টেক

‘প্রতিদিন আমায় ছিঁড়ে খেত ওরা’

লায়লা তালো খুদের আলালি নামে এক নারী জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর কাছে বন্দি থাকা অবস্থায় দিনের পর দিন ধর্ষণ, মারধর ও লাঞ্ছনার মতো নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। আইএস এর বিভিন্ন শিবিরে ২ বছর ৮ মাস ৬ দিন জিম্মি করে রাখা হয় তাকে। আইএস সন্ত্রাসীরা দীর্ঘ এ সময় জুড়ে তাকে ‘হিংস্র পশুর মতো ছিঁড়ে খেত’ বলে অভিযোগ করেন তিনি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্প্রতি ভারতের মুম্বাইয়ের হারমোনি ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে পুরস্কার নিতে এসেছিলেন দীর্ঘ আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দি থাকা লায়লা। আর সেখানেই নিজের সঙ্গে ঘটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন এই নারী। লায়লা জানান, ইরাকের উত্তরাঞ্চলের সিনজার জেলায় পরিবারসহ থাকতেন তিনি। আইএস এর কাছে আটক হওয়ার দিনের ঘটনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লায়লা বলেন, ‘আগস্টের রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল সেটি।

প্রতিদিনের মতো সকালে পরিবারে সঙ্গে নাস্তা করছিলাম। অবশ্য তার কয়েক দিন আগে থেকেই আমাদের এখানে বহু অচেনা-অজানা মানুষের আাগোনায় সরগরম ছিল। কারও হাতে পিস্তল, কারও হাতে রাইফেল। মাঝে মধ্য গুলির শব্দ। হঠাৎ করেই এক দিনের মধ্যে সব পাল্টে গেল।’

তিনি বলেন, ‘ইয়াজিদি নারীদের ধরে ধরে বন্দি করা হচ্ছিল। নির্বিচারে খুন করা হচ্ছিল একের পর এক পরিবারকে। তার মাঝেই স্বামী, দুই সন্তান এবং কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে পালাতে সক্ষম হই।’এ সময় তার পরিবারের ১৯ জন সদস্যকে বন্দি করে খুন করা হয়েছে বলে জানান লায়লা। নিহতদের মধ্যে তার মা, ভাই-বোনরাও ছিল বলে জানান তিনি।

আইএস জঙ্গিদের হামলায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন যান লায়লা। এরপর চলতে থাকে অমানবিক অত্যাচার। লায়লা বলেন, দীর্ঘ ২ বছর ৮ মাসের ব্যবধানে তাকে ৯ বার কেনাবেচা করে বিভিন্ন দেশের জঙ্গিরা। সিরিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, বাগদাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী শিবিরে দিনের পর দিন ধর্ষিতা হয়েছেন লায়লা।

লায়লা বলেন, ‘সপ্তাহখানের বাদেই ওরা বিক্রি করে দিত আমায়। এভাবে বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসবাদী শিবিরে হাত বদল হয়েছি। প্রতিদিন আমায় ছিঁড়ে খেত ওরা। তবে আমি সাহস হারাইনি। শুধু সুযোগ খুঁজছিলাম পালানোর। অবশেষে সেই সুযোগ মিলল। কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের পাঠানো বাইকার গ্যাংয়ের সাহায্যে সন্ত্রাসবাদী শিবির থেকে পালাই আমি। তারপর বহু চেষ্টা করে সন্তানদের খুঁজে বার করি। তবে এখনও স্বামী এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের কোনো খোঁজ পাইনি।’

এদিকে পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৪১৭ জন ইয়াজিদি নারী আইএস সন্ত্রাসবাদীদের কাছে যৌনদাসী হয়ে বন্দি ছিল। যাদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার নারীদের মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এখনও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নারী বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।

লায়লা বলেন, ‘যত দিন একজন নারী ওদের কাছে বন্তি থাকবে, তত দিন আমরা সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাব তাদের মুক্ত করার। আমি সমস্ত আন্তর্জাতিক শক্তিকে আবেদন করছি, তারা যেন এ কাজে এগিয়ে আসেন।’ লায়লা তালো খুদের আলালির জীবনে এখন একমাত্র লক্ষ্য জঙ্গি সন্ত্রাসবাদীদের খপ্পর থেকে প্রত্যেক নারী বন্দিদের মুক্ত করা।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ৫:০৬ অপরাহ্ণ ৫:০৬ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ