কি কারণে নবজাতকসহ পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করলেন মা?

৪ দিন বয়সী পুত্রশিশুকে নিয়ে আত্মহত্যা করলেন এক মা। পাঁচ তলার ওপর থেকে প্রথমে শিশুটিকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয় নিচে। এরপর লাফিয়ে পড়েন মা সীমা আক্তার (২৫)।

গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শহরের পুরাতন জেল রোডে সংঘটিত এ ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে শহরে। ফুটফুটে একটি শিশুর এমন মৃত্যুতে চোখের জল সংবরণ করতে পারেননি কেউ। নিহত সীমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটিয়ার গ্রামের প্রবাসী মনির মিয়ার স্ত্রী।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সীমাকে গত ১৬ই অক্টোবর পরিবারের লোকজন বাচ্চা প্রসব করার জন্য লাইফ কেয়ার নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে একটি ছেলে সন্তান প্রসব করে সে।

শুক্রবার সকাল ১০টায় হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। তার আগেই পাশের দি ল্যাব এইড হাসপাতালের ছাদে উঠে প্রথমে নবজাতক ফেলে দিয়ে পরে নিজে আত্মহত্যা করেন সীমা।

সীমার লাফিয়ে পড়ার প্রস্তুতি দেখে নিচ থেকে অনেকে চিৎকার করে লাফ দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই লাফিয়ে পড়েন সীমা। শিশুটিকে ফেলে দেয়ার সময় খেয়াল করেনি কেউ। পুলিশ ধারণা করছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে সীমা আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

আখাউড়া উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়ার মেয়ে সীমা। তার স্বামী লেবানন প্রবাসী মনির হোসেন। এক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়।

পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে কয়েক দফা ঝগড়া হয় সীমার। সন্তান জন্মের পর শ্বশুরবাড়ির কেউ দেখতে না আসা নিয়ে এই ঝগড়া হয়।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েছেন সীমার মা রেহেনা বেগম ওরফে ছেলন। মেয়ের সঙ্গে তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। তিনি জানান, তরকারি গরম করতে তিনি বেরিয়েছিলেন। ফিরে এসে সীমা ও তার সন্তানকে কক্ষে দেখতে পাননি।

এদিক সেদিক খুঁজেছেন। একটু পর মেয়ে ও নাতির মৃত্যুর খবর পান। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন জানিয়েছেন-বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখছেন।

তাদের ধারণা, সন্তান প্রসবের পর প্রবাসী স্বামী সীমাকে এই সন্তান তার নয় বলে অপবাদ দিতে পারে। আর এ কারণে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ায় মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থাকতে পারে।

তবে হাসপাতালের বিল নিয়ে কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা সেটিও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। এ ব্যাপারে সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মা এবং সন্তানের লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকের ছাদ থেকে চার দিনের নবজাতককে ফেলে দেয়ার ঘটনার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। অনেকেই ছবিটি নিজের টাইমলাইনে দিয়ে আবেগাপ্লুত হচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে মর্মান্তিক ছবিটি।

এই ছবিটি শুধুমাত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়াকেই কাঁদায়নি। সামাজিক মাধ্যমে শোকের মাতাম তুলেছে ছবিটি। যে মায়ের কোলে সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকার কথা ছিল সেই কোলই সন্তানের জীবন কেন কেড়ে নিল সেই প্রশ্ন ছুঁড়েছেন অনেকে।

ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে- হাসপাতালের সামনের সড়কে পড়ে আছে প্রাণহীন শিশু। নিথর ছোট্ট দেহকে ঘিরে রয়েছে হতভম্ব জনতা। উল্লেখ্য, হৃদয়বিদারক শিশুহত্যার এ ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকের ছাদ থেকে মাত্র চার দিনের নবজাতককে ফেলে দেয় সীমা আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূ। পরে নিজেও লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

নিহত সীমা সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের ঘাটিয়ারা ফুলচং গ্রামের মনির মিয়ার স্ত্রী। মনির লেবানন প্রবাসী। গত এক বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।

শহরের পুরনো জেলরোডের দ্য ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্পেশালাইজড হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। মা-সন্তানের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই।

এ নিয়ে সৈয়দ মো. মহসিন নামে একজন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখিছেন, ‘এমন মৃত্যু কারো কাম্য নয়। আয়লান কুর্দির মৃত্যু দুনিয়ার বিবেককে নাড়া দিয়েছিলো।

আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিস্পাপ শিশুকে নিয়ে দি ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ছাদ থেকে পরে গৃহবধূর মৃত্যর ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা বাংলার মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়ে গেল। এমন মৃত্যু কারও কাছেই প্রত্যাশিত নয়। পরপাড়ে ভালো থেকো প্রয়াত মা ছেলে।’

ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে প্রকাশ দাস নামে একজন লিখেছেন, ‘জীবন চলার টাকা নামক কাগজের কাছে পরাজিত নবজাতকের মরদেহ। নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ, নিথর। যেখানে সকল শব্দেরাই ইতি টানলো।

জীবনের কাছে কতটাই না অসহায় আত্মসমর্পণ ছিল সেই মায়ের, যে মা তার চার দিনের নবজাতককে বহুতল ভবন থেকে ফেলে দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিল। পরে নিজেও সেই ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে জীবনের শেষ অধ্যায়ের রচনা করে গেল। পেছনে রেখে গেল নানা প্রশ্নের ঝুলি।’

মর্মান্তিক ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে পলাশ নামে একজন লিখেছেন, ‘আজ যে শিশুর থাকার কথা ছিল পরম আদরে, বাবা-মায়ের মান-অভিমান তাকে নিয়ে গেল লাশকাটা ঘরে।

সরকারী কর্মকর্তা মৌসুমী বাইন হীরা জানান তার আবেগ ও অনুভূতির কথা। এসময় তিনি আরও বলেন- এই ছবিটি কাদিঁয়েছে আমাদের। এভাবেই অনেকে ফেসবুকে শিশুটির ছবি নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিচ্ছেন। তারা জানিয়েছেন ছবিটি শুধু মানুষকে কাঁদিয়েছে না। হার মানিয়েছে মানবতাকে।

ঘটনাটির ভিডিও আপলোড করেছেন কেউ কেউ। মা-সন্তানের মৃত্যু ঘটনায় সদর মডেল থানায় একটি অপমৃত্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়নি।

মামলার তদন্তে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এই বিষয়ে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ কোন গাফলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, ‘শিশুর ছবিটি দেখে আমরাও মর্মাহত। এ ঘটনায় সদর মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এই বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত পর জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা। তবে ধারণা করা হচ্ছে স্বামীর সাথে অভিমান করেই সীমা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ প্রসঙ্গত, গত ১৬ অক্টোবর প্রসব বেদনা নিয়ে ল্যাব এইড হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী লাইফ কেয়ার শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন সীমা।

এদিন রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। শুক্রবার সকালে সীমা ও তার সন্তানের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার কথা ছিল।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩২ অপরাহ্ণ ১১:৩২ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ