ক্যাটেগরীজ: উদ্ভিদ লাইফস্টাইল

ক্যাপসিকামের যত গুণ

ক্যাপসিকাম একটি পরিচিত সবজি। সালাদ বা খাবারকে সুন্দর ভাবে সাজাতে ক্যাপসিকামের জুড়ি নেই। শুধু তাই নয় বরং বিভিন্ন সবজি বা খাবার ক্যাপসিকাম দিয়ে রান্না করা হয়ে থাকে। ক্যাপসিকামের নজড়কাড়া আকার, রং এবং হালকা মিষ্টি-ঝাল স্বাদের জন্য ক্যাপসিকামের আমাদের সবার কাছে খুব প্রিয় একটি সবজি হয়ে উঠেছে।

আসলে ক্যাপসিকাম একধরনের মরিচ। তবে ক্যাপসিকাম মরিচ হলেও এর আছে খুবই হালকা ঝাল। এর কিন্তু বেশ সুন্দর একটা ঘ্রাণও আছে। আমাদের বিভিন্ন খাবারে ক্যাপসিকাম থাকলেও আমরা কিন্তু অনেকেই হয়তো এর পুষ্টিগুণ এবং এটির উপকারীতা সম্পর্কে জানি না। আসুন তবে জেনে নিই ক্যাপসিকামের পুষ্টিগুণ এবং এর উপকারীতা সম্পর্কে।

পুষ্টিগুণঃ দেখতে অনেক সাধারণ হলেও ক্যাপসিকামের পুষ্টিগুণ কিন্তু মোটেও সাধারণ নয়। দেখা গেছে প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে রয়েছে- ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন ৪.৬০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ১.৭০ মিলিগ্রাম স্নেহ, ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ৩৭০ আইইউ ভিটামিন এ। এছাড়াও এতে আছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬, থায়ামিন, লেবোফ্লেবিস ও ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপারের মত উপকারি সব উপাদান। যা নানাভাবে আমাদের দেহের জন্য ভীষণ উপকারী।

উপকারীতাঃ ১। ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন সি আমাদের দেহে নানাভাবে উপকার করে থাকে। ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সহায়তা করে।ফলে আয়রনের অভাব দূর হয় এবং রক্তাল্পতার মতো রোগও প্রতিরোধ করে। এছাড়াও ভিটামিন সি আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। দাঁত এবং দাঁতের মাড়ির সুরক্ষায় ভিটামিন সি অনেক উপকারী। এর ভিটামিন-এ ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, দৃষ্টিশক্তি সজাগ রাখতে সাহায্য করে।

২। সবুজ ক্যাপসিকামের আছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম । যা আমাদের পেশির সংকোচন-প্রসারণে সাহায্য করে।ক্যাপসিকামের ক্যাপসাইসিন উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে । এছাড়াও এতে আছে লাইকোপেন নামক এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পিগমেন্ট । যা আমাদের স্তন ও প্রস্টেটের ক্যানসার রুখতে সাহায্য করে। লাল ক্যাপসিকামে থাকা জেক্সানথিন ও লুটেনের সাহায্যে চোখের ছানি প্রতিরোধ হয় এবং এটি পেশির ক্ষয় রুখতে সাহায্য করে।

৩। ক্যাপসিকাম আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমায়। কারণ এতে থাকা অ্যাক্টিভেটিং থার্মোজেনেসিস এবং হজম শক্তি উন্নত করার ক্ষমতা আমাদের তাড়াতাড়ি ওজন কমাতে সাহায্য করে। একই সাথে ক্যাপসিকাম আমাদের দেহের বাড়তি ক্যালরি পূরণ করে। এতে হাই ফ্যাট থেকে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায় ।ক্যাপসিকাম জুস আমাদের হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা ও পেটের বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়রিয়া, গ্যাস, অ্যাসিডিটি দূর করে। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যায় ক্যাপসিকাম খুবই উপকারী। এটি পাকস্থলীর আলসার বা ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।

৪। ক্যাপসিকামে আছে অ্যালকালোয়েড, ফ্লেবোনয়েড এবং ক্যানিনের মত উপকারী উপাদান। অ্যালকালোয়েড অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ক্যানিন বিভিন্ন আন্ত্রিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।এছাড়াও ক্যাপসিকাম আমাদের যেকোনো ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতে দ্রুত কাজ করে এটি। একই সাথে এটি আমাদের সি সিকনেস বা সমুদ্রে যাওয়ার কারণে অসুস্থতা, ম্যালেরিয়া, জ্বর ইত্যাদি রোধে বেশ কার্যকর।

৫। ক্যাপসিকামে রয়েছে লাইকোপেন। যা আমাদের বিভিন্ন কার্ডিওভ্যস্কুলার ডিজিস থেকে দূরে রাখে এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। এতে থাকা ভিটামিন কে আমাদের দেহের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে। ত্বক পরিষ্কার রাখতে ক্যাপসিকাম বেশ উপকারী। এটি ত্বকের র‍্যাশ ও ব্রণ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এটি বাতের ব্যাথা কমায়। এতে থাকা ভিটামিন-সি আমাদের কোলাজেন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যা আমাদের দেহের ত্বক ও হাড়ের সন্ধিকে পরিপোষণ করে।এছাড়াও এটি হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে এবং কোষের ক্ষয় রোধ করে।

৬। ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং বিটা ক্যারোটিন। যা আমাদের দৃষ্টিশক্তির বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং আমাদের দৃষ্টিশক্তি শক্তিশালী করে। এতে থাকা ভিটামিন-এআমাদের চোখের জন্য বিশেষত রাত্রিকালীন দৃষ্টির জন্য ভাল। এছাড়াও এতে থাকা ক্যারোটেনয়েড বয়স জনিত দৃষ্টিশক্তি হ্রাস বা ম্যাকিউলার ডিজেনারাইজেশনের সম্ভাবনা অনেক কমিয়ে দেয়।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ৩০ জুন ২০২১, ৩:১৪ পূর্বাহ্ণ ৩:১৪ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ