নম্বর 150760)

উপরিউক্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাযহাব কার্যত প্রায় অভিন্ন। কারণ সোনা-রুপার নেসাবের মাঝে বর্তমানে রুপার নেসাব সর্বাগ্রে পূরণ হয়। অতএব শেষোক্ত দুটি মতের সারকথা দাঁড়ায়-টাকা-পয়সা বা কাগুজে মুদ্রায় রুপার নেসাব প্রযোজ্য হবে।

উল্লিখিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়, স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা ছাড়া অন্যান্য সামাজিক মুদ্রায় রুপার নেসাব প্রযোজ্য হবে, অথবা যে নেসাবে আগে যাকাত আসত, সেটি ধর্তব্য হবে। বর্তমানে সেটি সাধারণত রুপার নেসাবে হয়ে থাকে। এ মতের পক্ষে প্রাচীন সামাজিক মুদ্রার ব্যাপারে তৎকালীন ফকিহগণের ফতোয়া একটি সুদৃঢ় সমর্থন জানায়।

তাছাড়া এতে আরও দুটি স্বার্থ রক্ষা হয়:
এক. দরিদ্রদের স্বার্থ। দুই, ইবাদতের মাঝে সতর্কতা অবলম্বন করা। উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেও রুপার নেসাব কার্যকর হওয়াই অধিক যৌক্তিক বলে প্রমাণিত হয়।

অতএব বর্তমানেও কাগুজে মুদ্রায় রুপার নেসাব প্রযোজ্য হওয়া অথবা যে নেসাবে আগে যাকাত আসবে, সেটি ধর্তব্য হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে শরিয়ার অধিক নিকটবর্তী। যুগ যুগ ধরে এভাবেই ফতোয়া চলে আসছে।(যাকাতের আধুনিক প্রয়োগ ১১৫ পৃ.)

[ফাতাওয়ায়ে শামী ৩/২৩৪, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া ৩/১৬৪,১৬৫, ফাতাওয়ায়ে কাসেমিয়া ১০/২৯৬]

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ণ ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ