বিনোদন

যাকাত কি এবং কাকে দিতে হবে, জেনে নিন!

রমজান মাসে আদায়কৃত ইবাদতগুলোর মধ্যে জাকাত অন্যতম। জাকাত ইসলামের অন্যতম মৌলিক আর্থিক একটি ইবাদত। জাকাত আদায় করলে সম্পদ পরিশুদ্ধ এবং বরকতময় হয়।

জাকাত কোনো দয়া বা দান নয়; ধনীদের সম্পদে গরিব ও বঞ্চিতদের অধিকার। এজন্য জাকাত প্রদানকারীদের নিজ দায়িত্বে জাকাতের সম্পদ গরিবদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

জাকাত প্রতি বছর একবার এবং বছরের যেকোনো সময় আদায়যোগ্য ইবাদত হলেও সাধারণত তা রমজান মাসেই আদায় করা হয়। আর এটিই যুক্তিসঙ্গত। কারণ প্রথমত. রমজান সহানুভূতির মাস। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাস।’ (সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস নং-১৮৮৭)। কাজেই রমজানে জাকাত আদায় করলে জাকাতের মাধ্যমে সহানুভূতি প্রকাশ করা যায়।

দ্বিতীয়ত. রমজানের কারণে অনেক নেকি হাসিল করা যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসে যে একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস নং-৩৩৩৬)।

তৃতীয়ত. জাকাত আরবিবর্ষ হিসেবে আদায় করতে হয়। আর সাধারণত রমজান ছাড়া অন্য আরবি মাসের হিসাব অতটা কেউ রাখে না। আল্লাহ্্্্ বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত আদায় কর।’ (সুরা বাকারা : ১১০)।

‘দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা জাকাত দেয় না এবং আখিরাতে বিশ্বাস করে না।’ (সুরা হা-মিম সাজদা : ৬-৭)। আল্লাহ্্্্ বলেন, ‘তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা (জাকাত) গ্রহণ করুন। এরপর আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।’ (সুরা তাওবা : ১০৩)।

জাকাত প্রদানের খাতগুলো : কোরআনুল কারিমে জাকাত প্রদানের খাত নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে এ খাত ছাড়া অন্য কোথাও জাকাত প্রদান করা জায়েজ নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জাকাত ফকির, মিসকিন ও জাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্য,

যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের জন্য অর্থাৎ নওমুসলিম, দাস মুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির জন্য, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত ব্যক্তি এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান।’ (সুরা তওবা : ৬০)।

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জাকাত কে পাবেন তার ৮টি নির্দেশনা দিয়েছেনÑ

১. ফকির : ফকির ওই ব্যক্তি যার কাছে খুবই সামান্য সহায় সম্বল আছে। কোনোভাবে জীবনধারণ করতে পারে।

২. মিসকিন : মিসকিন ওই ব্যক্তি যার কোনো সহায় সম্বল নেই অথবা যার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং আত্ম সম্মানের খাতিরে কারো কাছে হাত পাততে পারে না।

৩. আমিল বা জাকাত আদায় ও বিতরণের কর্মচারী।

৪. মন জয় করার জন্য : নওমুসলিম অর্থাৎ যারা অন্য ধর্ম ছাড়ার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে। অভাবে তাদের সাহায্য করে তাদের মন জয় করে ইসলামের আকৃষ্ট করা।

৫. ঋণমুক্তির জন্য : জীবনের মৌলিক বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য সঙ্গত কারণে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির জন্য জাকাত প্রদান করা যাবে।

৬. দাসমুক্তি : ক্রীতদাসের মুক্তির জন্য।

৭. ফি সাবিলিল্লাহ বা জিহাদ : অর্থাৎ ইসলামকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে যারা কাফের বা বিধর্মীদের সঙ্গে জিহাদরত সেসব মুজাহিদদের প্রয়োজনে জাকাত দেয়া যাবে।

৮. মুসাফির : মুসাফির অবস্থায় কোনো ব্যক্তি বিশেষ কারণে অভাবগ্রস্ত হলে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যতই ধন সম্পদ থাকুক না কেন তাকে জাকাত প্রদান করা যাবে।

অতএব যে দরিদ্র ব্যক্তির কাছে অতি সামান্য মাল আছে অথবা কিছুই নেইÑ এমনকি একদিনের খোরাকিও নেই এমন লোক শরিয়তের দৃষ্টিতে গরিব। তাকে জাকাত দেয়া যাবে।

আর যে ব্যক্তির কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ অর্থাৎ সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, বাণিজ্য দ্রব্য ইত্যাদি নিসাব পরিমাণ আছে সে শরিয়তের দৃষ্টিতে ধনী।

তাকে জাকাত দেয়া যাবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তির কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ যাতে জাকাত আসে না যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা, গার্হস্থ্যসামগ্রী ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং নিসাব পরিমাণ আছে তাকেও জাকাত দেয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রকৃত হকদারদের কাছে জাকাত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক দান করুন।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ৬ জুন ২০১৮, ২:৪৬ অপরাহ্ণ ২:৪৬ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ