ক্যাটেগরীজ: অর্থনীতি টেক

যে ১০ ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে আপনার জানা উচিত

বর্তমানে কয়েক হাজার ক্রিপ্টোকারেন্সির অস্তিত্ব রয়েছে। যার কারণে খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রথমবার বিনিয়োগে ইচ্ছুক গ্রাহকরা বিভ্রান্ত হতে পারেন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ কোন ক্রিপ্টোকারেন্সিকে ভরসা করা যায়; সেই বিষয়টিই অনেকের জানা থাকে না।

এর সাথে সমস্যা আরও জটিল হয় যখন কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য আচমকা ১০০ শতাংশ-এর বেশি বেড়ে যায়, তখন অনেকেই সেগুলো না কেনার জন্য নিজেকে দোষারোপ করতে শুরু করেন। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সির জগৎ সম্পর্কে সাধারণ কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি। অবশ্যই আস্থা রাখতে হবে বহুল প্রচলিত ও নির্ভরযোগ্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। পরবর্তীতে অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় বিকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। ২০২১ সালের আগস্ট মাসের মার্কেট ভ্যালুর ওপরে ভিত্তি করে সেরা ১০ প্রকার ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো-

১. বিটকয়েন: এই পরিবারের কর্তা হল বিটকয়েন, এই মূল ক্রিপ্টোকারেন্সি ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো নামক কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। অধিকাংশ ক্রিপ্টোকারেন্সির মতোই, বিটকয়েন পরিচালনা করা হয় ব্লকচেন মারফত, এটি হলো কয়েক হাজার কম্পিউটারের একটি নেটওয়ার্ক- যারা কোনও মধ্যস্থাতাকারী ছাড়াই রিয়েল টাইমে ট্রানজেকশন ভেরিফাই করে থাকে।

এর মধ্যে বিল্ট ইন প্রুফ-অব-ওয়ার্কের মতো কিছু অন্তর্নিহিত বিষয় থাকার কারণে, হ্যাকিংয়ের মতো সমস্যা থেকে সবচেয়ে সুরক্ষিত এবং নিরাপদ বিকল্প হলো বিটকয়েন। আগস্ট মাসের শেষে এর মার্কেট ক্যাপ ছিল ৮৫৬ মার্কিন ডলারের বেশি। পাঁচ বছর আগে একটি বিটকয়েনের দাম যেখানে ছিল ৫০০ ডলার, এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ৮ হাজার ৯০০ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যাবে।

২. ইথেরিয়াম: ইথেরিয়াম এক ধরনের ব্লকচেন নেটওয়ার্ক যার প্রকৃত টোকেন হলো ইথার বা ETH। ইথেরিয়ামকেও ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবেই গণ্য করা হয়। যদি কখনো শোনা যায় যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে NFT বিক্রি করা হচ্ছে, তাহলে সেটি ইথেরিয়াম ব্লকচেন ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি হলো সেই সমস্ত সলিড প্লাটফর্মের মধ্যে অন্যতম যারা ক্রমাগত আপগ্রেড করার এবং প্রতিটি ট্রেন্ডের শিখরে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর সর্বশেষ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কয়েক গুণ কমিয়ে ফেলা।

একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ইথেরিয়ামের দাম ১১ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩ হাজার মার্কিন ডলার। অংকের হিসেবে এই রিটার্নের পরিমাণ ২৭ হাজার শতাংশ। এর বর্তমান এম-ক্যাপ হল ৩৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি, যার ফলে এটি পরিণত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয়-বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সিতে।

৩. বিন্যান্স কয়েন: ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মার্কেট ক্যাপসহ বিন্যান্স কয়েন হলো বর্তমানে তৃতীয় জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। ট্রেডিং, পেমেন্ট প্রক্রিয়াকরণ বা এমনকি ভ্রমণের আয়োজন করার সময়ে বুকিং করার ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার করা যায়। এর পাশাপাশি ইথেরিয়াম বা বিটকয়েনের মতো অন্য ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে এটি ট্রেড বা এক্সচেঞ্জ করার সুযোগও রয়েছে।

৪. কার্দানো: কার্দানো হল তুলনামূলক ভাবে একটি নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি। কিন্তু এটি এসেই অনেকটা হইচই ফেলে দিয়েছে এবং বর্তমানে সর্বত্র এই ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে। এটি অত্যাধুনিক প্রুফ-অব-স্টেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ট্রানজেকশান ভ্যালিডেট করে। যার ফলে বড় বড় ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর তুলনায় অনেক কম শক্তি ব্যয় হয়। ২০২১ সালের আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত এর মার্কেট ক্যাপ ছিল ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৫. টেথার: ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এম-ক্যাপসহ টেথার হলো একটি স্থিতিশীল কয়েন। এটি একটি ব্যতিক্রম ক্রিপ্টোকারেন্সি, যার পেছনে মার্কিন ডলারের মতো একাধিক ফিয়াট কারেন্সি রয়েছে। যার ফলে এটি অন্যান্য অস্থির চরিত্রের ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় অনেক বেশি স্থির ও ভরসাযোগ্য।

৬. এক্সআরপি (XRP): ডিজিটাল টেকনোলজি কোম্পানি রিপল নির্মাণকারী দল এক্সআরপি তৈরি করেছে। এটি মূলত বিভিন্ন রকম কারেন্সি; যেমন এর মধ্য রয়েছে ফিয়াট কারেন্সি। এছাড়া অন্য প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য গড়ে ওঠা নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি। ২০২১ সালের আগস্ট মাসের শেষে এক্সআরপি’র মার্কেট ক্যাপ ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছে।

৭. ডোজকয়েন: নিছক মজা হিসেবে শুরু করা হলেও, বর্তমানে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পরিণত হয়েছে ডোজকয়েন। মজার বিষয় হচ্ছে- ২০১৭ সালে ডোজকয়েনের মূল্য ছিল ০.০০০২ মার্কিন ডলার এবং বর্তমানে এর মূল্য দাঁড়িয়েছে ০.৩১ মার্কিন ডলারে। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে এর দাম বেড়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০০ শতাংশ!

৮. পোলকাডট: ২০২০ সালে বাজারে আসে পোলকাডট। এরপর মাত্র এক বছরের মধ্যে, এর দাম ২ দশমিক ৯৩ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২৫ দশমিক ৬১ মার্কিন ডলারে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ এক লাফে মূল্য বেড়েছে ৭৭৪ শতাংশ! পোলকাডটের ইউএসপি হলো এমন ক্রিপ্টোকারেন্সি নেটওয়ার্ক তৈরি করা যা বিভিন্ন ব্লকচেনকে কানেক্ট করবে, যেন সেগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে। বর্তমানে এর এম-ক্যাপ হলো ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।

৯. ইউএসডি কয়েন: ইউএসডি কয়েন হলো এক ধরনের স্টেবল বা স্থিতিশীল কয়েন যার মার্কেট ভ্যালু ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সেটি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি পরিচালনা করে ইথেরিয়াম এবং যে কোনও গ্লোবাল ট্রানজেকশান করার কাজে এটি ব্যবহার করা যাবে।

১০. সোলানা: সোলানা’র এম-ক্যাপ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি এবং এর অনন্য হাইব্রিড প্রুফ-অব-স্টেক এবং প্রুফ-অব-হিস্ট্রি মেকানিজমের জন্য এটি এখনও খবরের শিরোনামে উঠে আসছে। সোলানা’র হাইব্রিড প্রুফ-অব-স্টেক এবং প্রুফ-অব-হিস্ট্রি মেকানিজম সকল ট্রানজেকশান দ্রুত এবং নিরাপদে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।

পোলকাডট’র মতো সোলানাও ২০২০ সালে বাজারে আসে। তখন এর দাম ছিল ০.৭৭ মার্কিন ডলার এবং বর্তমানে এর মূল্য ৯ হাজার ৪০৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ১৯ মার্কিন ডলারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি একধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা এবং তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে বর্তমানে এ ধরনের মুদ্রার সংখ্যা আট হাজারের বেশি এবং এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিট কয়েন। ২০০৮ সালের শেষভাগে জাপানি নাগরিক সাতোশি নাকামোতো নামের একজন এবং একদল সফটওয়্যার বিজ্ঞানী এই ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভাবন করেন। বর্তমান বিশ্বে ভার্চুয়াল এই মুদ্রার বাজার দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২:০৪ অপরাহ্ণ ২:০৪ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ