চাকরি

আওয়ামী লীগের পথের কাঁটা জাপা

ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনে আগামী নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান ও সাবেক এমপির কোন্দলে সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এই দুই সম্ভাব্য প্রার্থীকে ঘিরে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরাও। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এই দুই নেতা হলেন- বর্তমান এমপি এম এ মালেক এবং সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ। নির্বাচন সামনে রেখে তারা দু’জন প্রকাশ্যে নিজেদের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন।

এই দু’জনের পাশাপাশি নৌকা প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন ধামরাই পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল আলীম খান সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাইশাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ও সিআইপি আহম্মদ আল জামান, কার্যনির্বাহী সদস্য অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, কার্যনির্বাহী সদস্য ও বিএসটিআইর সাবেক মহাপরিচালক দেওয়ান আফসার উদ্দিন জিন্নাহ, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার সাবেক এপিএস মনোয়ার হোসেন এবং যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোখলেস উজ জামান হিরু।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পথের কাঁটা হয়ে মাঠে রয়েছেন জোটশরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও দু’বারের সাবেক এমপি খান মোহাম্মদ ইসরাফিল খোকন এবং যুব সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন খান মিলন দল ও জোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ধামরাই পৌরসভা নিয়ে ঢাকা-২০ আসনটি গঠিত। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেনজীর আহমদ বিএনপির জিয়াউর রহমান খানকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০১৪ সালে বেনজীর মনোনয়ন পাননি।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এম এ মালেক এমপি নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচনে মালেক সমর্থিত অধিকাংশ প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় দলীয় ও নির্বাচনী রাজনীতিতে তার অবস্থান অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে। এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সুখ-দুঃখে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে ‘কর্মীবান্ধব এমপি’ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।

সাবেক এমপি বেনজীর আহমদও দলীয় মনোনয়ন ফিরে পেতে শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে ব্যাপক তৎপরতা দেখানোর পাশাপাশি নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছেন সম্ভাব্য এই প্রার্থী।

নিয়মিত গণসংযোগ ও এমপি থাকতে এলাকার উন্নয়নে নিজের ভূমিকা তুলে ধরে মানুষের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছেন একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধা। জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি হিসেবেও বেনজীরের সুপরিচিতি রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে এম এ মালেক ও বেনজীর আহমদ তুমুল দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। গত নির্বাচনের পর প্রায় বছরখানেক তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় কর্মসূচি এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছেন।

কিন্তু ঢাকা জেলা পরিষদ, ধামরাই উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে প্রকাশ্যে কোন্দলে জড়ান দু’জন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘিরে তাদের দ্বন্দ্ব বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আলাদা সভা-সমাবেশ, এমনকি সংবাদ সম্মেলন করেও একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে চলেছেন তারা। মালেক-বেনজীরের দ্বন্দ্ব নেতাকর্মীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

দ্বন্দ্বের সুযোগে দলীয় মনোনয়ন বাগাতে পৌর মেয়র গোলাম কবিরও পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সতর্কতার সঙ্গে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা না হলে নির্বাচনে অঘটনের আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের।

এম এ মালেক দ্বন্দ্ব-বিভক্তির কথা অস্বীকার করে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এমন পরিস্থিতি অস্বাভাবিক নয়। হাতেগোনা কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়া তৃণমূলের সবাই তাকে সমর্থন দিচ্ছেন দাবি করে বর্তমান সংসদের এই সদস্য বলেন, দল তাকে মনোনয়ন দিলে নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে মাঠে নামবে এবং জনগণের সমর্থনে তিনি নির্বাচিত হবেন।

বেনজীর আহমদও কোন্দলে জড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেননি। প্রার্থিতা প্রসঙ্গে সাবেক এই এমপি বলেন, ৫২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। জনগণ ও নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন।

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হয়ে অনেক উন্নয়ন করেছেন। আবার দলীয় মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এবারও তাকে নৌকার প্রার্থী করা হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী তিনি।

মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম কবির বলেন, ধামরাই পৌরসভার মেয়র হিসেবে এই পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকার জন্য ভোট চাইছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে অবশ্যই নির্বাচন করবেন।

আহম্মদ আল জামান বলেন, তার বাবা-মা এবং তিনি নিজেও মুক্তিযোদ্ধা। দীর্ঘদিন ধরেই ধামরাইয়ের বিভিন্ন মসজিদ-মন্দির ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে অনুদান দেওয়াসহ উন্নয়ন কাজ করে আসছেন তিনি। নেত্রী (শেখ হাসিনা) দলীয় মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করবেন তিনি।

আবদুল আলীম খান সেলিম বলেন, কম খরচে চিকিৎসাসেবার জন্য মেডিকেল সেন্টার এবং গার্লস কলেজ ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে এলাকাবাসীর সেবা করে যাচ্ছেন তিনি। দল তাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই বিজয়ী হবেন বলে তার বিশ্বাস।

মিজানুর রহমান মিজান বলেন, যারা দলের মনোনয়ন চাইছেন, তাদের সবার আমলনামাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। প্রধানমন্ত্রী যাকে যোগ্য মনে করবেন, তিনিই মনোনয়ন পাবেন। সেদিক থেকে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে তার আস্থা রয়েছে।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমান ও সাবেক এমপির দ্বন্দ্বের কারণে এলাকার উন্নয়ন অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, নেতাকর্মীরাও অসন্তুষ্ট। আগামী নির্বাচনে দল তাকে মূল্যায়ন করবে বলে তিনি মনে করেন।

দেওয়ান আফসার উদ্দিন জিন্নাহ বলেন, সততার সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চাকরি করেছেন তিনি। এখন এলাকার উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে তার। দলীয় মনোনয়ন পেলে অবশ্যই বিজয়ী হবেন তিনি।

মনোয়ার হোসেন বলেন, ওয়ান ইলেভেন-পরবর্তী সরকারের সময় নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কারামুক্তির আন্দোলনে জেল-জুলুমসহ চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। তরুণ, সুশিক্ষিত, সৎ ও মেধাবীদের গুরুত্ব দিয়ে নেত্রী তাকেই এই আসনের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে আশাবাদী তিনি।

ডা. মোখলেস উজ জামান হিরু বলেন, ৪৯ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি চিকিৎসাসেবাসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত তিনি। তার মতো দলের জন্য নিবেদিত ও ত্যাগী কর্মীদের নেত্রী নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবেন।

জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী খান মোহাম্মদ ইসরাফিল খোকন বলেন, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে পরপর দু’বার এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি।

এই বিবেচনায় এখানে তার বিকল্প প্রার্থী আছেন বলে মনে করেন না তিনি। আবার আওয়ামী লীগে কোন্দল থাকায় মহাজোট থেকে এবার তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে আশাবাদী তিনি।

দেলোয়ার হোসেন খান মিলন বলেন, তার নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সান্নিধ্যে থেকে ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় জাতীয় পার্টিকে চাঙ্গা করে রেখেছেন তিনি। সেদিক বিবেচনায় তিনিই দল ও মহাজোটের মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ