অপরাধ

খুনির পরিবর্তে জেলে ‘ভাড়াটে আসামি’

হুমকি কিংবা অর্থ দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা এ দেশে ক্রমে ‘স্বাভাবিক’ হয়ে আসছে। এবার পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার প্রকৃত আসামির পরিবর্তে ভাড়া করে সাধারণ মানুষ দিয়ে জেল খাটানোর আরেকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশি তদন্তে সত্যতাও মিলেছে এই অভিযোগের।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এই চক্রের কবলে পড়েন সিআইডি পুলিশের এসআই মো. মামুন ইমরান খান। এরপর তাঁকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুর বনে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। এ ঘটনায় নিহত এসআইয়ের ভাই বাদী হয়ে ঢাকার বনানী থানায় ২০১৮ সালের ১০ জুলাই মামলা করেন। এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয় মামলাটির। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

এই মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। তিনি পলাতক রয়েছেন। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে রবিউল সেজে চাঁদপুরের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. আবু ইউসুফ লিমন গত ২০ অক্টোবর ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

রবিউলের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানার আশুতিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মতিউর রহমান। অন্যদিকে ২২ বছর বয়সী ইউসুফ চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার আইনপুর (উত্তরপাড়া নতুনবাড়ী) গ্রামের মো. নুরুজ্জামানের ছেলে। নুরুজ্জামান কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। ইউসুফ রাজধানীর মিরপুর ২ নম্বর সেকশনে এক মেসে ভাড়া থাকতেন। ছোটখাটো কাজ করে যা আয় করতেন, তা দিয়ে সিটি ক্লাবে কোচ সবুজের অধীনে ক্রিকেট খেলা শিখতেন। সেখান থেকে আসামি রবিউলের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ইউসুফের।
দীর্ঘদিন ছেলের সন্ধান না পেয়ে ইউসুফের বাবা গত ১৪ জানুয়ারি কচুয়া থানায় জিডি করেন। এর কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন, তাঁর ছেলে কাশিমপুর কারাগারে।

নুরুজ্জামান বলেন, ‘এ খবর পেয়ে ছেলের সঙ্গে কারাগারে দেখা করি। তার কাছ থেকে সব জানতে পারি। রবিউল হত্যার হুমকি ও টাকার লোভ দেখিয়ে ইউসুফকে কোর্টে পাঠায়। ইউসুফ আদালতে নিজেকে রবিউল হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।’ তিনি বলেন, ‘ইউসুফকে এক মাসের মধ্যে জামিন করার কথা বলে কোর্টে নিয়েছিল রবিউল। এরপর আর জামিন মেলেনি ইউসুফের।’

ছেলের মুক্তির জন্য আইনজীবী শামীম সরদারের শরণাপন্ন হন নুরুজ্জামান। সব কিছু জানার পর ইউসুফের মুক্তির জন্য ঢাকার আদালতে আবেদন করেন ওই আইনজীবী। এ আবেদনে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি। আদালত গত ২ মার্চ বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। বিষয়টি তদন্ত করে ডিবি পুলিশ গত ২ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ অবস্থায় রবিউলের আইনজীবীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ। এ আবেদনের ওপর আগামী ২ জুন ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

অ্যাডভোকেট শামীম সরদার বলেন, ‘ইউসুফের বাবার কাছ থেকে বিস্তারিত জানার পর নিজেই অনুসন্ধান শুরু করি। ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর ইউসুফের মুক্তির জন্য আদালতে আবেদন জানাই। আদালত এখন কী আদেশ দেন, সে অপেক্ষায় আছি।’

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২৮ মে ২০২১, ৫:১৭ অপরাহ্ণ ৫:১৭ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ