‘মাদক সম্রাট’, কে এই রাসেল?

রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকায় বুধবার (১৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ১২টায় অভিযান চালিয়ে এক মদক ব্যবসায়ী দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। এ সময় তাদের বাড়ি থেকে ৮৮০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

উপশহর এলাকার তিন নম্বর সেক্টরের ১৭৭ নম্বার (এভারেস্ট হারমনি) প্লটের বহুতল এ্যাপার্টম্যন্ট তৃতীয় তলা থেকে মহানগর বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ দল অভিযান পরিচালনা করে এই মাদক ব্যবসায়ী দম্পতিকে ইয়াবা সহ গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাজশাহী গোদাগাড়ীর আঁচুয়া তালতলা গ্রামের লুতফর রহমানের ছেলে মনোয়ারুল হাসান রাসেল (৩৮) ও তার স্ত্রী মরিয়ম (৩১)।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাড়িটিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বোয়ালিয়া ডিভিশনের ডিসি আমির জাফর বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপশহরের একটি বাড়িতে পুলিশও ডিবির সমন্বয়ে আমরা অভিযান চালাই। সে রাজশাহীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম।

অভিযান কালে তার ভাড়া করা এই বাসা থেকে ৮৮০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে। অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে। মাদক ব্যবসা করে সে অল্প সময়ে বহু অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গেছে। উপশহর ও এর আশপাশে তার এ্যাপার্টমেন্ট ও বহুতল ভবন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কে এই রাসেল?

এদিকে এই মাদক ব্যবসায়ী রাসেলের বিষয়য়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। নিজ এলাকা গোদাগাড়ীতে সে ‘চিট রাসেল’ হিসেবেই পরিচিত।

রাসেল তিন কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী শহরের তেরখাদিয়া উত্তর পাড়া এলাকায় ৫ কাঠা জায়গার ওপর সাত তলা ফাউন্ডেশনে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করছে।

স্থানীয়রা জানান, বাড়িটি নির্মাণে দামি সব উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া রাজশাহী নগরীর উপশহর দুই নম্বর সেক্টর এলাকায় রয়েছে তার আরও একটি সুপরিসর দামি ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাটটি রাসেল ৭০ লাখ টাকায় কেনেন ২০১৫ সালে।

পাশপাশি ফ্ল্যাট সজ্জায় ব্যয় করেন লক্ষাধিক টাকা। এই ফ্ল্যাটটিতেই রাসেল বসবাস করে আসছিল। এছাড়া তার গ্রাম গোদাগাড়ীর মাটি কাটায়ও জমি-জমা কিনেছেন বিস্তর। কথিত আছে এর বাইরেও ঢাকায় রয়েছে তার দুটি ফ্ল্যাট।

সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদক বিরোধী অভিযানে নামলে সে কোরবানি ঈদের আগে উপশহর এলাকার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীকে সাথে নিয়ে ওমরা হজ্জ করতে চলে যান। এরপর থেকে সে গা ঢাকা দিয়ে ছিল।

মনোয়ারুল হাসান রাসেল ওরফে চিট রাসেল কর্মজীবনের শুরু বাসের হেলপারী দিয়ে। এখন সে উত্তরাঞ্চলের কুখ্যাত মাদক সম্রাট বলে পরিচিত। গত ৮ বছর মাদকের ব্যবসা করে অন্তত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে যে।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে দেড় কোটি টাকা মূল্যের (তৎকালীন বাজার মূল্য) ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ টাঙ্গাইলে র্যাবের হাতে ট্রাকসহ আটক হয়েছিল এই মাদক সম্রাট রাসেল। সেসময় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইয়াবার এই সবচেয়ে বড় কারবারি আটকের খবর জানাজানির পর রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও গোদাগাড়ীতে তার এক ডজন সহযোগী গা ঢাকা দেয়।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসের ৩ তারিখ সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা এলাকায় টাঙ্গাইলের ইব্রাহিমাবাদ রেলওয়ে স্টেশনের সামনের মহাসড়ক থেকে মাদক সম্রাট চিট রাসেল ও তার সহযোগীকে আটক করে র্যাব-১২ এর একটি দল।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় মামলা দায়েরের পরদিন বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। চিট রাসেল গোদাগাড়ী থানা পুলিশ ছাড়াও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও র্যাবের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।

র্যাব-১২ এর দেয়া তথ্য মতে, শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই রাসেল অন্যতম। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছে।

গোদাগাড়িবাসী জানান, গত পাঁচ বছরে ইয়াবার ব্যবসায় সে শত কোটির বেশি টাকার মালিক হয়েছে। ২০১৬ এর আগে রাসেল ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও কক্সবাজারে চারবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বেশ কয়েকবার ইয়াবাসহ আটক হলেও প্রতিবারই কোটি টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়ে যায় বলে জানা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে মাদকের মামলা হলেও বিপুল টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে নিজের নাম বাদ দিতে সক্ষম হয়।

এলাকাবাসী আরও জানায়, তার নেটওয়ার্কের সঙ্গে অর্ধশত খুচরা ইয়াবা ব্যবসায়ী জড়িত। এছাড়া গোদাগাড়ীর পুয়া বাবু ও হুমায়ুন মাদক সম্রাট রাসেলের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। পুয়া বাবু ও হুমায়ুন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বলে জানা যায়।

এলাকাবাসী ও গোদাগাড়ী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই মাদক সম্রাট রাসেল এলাকায় চিট রাসেল নামেই অধিক পরিচিত। বছর সাতেক আগে রাসেল টেম্পোর হেলপারি করত। পরে হয় বাসের হেলপার।

আর্থিক দৈন্যতায় পড়ে রাসেল প্রায় ১০ বছর আগে গোদাগাড়ীর কয়েকটি মাদক সিন্ডিকেটের কামলা হিসেবে কাজ করত। টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিত তাদের হেরোইন। গোদাগাড়ী থেকে ঢাকায় হেরোইন পৌঁছানোর কাজ করতে করতে রাসেল একসময় নিজের নেটওয়ার্ক গুছিয়ে নেমে পড়ে মাদক ব্যবসায়।

পুলিশ আরও জানায়, প্রথমে হেরোইনের ছোট ছোট চালান নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করত রাসেল। এই ব্যবসার মাধ্যমে কক্সবাজারের একটি ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে। এরপর নিজেই কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে মোটরসাইকেলে রাজশাহী আসতে শুরু করে। কয়েক বছরের মধ্যেই রাসেল বিপুল টাকার মালিক হয়ে যায়।

ইয়াবা ব্যবসার প্রসারে নিজেই কিনে ফেলে দুটি ট্রাক ও দুটি পিকআপ। এসব ট্রাক ও পিকআপে করে সরাসরি টেকনাফ থেকে রাজশাহীতে ইয়াবা চালান করছিল সে।

সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ইয়াবার চালান পৌঁছানো কঠিন হয়ে গেছে। এছাড়া রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে ইয়াবা সরবরাহকারী বড় কয়েকটি সিন্ডিকেট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় মাদক ব্যবসা থেকে সরে গেছে। রাসেল এ সুবাদে তার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে গোটা অঞ্চলে।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ৫:৩৯ অপরাহ্ণ ৫:৩৯ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ