ভারত

আমি স্ট্রং হলে আরেকজন হয় না

শ্রম বিক্রির মাধ্যমে যারা অর্থ উপার্জনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন তারাই শ্রমিক। একজন রিকসাওয়ালাও যেমন শ্রমিক, কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বড় অফিসারও তেমনি শ্রমিক। সেক্ষেত্রে বাদ দিতে পারেন না শোবিজ তারকাদেরও।

কারণ নাটক-সিনেমায় কাজ করা প্রত্যেকেই শ্রম বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যে পারিশ্রমিকের আশায় তারা কাজ করছেন, সেটা কী তারা পাচ্ছেন? কীভাবে পাচ্ছেন?

নাটক- সিনেমা- বিজ্ঞাপনে সাধারণত দিনভিত্তিক কাজ করা হয়। কখনো হয়ে যায় ঘন্টা ভিত্তিক। এর ব্যতিক্রমও আছে অল্পস্বল্প। সিনেমার ক্ষেত্রে ওপেন সিক্রেট হচ্ছে নায়ক-নায়িকাদের পারিশ্রমিক। চুক্তিনামায় লাখ লাখ টাকা লেখা থাকলেও নামকাওয়াস্তে কিছু দেয়া হয়।

নানা ছলে বলে কৌশলে ঠকানো হচ্ছে তাদের। প্রতিষ্ঠিত করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কাজ আদায় করে নেয়া হয়। নাটকের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক নির্ধারিত থাকলেও তা নিয়ে চলে তালবাহনা।

আর নাটক বা সিনেমার ক্ষেত্রে আর একটি বড় যে সমস্যা। নাটক বা সিনেমার যে বাজেট নির্ধারণ করা থাকে। তার সিংহভাগ দেয়া হয় এক বা দুইজনকে। বাকী যারা আছে তারা অবহেলিত।

সিনেমায় পরিশ্রমের মূল্যায়ন কী সঠিকভাবে হয়? শাকিব খান একবার বলেছিলেন,‘কোন শিল্পী বলতে পারবে না আমরা প্রতারিত হইনি। শিল্পীরা কাজ করে। সেই টাকা ভোগ করে বাইরের মানুষ। জুনিয়র শিল্পী আর টেকনেশিয়ানদের কথা আর কি বলবো। ওদের তো না দেওয়ারই চেষ্টা থাকে। ঠিকভাবে তাদের পারিশ্রমিক পেলে কোন শিল্পী অর্থকষ্টে থাকতো না।

’ প্রযোজক-পরিচালক- অভিনেতা সোহেল রানা বলেন,‘ আমরা যা পারিশ্রমিক পেতাম সেখান থেকে একটি সিনেমা করেই গাড়ী কেনা সম্ভব হতো না। কোন একজনকে ঘিরে তখন সিনেমা হতো না। সে যত বড় স্টারই হোক। একটি সিনেমা নির্মাণ হতো।

আমরা সবাই তার অংশ হতাম। এখনকার সময়কার ছেলেমেয়েদের কথা শুনি কোন সিনেমা মুক্তির আগেই গাড়ী কেনে। তাহলে আর তাদের সমস্যা কী? বলতে হবে অবশ্যই পারিশ্রমিক বেড়েছে। তবে তা সুন্দর প্রক্রিয়ায় বাড়েনি। কেউ পুরোটাই পাচ্ছেন।

কেউ আবার নামমাত্র মূল্যে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা ঠিক নয়। পারিশ্রমিকের মূল্য তালিকা করা উচিত। তবে এখানে আর্থিক মূল্যের চেয়ে সম্মানটাও একটি বিষয়। আমি পারিশ্রমিক নিতাম বা দিতাম। তার চেয়ে সম্মানের দিক বেশি খেয়াল রাখতাম।’ নাটকে পারিশ্রমিক নিয়ে মামুনুর রশিদ বলেন,‘প্রথমত আমি একজন অভিনেতা। আমি মঞ্চ ও টিভি নাটকে সমানতালে অভিনয় করি।

আমি পরিচালনা বা নাটক লিখেও থাকি। পেছনের মানুষ হিসেবে আমি যে পারিশ্রমিক পাই তা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। আর অভিনেতা হিসেবে আর কি বলবো। বেশি চাইলে আমাদের চরিত্রই ছেটে ফেলে দিবে।

এখন তো একজন সুদর্শন নায়ক আর নায়িকা থাকলেই টেলিভিশনে নাটক চলে। আমাদের মতো বুড়োদের আর কি দরকার। তাই দাম হাকাহাকির কিছু নেই। যা দেয়, বলে কয়ে যদি কিছু বাড়ানো যায়। জোর করার তো কিছু নেই। আর যদি সংগঠনের কথা বলি, সংগঠন এখনো এতো স্ট্রং হয়নি যে তারা নির্ধারণ করে দিতে পারবে। তবে আশাবাদি আসছে দিনে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

শ্রমের মূল্য প্রসঙ্গে নির্মাতা অমিতাভ রেজা বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি যদি বিজ্ঞাপন না বানাতাম। সিনেমা বানাতে পারতাম না। বিজ্ঞাপন দিয়ে আমার ঘর সংসার চালাতে হয়। সিনেমা বানানোর স্বপ্ন প্রতিনিয়ত দেখি। কিন্তু তা দিয়ে ব্যবসা করে খেতে পারবো বলে মনে হয় না।’ চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনুর।

অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমার নায়িকা। পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ইস্কাটনের ফ্ল্যাট কিনেছি সেই কবে। সেখানেই এখনো থাকি। আমি এত এত ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করেছি। যদি যথাযথভাবে সম্মানিটা পেতাম।

আজ মনে হয় ঢাকাতে কয়েকটা বাড়ি থাকতো। তবে এখনকার অনেকের আছে শুনে ভালো লাগে। আমরা যা পারিনি। তা ওরা পারছে। তবে আশা রাখবো অবৈধ কোন পথে যেন নতুনরা না যায়।

খারাপ লাগে শুনতে আমারই জুনিয়র কেউ যদি কোন অপকর্মে লিপ্ত হয়।এখন যেটা হয়, আমাদের সময়ও হতো। চুক্তি করতো, তারপর এই হাত ওই হাত ঘুরে পারিশ্রমিকটা সঠিকভাবে পাওয়া যেত না’

মেহজাবিন বলেন, ‘সাধারণ শ্রমিকরা তো পার ডে মজুরি পায়। কিন্তু আমরা তাও পাই না। আমি বলব, প্রত্যেকদিন না হোক অন্তত প্রত্যেকটি লট শেষে পারিশ্রমিকটা দেয়া উচিত। আর টাইমিংয়েও পরিবর্তন আনতে হবে।

আমরা সেই সকাল আটটা থেকে কাজ শুরু করি শেষ হয় মাঝরাতে। সংগঠনগুলো নিয়ম করলো। কিন্তু এর তোয়াক্কা যে খুব বেশি হয় তা বলা যায় না। পরিচালকদেরও কিছু করার নেই। দুইদিনের জায়গায় তিনদিন টানলে বাজেট থাকে না।

ঢাকার বাইরে যদি শুটিং থাকে তাহলে তো সেই ভোরে উঠতে হয়। আমরাও তো মানুষ। বাইরে থেকে মনে হয় আমরা খুব আরামসে শুটিং করছি। হাসছি-কাদছি এগুলো এত সহজে হয় না।

আমরা একমাস সবাই মিলে যদি নিয়ম করি দশটায় প্যাক আপ করতে হবে তাহলে সেটিই অভ্যাস হয়ে যাবে। কিন্তু আর্টিস্টরা স্ট্রং হয় না। আমি স্ট্রং হলে আরেকজন হয় না। সংগঠনগুলোও কেন যেন স্ট্রং হতে পারে না’।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১ মে ২০১৮, ১:১৯ অপরাহ্ণ ১:১৯ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন
দ্বারা প্রকাশিত
বিডিভিউ২৪ ডেস্ক

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ