ক্যাটেগরীজ: ইতিহাস

ভিস্তিওয়ালা: হারিয়ে যাওয়া এক বিখ্যাত পেশা

সভ্যতা আর সংস্কৃতির উন্নয়নে অনেক পেশাই আজ খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা সবাই জানি কম্পিউটারের ব্যবহার বিকাশের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে টাইপ রাইটার পেশাটি। কিন্তু আমরা কি জানি ভিস্তিওয়ালা পেশাটির কথা। আজ আপনাদের জানাবো ভিস্তিওয়ালা পেশাটি কী আর কেনই বা তা হারিয়ে গেল কালের বিবর্তনে।

আজকাল ট্রেনে বাসে রাস্তায় রেস্তোরাঁয় সর্বত্রই পানি তেষ্টা পেলে আমাদের হাতে উঠে আসে ঠান্ডা বা নর্মাল সিল করা পানির বোতল। কিন্তু এই ফ্রিজ তো হালে এলো! প্রশ্ন উঠতেই পারে, তখন কি মানুষ ঠান্ডা পানি খেতেন না? আজ্ঞে খেতেন, আলবাত খেতেন। তখন ফ্রিজ না থাকলেও ছিল ‘ভিস্তি’।‘ভিস্তি হল এক ধরনের বস্তার মত দেখতে ব্যাগ।

ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি এই বিশেষ থলেকে ‘মশক’ও বলে। এতে রাখলে ফ্রিজের মতোই ঠান্ডা থাকত পানি। আর স্বয়ং পানিদাতা হয়ে এই ভিস্তির পানি যারা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন তাদের বলা হত ভিস্তি ওয়ালা।

এই ভিস্তিওয়ালাদের সঙ্গে রয়েছে ইতিহাসের যোগ। কথিত আছে, মুঘল নবাব হূমায়ুন একবার পানিতে ডুবে যাচ্ছিলেন। তখন নবাবকে বাঁচিয়েছিলেন এক ভিস্তিওয়ালা। এমনকি এই ভিস্তির উপর ভরকরেই সাঁতরে উঠেছিলেন হূমায়ুন। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সেই ভিস্তিওয়ালাকে একদিনের জন্য তার আসনেও বসিয়েছিলেন তিনি।

অভিবক্ত ভারতবর্ষের ঢাকায় এবং কলকাতায় পানি বিলোনোর কাজ করতেন এই ভিস্তিওয়ালারাই। কিন্তু স্মার্টফোন সর্বস্ব এই ওভারস্মার্ট যুগে আজকের প্রজন্ম হয়ত জানেইনা ভিস্তিওয়ালাদের কথা।

পার্সি শব্দ ‘বেহেস্ত’ শব্দের অপভ্রংশ হয়ে এসেছে ভিস্তি, এর অর্থ হল স্বর্গ। পৃথিবীর পশ্চিম ও মধ্য প্রান্তে স্বর্গের বেশীরভাগ ছবিতেই মিলেছে নদী ও বাগানের ছবি।

কথিত আছে সেই স্বর্গের নদী থেকে পানি এনেই ভিস্তিরা তা বিলিয়ে দিতেন মানুষকে, তাই তাদের স্বর্গের-দূতও বলা হত। তিলোত্তমাতেও এককালে এদের একচেটিয়া আনাগোনা ছিল। ভোরবেলা দোর খুলে রাস্তায় বেরোলেই দেখা মিলত ভিস্তিওয়ালাদের।

কাঁধে পানি ভরতি চামড়ার ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন মুসলিম সম্প্রদায়ের এই মানুষগুলো। দিল্লিতেও একসময় ছিল ভিস্তির চল।

তবে এখনও এই প্রাচীন পদ্ধতি বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম জামা মসজিদের বাইরে মুশতাকিম চায়ের দোকান। দোকানে গেলেই দেখা যাবে, ঝোলানো রয়েছে ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি লম্বা লম্বা ভিস্তি। বহুযুগ ধরে প্রাচীন দিল্লির সাক্কে ওয়ালি গলিতেই ভিস্তিওয়ালাদের বাস।

মোঘল সম্রাটের ইতিহাস ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকুমার রায়, শামসুর রাহমানের লেখায় ভিস্তিদের অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া যায় ৷ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার সাথে সাথে ভিস্তিওয়ালা নামে এই পেশাটি হারিয়ে যেতে থাকে। ভারতবর্ষের মধ্যে একমাত্র ঢাকাতেই এই পেশা বেশি সময় পর্যন্ত টিকে ছিল। ১৯৬৮ সালের দিকে ঢাকা থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায় এই পেশাটি।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ৩ জুলাই ২০২৩, ১:৪৬ অপরাহ্ণ ১:৪৬ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ