বিনোদন

ঈদুল ফিতর উদযাপনের পদ্ধতি

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক: ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য হল মাহে রমজান লাভ করা এবং রোজার তাওফিক প্রাপ্ত হওয়ার উপর আনন্দ প্রকাশ করা। আর এই মহা নেয়ামতের উপর আল্লাহ তা’আলার শোকর ও তার বড়ত্ব বয়ান করাই হল এই আনন্দের মূলকথা। আনন্দ প্রকাশের পদ্ধতি শরীয়ত এই নির্ধারণ করেছে যে, গোসল করে পাক-সাফ হয়ে যাও।

বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাও কিংবা কোনো মিষ্টিদ্রব্য খাও। সদাকায়ে ফিতর আদায় কর। নিজের কাছে বিদ্যমান কাপড়গুলোর মধ্যে সর্বোত্তম কাপড় পরিধান কর, যা অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। এরপর তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহের দিকে যাও।

ইমামের পিছনে নামায আদায় কর এবং খুতবা শ্রবণ কর। ফেরার সময় সম্ভব হলে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে ফিরে আস। আসা-যাওয়ার সময় এবং ঈদগাহে যাদের সঙ্গে সাক্ষাত হয় তাদেরকে সালাম কর। কারো সঙ্গে নতুন সাক্ষাত হলে মুসাফাহাও কর। একে অন্যকে কবুলিয়াতের দুআ দাও। এই সময় সাহাবায়ে কেরাম এই দুআ করতেন- تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ -ফাতহুল বারী ২/৫১৭

‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভকামনা প্রকাশ করা যদিও মুবাহ, কিন্তু তা একটি রুসমের মতো হয়ে গিয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় যে, সালামের পরিবর্তে এই শব্দটাই ব্যবহার করা হয়। মোটকথা, এ সময়ের মাসনূন দুআ ওইটাই যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই হল ঈদুল ফিতরের দিন ঈদ উদযাপন করে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ের পন্থা। এর বাইরে যে সব প্রচলিত বিষয় রয়েছে, যদি সেগুলোতে কোনো না-জায়েয বিষয় ও অশ্লীলতা না থাকে, তবে তা মুবাহ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। ওগুলো ঈদের মাসনূন আমল নয়।

ও গুলোকে যদি মাসনূন মনে না করা হয় এবং এত গুরুত্ব না দেওয়া হয় যে, পরিত্যাগ করা দোষণীয়, তবে তাতে অসুবিধা নেই। অন্যথায় ওগুলো পরিত্যাজ্য বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর যেসব নাজায়েয ও অশ্লীল কার্যকলাপ সমাজে প্রচলিত রয়েছে সেগুলো সর্বাবস্থাতেই নাজায়েয, ঈদের বরকতময় দিবসে সেগুলোতে লিপ্ত হওয়া আরো মারাত্মক না-জায়েয বলে গণ্য হবে।

সমাজের একটা বড় ভুল ধারণা এই যে, অধিকাংশ মানুষ ঈদের দিনের জন্য নতুন পোশাক পরিধান করা এবং অন্যদের পরিধান করানো বা হাদিয়া দেওয়াকে ঈদের অপরিহার্য অংশ মনে করে অথচ এই কথাটা একদম গোড়া থেকেই সঠিক নয় যে, ঈদের জন্য নতুন কাপড় মাসনূন; বরং দলীল দ্বারা শুধু এটুকু প্রমাণ হয় যে, নিজের কাছে বিদ্যমান কাপড়গুলোর মধ্যে উত্তম ও পরিষ্কার কাপড়টি পরিধান করবে। كَانَ ابْنُ عُمَرَ يَلْبَسُ فِيْ الْعِيْدَيْنِ أَحْسَنَ ثِيَابِهِ

এক প্রস্থ উত্তম কাপড় বানিয়ে কিংবা ক্রয় করে তা জুমআ ও ঈদে পরিধান করাতে কোনো অসুবিধা নেই। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একটি উত্তম পোশাক ছিল যা তিনি জুমআ, ঈদে কিংবা বিভিন্ন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাত করার সময় পরিধান করতেন। -আসসুনানুল কুবরা বায়হাকী ৩/২৮০-২৮১; যাদুল মাআদ ১/৪২৫

মোটকথা, পরিষ্কার ধোয়া কাপড় যা বিদ্যমান কাপড়গুলোর মধ্যে যে কাপড়টি সবচেয়ে উত্তম তা ঈদের দিন পরিধান করা কাম্য। যদি ঘটনাক্রমে তা নতুনও হয় তাহলেও অসুবিধা নেই, কিন্তু প্রত্যেক ঈদের জন্য নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করাকে মাসনূন মনে করা একদম ঠিক নয় এবং এর ওপর শরীয়তের কোনো দলীলও বিদ্যমান নেই।

মুসলমানদের আর্থিক স্বচ্ছলতার যুগ অতীত হয়েছে (যখন তাদের দ্বীন ও ঈমানের হালতও বর্তমানের চেয়ে হাজার গুণ ভালো ছিল) কিন্তু ইতিহাস থেকে এটা প্রমাণ করা যায় না যে, তাদের কাছে রমযান ও ঈদুল ফিতর বিশেষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মওসুম ছিল, যেখানে ঈদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ-আয়োজন থাকত।

এখন তো বিষয়টি শুধু কাপড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, নতুন কাপড়ের সঙ্গে চাই নতুন জুতো, মহিলাদের সাজসজ্জার সকল উপকরণ নতুন হওয়া চাই, বাচ্চাদের জন্যও সবকিছু নতুন হওয়া চাই।

ঘরের আসবাবপত্র নতুন হওয়া চাই। পুরানো শুধু একটি বস্ত্তই, তা হচ্ছে ঈমান ও আমল। একে উন্নত ও নতুন করার কোনোই আয়োজন নেই। বলাবাহুল্য, মুসলিম সমাজের এটা এক দুর্ভাগ্যজনক চিত্র, যার নজির বিগত শতাব্দীগুলোতে পাওয়া যাবে না।

কেউ বলতে পারেন যে, ইসলামে জায়েয সাজসজ্জাকে বৈধ রাখা হয়েছে এবং ঈদের সময় তা পছন্দনীয়ও বটে? অবশ্যই পছন্দনীয় তবে একে সীমার মধ্যে রাখা হলে। মুবাহ সাজসজ্জার মধ্যেও বাড়াবাড়ি করা নিষেধ।

এরপর এখানে আলোচনা শুধু সাজসজ্জা সম্পর্কেই নয়; বরং এতে সীমালঙ্ঘন করে রমযানের সবচেয়ে বরকতময় সময়গুলোকে বিনষ্ট করা সম্পর্কেও। প্রশ্ন এই যে, শরীয়তে এই প্রান্তিকতাও কি কাম্য ও পছন্দনীয়, নাউযুবিল্লাহ?! এরপর মুবাহ ও বৈধ সাজসজ্জাকে বাহানা বানিয়ে যারা অবৈধ সাজসজ্জার পেছনে পড়ে যায় তাদের কথা তো ভিন্নই!

আমাদের মনে রাখা উচিত যে, রমযানের শেষ দিনগুলো ঈদ-উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নয়; বরং ঈমান ও আমলের তরক্কীর জন্য। আমরা যদি আমাদের কর্মের মাধ্যমে এর বিপরীত কিছু প্রমাণ করি তাহলে সেটা হবে ইসলামের অত্যন্ত ভুল রূপায়ন।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৫ জুন ২০১৮, ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ