ভ্রমণ

বিলুপ্তপ্রায় কর্পূর গাছ

কর্পূর সবাই চেনে। প্রয়োজনে ব্যবহারও করে। প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগে ইউরোপে মিষ্টিজাতীয় খাদ্য সুগন্ধি করতে কর্পূর ব্যবহার করা হতো। কর্পূরগাছের কাঠ থেকে পাতন পদ্ধতিতে কর্পূর সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে তারপিন থেকে কৃত্রিমভাবেও কর্পূর উৎপাদন করা হয়।

কর্পূর চিরসবুজ মাঝারি উচ্চতার ছায়াবৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum camphora. Lauraceae পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে camphor tree, camphorwood, camphor laurel বলে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। কর্পূর গাছ ২০ থেকে ৩০ মি. পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এটি ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। স্থানবিশেষে একে কাপুর গাছ নামেও ডাকে। আদিনিবাস ইয়াংশি নদীর দক্ষিণে অবস্থিত চীন অংশ, তাইওয়ান, দক্ষিণ জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনাম। প্রায় দুইশ’ বছর আগে এসেছে ভারত উপমহাদেশে।

কর্পূরগাছ মাটির প্রায় কাছাকাছি থেকে ডালপালাগুলো চারপাশে সমান্তরালভাবে ছড়িয়ে দেয়। ছড়ানো ডালপালার আগায় পাতাগুলো গুচ্ছবদ্ধ থাকে। মূলত এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই খানিকটা দূর থেকে গাছটি শনাক্ত করা যায়। ফাল্গুন-চৈত্রে ছোট ছোট সবুজাভ ফুল ফোটে। এরপর জাম-আকৃতির ফল আসে। একটি পরিণত গাছ থেকে ৪-৫ কেজি কর্পূর পাওয়া যায়। যদিও গাছের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৫০ বছর। গাছ থেকে মোমের মতো যে রস বেরোয় তা থেকেই কর্পূর তৈরি হয়। এর কাণ্ড, পাতা, ডাল সব কিছুতেই কর্পূর আছে। কর্পূরের স্বাদ তেতো, তবে সুগন্ধি, রং সাদা। সাধারণত গাছের বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। শক্ত ও নরম কাঠের ডাল কেটে কলম করেও চারা তৈরি করা যায়।

আমি ময়মনসিংহ শহরের সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ) ক্যাম্পাসে মসজিদের উত্তর-পূর্ব পাশে প্রথম কর্পূরগাছ দেখি। ওখানে পাশাপাশি পাঁচটি কর্পূরগাছ আছে। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বলধা গার্ডেন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্পূরগাছ রয়েছে। পাতা আকারে ছোট, দেখতে অনেকটা দারুচিনি বা তেজপাতার মতো। ব্যতিক্রমী পাতার গড়ন, নিশ্ছিদ্র বুনন ও ডালপালার বিন্যাস চোখে পড়ার মতো।

কর্পূরের অনেক গুণ রয়েছে। ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা দূর করে, জলে কর্পূরের তেল ফেলে স্নান করলে অ্যালার্জি কমে যায়। নখে ফাঙ্গাস সংক্রমণও ঠেকায়, ক্যান্ডিডা প্যারাপসিলোসিস, ট্রাইকোফাইটন মেন্টাগ্রোফাইটস জাতীয় ছত্রাকের সংক্রমণ দূরে রাখে। একজিমা কমানোর লোশন-ক্রিমে ব্যবহৃত হয়। বালিশে এক ফোঁটা কর্পূর তেল ফেলে রাখলে ভালো ঘুম হয়। শ্বাসনালিতে ঘা, সর্দিকাশিও নিমেষে দূর করে।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২০ এপ্রিল ২০১৮, ৩:২২ অপরাহ্ণ ৩:২২ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ