যখন পাকস্থলীর আস্তরণ কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাতে প্রদাহের (inflammation) সৃষ্টি হয়, সেই রোগকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় গ্যাস্ট্রাইটিস (gastritis)। আমরা অনেকেই এই রোগকে গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে থাকি। এই রোগটি অনেকগুলো কারণেই হতে পারে।
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যা মারাত্মক হয় না। চিকিৎসা নিলে দ্রুত সেরে ওঠে। কিন্তু চিকিৎসা না করালে এটি বছরের পর বছর ভোগাতে পারে।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে এই রোগ হলে অনেকেরই কোন লক্ষণ দেখা যায় না। আবার কারো কারো নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে: বদহজম। পেট কামড়ানো বা পেটে জ্বালাপোড়া করা। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। খাওয়ার পর পেট ভরা ভরা মনে হওয়া।
পাকস্থলীর আস্তরণ ক্ষয় হয়ে (erosive gastritis) যদি তা পাকস্থলীতে থাকা অ্যাসিডের সংস্পর্শে চলে আসে, তখন উপরের লক্ষণগুলোর সাথে ব্যথা, রক্তপাত, বা পাকস্থলীর আলসারের মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই তীব্রভাবে শুরু হতে পারে (acute gastritis) বা অনেকদিন ধরে ধীরে ধীরে হতে পারে (chronic gastritis)।
আপনার যদি বদহজম থাকে, তাহলে আপনি নিজে নিজেই খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে অথবা অ্যান্টাসিড (antacid) এর মত ওষুধ সেবন করে এর সমাধানের করার চেষ্টা করতে পারেন। তবে নিজে নিজে অ্যান্টাসিড খাওয়ার আগে এই ওষুধ আপনার জন্য নিরাপদ কি না, কিভাবে সেবন করবেন আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো অবশ্যই জেনে নিবেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন।
একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন যদি: আপনার বদহজমের লক্ষণগুলো এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে, অথবা বহজমের কারণে পেটে তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি বোধ হয়। কোন ওষুধের কারণে সমস্যাগুলো হচ্ছে বলে মনে হয়। বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত যায়, পায়খানা কালচে হয় বা বমির সাথে কফি দানার মত কিছু আসে। পেটে ব্যথা হওয়া মানেই যে সেটা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার লক্ষণ, তা নয়। অনেক কারণেই পেট ব্যথা হতে পারে, যেমন আটকে থাকা বায়ু, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (Irritable Bowel Syndrome) ইত্যাদি।
ডাক্তার আপনাকে নিচের পরীক্ষাগুলো থেকে এক বা একাধিক পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন। পায়খানা পরীক্ষা (stool test) – এই পরীক্ষার মাধ্যমে পাকস্থলীতে কোন জীবাণুর সংক্রমণ (infection) আছে কি না বা পাকস্থলী থেকে রক্ত যাচ্ছে কি না, তা দেখা হয়।
নিঃশ্বাস পরীক্ষা (breath test) – Helicobacter pylori নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আছে কি না দেখার জন্য এই পরীক্ষাটি করা হয়। স্বচ্ছ, স্বাদহীন, তেজস্ক্রিয় কার্বনযুক্ত এক গ্লাস তরল পদার্থ পান করে একটি ব্যাগে ফুঁ দিতে বলা হয়।
এন্ডোস্কোপি (endoscopy) – একটি নমনীয় নল গলার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করিয়ে খাদ্যনালীর মধ্য দিয়ে পাকস্থলীতে নিয়ে গিয়ে প্রদাহের কোন চিহ্ন আছে কি না, তা দেখা হয়।
বেরিয়াম সোয়ালো (Barium swallow)– বেরিয়াম নামক একটা রাসায়নিক পদার্থের দ্রবণ খেতে দেওয়া হবে। সেই দ্রবণ পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় এক্স-রে তে পরিষ্কারভাবে দেখা যায় এবং তা রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।
সাধারণত যেসব কারণে এই রোগ দেখা দেয়, সেগুলো হল: Helicobacter pylori নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। ধূমপান। নিয়মিত অ্যাসপিরিন (aspirin), আইবুপ্রোফেন (ibuprofen) বা নন–স্টেরয়েডাল অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি (non-steroidal anti-inflammatory) জাতীয় কোন ব্যথার ওষুধ সেবন। শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনা, যেমন বড় অপারেশন, গুরুতর আঘাত বা কোন জটিল রোগ। অতিরিক্ত কোকেইন বা অ্যালকোহল সেবন। কিছু ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলবশত নিজের শরীরকেই আক্রমণ করে। পাকস্থলীর আস্তরণকে আক্রমণ করলে এই রোগ দেখা দেয়।
চিকিৎসার মূল ৩টি লক্ষ্য হল: ১। পাকস্থলীতে থাকা এসিডের পরিমাণ কমিয়ে লক্ষণগুলো নিরসন করা। ২। পাকস্থলীর আস্তরণ সেরে তোলা। ৩। রোগের অন্তর্নিহিত কারণ আছে কি না তা খুঁজে বের করে চিকিৎসা করা।
যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়: অ্যান্টাসিড (antacids) – এই সহজলভ্য ওষুধ পাকস্থলীর এসিড প্রশমিত করে দ্রুত ব্যথা কমায়।
হিস্টামিন ২ ব্লকার (Histamine 2 blockers) – এই ওষুধগুলো পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরির পরিমাণ কমায়। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (proton pump inhibitors) – এই ওষুধগুলিও পাকস্থলীর অ্যাসিড তৈরি কমায়। তবে এরা হিস্টামিন ২ ব্লকারদের থেকেও বেশি কার্যকর। উদাহরণ: ওমেপ্রাজল।
অনেকেই এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত হলেও বুঝতে পারেন না। বহু মানুষের পাকস্থলীতে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকে, কিন্তু সাধারণত কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে পাকস্থলীর আবরণীতে প্রদাহ হয়ে বারবার বদহজম সৃষ্টি করতে পারে।
এই সমস্যা বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং সাধারণত পাকস্থলীর আবরণী ক্ষয় করে না এমন দীর্ঘমেয়াদী রোগের (chronic (persistent) non-erosive cases) পেছনে দায়ী। ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করার চিকিৎসা না পেলে এই সংক্রমণ সাধারণত সারাজীবন থেকে যায়। ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর এর সাথে কিছু এন্টিবায়োটিক একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেবন করতে হবে।
আপনার যদি মনে হয় বারবার ব্যথার ওষুধ (NSAIDs) সেবন করার কারণে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার হচ্ছে , তাহলে ‘NSAIDs-দলভুক্ত নয়’ এমন কোন ব্যথার ওষুধ সেবন করা যেতে পারে, যেমন প্যারাসিটামল। এ বিষয়ে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এছাড়াও নিচের এই ৫টি কাজ করতে পারেন: বারবার, অল্প অল্প করে খাবার খাওয়া। মশলাদার, অম্লীয়/এসিডযুক্ত ও ভাজাপোড়ার মত যেসব খাবার পাকস্থলীর ক্ষতি করে সেগুলো পারতপক্ষে এড়িয়ে চলা। মদ পান থেকে বিরত থাকা বা তা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা ছেড়ে দেওয়া। মানসিক চাপ মোকাবেলা করা।
দীর্ঘদিন ধরে এই রোগে ভুগতে থাকলে নিচে উল্লেখিত রোগলোর ঝুঁকি বাড়তে পারে: পাকস্থলীর আলসার বা ক্ষত। পাকস্থলীর পলিপ (পাকস্থলীর আস্তরণ থেকে সৃষ্ট ছোটছোট পিণ্ড)। পাকস্থলীর টিউমার, যা ক্যান্সারও হতে পারে।
গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস হল কোন জীবাণু সংক্রমণের কারণে হওয়া পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ। গ্যাস্ট্রাইটিস হল কেবল পাকস্থলীর আস্তরণের প্রদাহ, যা সব সময় জীবাণু সংক্রমণের কারণে হয় না।
এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১ অক্টোবর ২০২১, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ
মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…
ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…