হাসপাতালে রোগীর বেডে বিড়াল ঘুমায়!

৫০ শয্যার হাসপাতাল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু দিনের পর দিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ কর্মরত চিকিৎসকরা হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকায় কমে গেছে রোগীর সংখ্যা। সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় উপজেলার একমাত্র এ হাসপাতালের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও নার্সরা মিলে কোনো রকম চালাচ্ছেন সেবা প্রদানের কাজ। একেবারে নিরুপায় হয়ে যে কজন রোগী হাসপাতালটিতে সেবা নিতে যান, তাদের অধিকাংশ রোগীকেই আবার রেফার্ড করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য হাসপাতালে।

এছাড়া হাসপাতালের নিরাপত্তাব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। বজায় নেই হাসপাতালে রোগীদের অবস্থান করার মতো পরিবেশও।

শনিবার দুপুরে হাসপাতালটিতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগী আছেন মাত্র ৫ জন। রোগীর বেডে ঘুমাচ্ছে বিড়াল। বেডগুলো এলোমেলো। বেডে বিছানো কাপড়গুলো অপরিষ্কার, ময়লা ও রক্তমাখা।

হাসপাতাল প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ কোনো ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি। তবে ঘণ্টাখানেক পরে জরুরি বিভাগের ডা. আলী মোহাম্মদ হোসাইন নামে একজন মেডিকেল অফিসারকে দেখা যায়। এ সময় কথা হয় হাসপাতালে ভর্তি ৫ রোগীর সঙ্গে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়া জানান, অ্যাজমা রোগের চিকিৎসা নিতে বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালে আছি। হাসপাতালের পরিবেশটা একদম ভালো না। খাবারের মানও খারাপ। বিশেষ করে রাতে কুকুর-বিড়ালের জন্য ঘুমানোই যায় না।

একই রকম অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ভর্তি অন্য চার রোগী আদমপুর গ্রামের সাবেক পৌর কাউন্সিলর অঞ্জন সরকার, একই গ্রামের মালেকা আক্তার, দুঃখিয়ারগাতী গ্রামের ঝুটন মিয়া, চারিতলা গ্রামের কামরুন্নাহার।

হাসপাতালে দায়িত্বরত নার্স জাকিয়া আক্তার ও রিনা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আমরা যতক্ষণ দায়িত্বে থাকি, তখন কুকুর-বিড়াল প্রবেশ করলে তাড়িয়ে দেই। তবুও সুযোগ পেলেই কুকুর-বিড়াল ঢুকে পড়ে।

হাসপাতালে নিরাপত্তা প্রহরী, আয়া ও ওয়ার্ডবয় না থাকায় এসব সমস্যা বেশি হচ্ছে বলেও জানান তারা।

তাছাড়া হাসপাতালে যারা খাবার পরিবেশন করেন, তারা নিয়ম মেনে রোগীদের খাবার দেন না। সপ্তাহে ২-৩ দিন কাপড় ধোলাইয়ের নিয়ম থাকলেও যারা কাপড় ধোলাইয়ের দায়িত্বে আছেন তারা পনেরো দিনেও একবার কাপড় ধোলাই করেন না। যে কারণে রোগীদের বিছানার চাদরগুলো ময়লা মাখা থাকে বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।

হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, আব্দুল জাহেদ ও সুকুমার সূত্রধর জানান, হাসপাতালটিতে ২৫-৩০ জন ডাক্তার আছেন। কিন্তু একজনও হাসপাতালে আসেন না। ডাক্তার না থাকায় সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হাসপাতালে একজন বিশেষজ্ঞ দাঁতের ডাক্তার থাকলেও রোগীরা সারা বছরেও তার দেখা পান না বলে অভিযোগ করেন। হাসপাতালে না পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিন্নাত সাবাহর সঙ্গে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,

খাবার পরিবেশ এবং কাপড় ধোলাইয়ের কাজটি যারা করেন তারা স্থানীয় লোক। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় অন্য বিষয়ে জানতে চাওয়ার আগেই তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

নেত্রকোনার সিভিল সার্জন ডা. তাজুল ইসলাম খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ৭:৪৭ অপরাহ্ণ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ