রাজনীতি

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মন্ত্রী ‘নয়’

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকার থেকে দলকে আলাদা করার নীতি নেওয়ার কথা বললেও নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে স্থান পাওয়া নেতাদের শিগগিরই মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। আগামী জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস হলেও ওই নেতাদের মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে না, বরং দু-তিন দিন পর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলে আরো দু-একজন মন্ত্রীকে কার্যনির্বাহী সদস্য করা হতে পারে। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যকে রাখা হবে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ তিনজন সদস্য এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গত শনিবার আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়। ৮১ সদস্যের কমিটির মধ্যে ওই দিন ঘোষণা করা হয় ৪২ জনের নাম। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তবে বিদায়ি কমিটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা মন্ত্রিসভার অন্য পাঁচ সদস্য ঠাঁই পাননি নতুন কমিটিতে। এরই মধ্যে গতকাল রবিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস হতে পারে। ফলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভায় থাকবেন কি না, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘কমিটি থেকে এবার মন্ত্রী বেশ কয়েকজন কমানো হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মাত্র চারজন মন্ত্রী কমিটিতে আছেন। তাঁরা মন্ত্রিসভা ও দল দুই জায়গায়ই থাকবেন। আরো দু-একজন মন্ত্রী কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হবেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কোনো মন্ত্রীকে রাখা হবে না। কারণ তাঁদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়। মন্ত্রী থেকে জেলায় জেলায় গিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া খুবই কঠিন।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আগামী মঙ্গলবার দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে আলাপ-আলোচনার পর দলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার পর মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস একটি রুটিন ওয়ার্ক; নতুন বছরে এটা হতে পারে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘আমরা দল থেকে সরকারকে আলাদা করার নীতি নিয়েছি। দল দলের মতো চলবে, সরকার সরকারের মতো থাকবে। এবারের কমিটিতে যতটা সম্ভব এ নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। দল ও সরকার পৃথক রাখার ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বে একটা উদাহরণ হতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার যে পাঁচজন সদস্য আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন, মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস হলে তাঁরা বাদ পড়তে পারেন কি না জানতে চাইলে মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘আমার মনে হয় না যাঁরা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন, তাঁদের বাদ দেওয়া হবে। আপাতত আমি সে সম্ভাবনা দেখছি না।’ আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘কমিটিতে কারা আসবেন সে বিষয়টি নেত্রীই ভালো জানেন। তিনিই সব চূড়ান্ত করবেন। মঙ্গলবার সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে হয়তো বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে।’

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, আগামী মঙ্গলবার গণভবনে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত হবে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের কে কোন বিভাগের দায়িত্ব পাবেন, তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা আলোচনা করছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে কে কোন বিভাগের দায়িত্ব নিতে চান, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ নেতাই বলেছেন, দলীয় সভাপতি যে বিভাগের দায়িত্ব দেবেন সে বিভাগের দায়িত্ব পালন করতেই তাঁরা প্রস্তুত আছেন।

আওয়ামী লীগের টানা চারবারের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল এর আগে খুলনা ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কোন বিভাগের দায়িত্ব পালন করতে চাই সে বিষয়টি আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি জানিয়েছি, নেত্রী যে বিভাগের দায়িত্বে আমাকে যোগ্য মনে করবেন, সেই বিভাগেই দায়িত্ব পালন করতে আমি প্রস্তুত আছি।’

বিগত কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নতুন কমিটিতে স্থান পাননি এখনো। সরকার থেকে দল আলাদা করার নীতিতেই তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ৭:০০ পূর্বাহ্ণ ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ