জাতীয়

ইউএনও’র জরিমানা করা সেই বৃদ্ধকে তিনমাসের খাবার পৌঁছে দিলেন রাব্বানী

‘৩৩৩’ নম্বরে খাদ্য সাহায্যের জন্য কল দিয়ে উল্টো জরিমানা দেওয়া সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ ফরিদ আহম্মেদ খানকে তিনমাসের খাদ্য সহায়তা করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

দুই রুমের ঘরের সব কিছুই সাজানো-গোছানো। মহামারি শুরুর আগে তার সংসার মোটামুটি ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু করোনার দুঃস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে খাদ্য সহায়তা চেয়ে ‘৩৩৩’ এ কল করেছিলেন ফরিদ। কিন্তু সেটা যে বুমেরাং হবে তা আগে কল্পনাও করেননি।

গত ১৮ মে ‘৩৩৩’ এ কল দিয়ে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিলেন ফরিদ। দুইদিন পর সরেজমিনে বাড়ির সামনে আসেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা। ভালোমতো যাচাই না করেই তিনি ধরে নেন, ফরিদ ৪ তলা বাড়ির মালিক এবং তার হোসিয়ারী কারখানা আছে। এজন্য সহায়তা না দিয়ে তার উপস্থিতিতে উল্টো ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তা দিতে নির্দেশ দেন। অন্যথায় তিন মাসের জেল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মে বিকেলে ১০০ জনের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে বাধ্য হন ফরিদ।

ইউএনও’র নির্দেশে ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তার জন্য টাকা যোগাড় করতে নিজের ও ভাইয়ের স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক দিতে হয়েছে ফরিদ উদ্দিনকে। এ কষ্টে তিনি আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন। পরে ২২ মে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা যোগাড় করে তিনি ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তা করেন।

এমন ঘটনা জানার পর সেই বৃদ্ধের বাড়িতে তিন মাসের খাবার নিয়ে হাজির হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও টিম পজিটিভ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম রাব্বানী।

বুধবার (২৬ মে) নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকায় ফরিদ উদ্দিনের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১০০ কেজি চাল, ৬০ কেজি আলু, ২৫ কেজি ডাল, ৮ কেজি তেল নিয়ে হাজির হন তিনি। এ সময় নগদ ৫ হাজার টাকাও সহযোগিতা করেন তিনি।

গোলাম রাব্বানী বলেন, আজ ফরিদ চাচার বাড়িতে গিয়ে আমিও বাস্তবতা দেখে এসেছি, Team Positive Bangladesh (TPB) এর পক্ষ থেকে ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভালোবাসার উপহার’ হিসেবে খাদ্য সহায়তা (১০০ কেজি চাল, ৬০ কেজি আলু, ২৫ কেজি ডাল, ৮ কেজি তেল) ও নগদ ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

আর এই দুর্যোগময় সময়ে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রকৃত অসহায় কেউ যদি ৩৩৩ তে ফোন করে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলায় খাদ্য সহায়তা না পান, Team Positive Bangladesh - TPB কে জানান। আমরা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করবো ইনশাআল্লাহ।

ফরিদ আহম্মেদ কারখানায় কাজ করে মাসে সাকুল্যে ১০ হাজার টাকা আয় করেন। স্ত্রী, শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে ও কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশ জুড়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। জেলা প্রশাসক ইউএনওকে ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। পরে ফরিদ আহম্মেদকে জরিমানার টাকা আমি ফেরত দেওয়া হয়।

ফরিদ আহম্মেদ বলেন, ‘মান সম্মান শেষ। মনের ভেতর একটা অশান্তি বোধ করছি। এর জন্য আমি লজ্জিত। এ ঘটনার পর আত্মীয়-স্বজন কেউ আমার বাড়িতে আসে নাই। আমার আত্মীয়-স্বজনরা ফোনে বলতেছে মানসম্মান সব শেষ। মানসম্মান শেষ হলে আমার কি করার আছে? আমি তো চুরি করি নাই, আমি মার্ডারও করি নাই, ডাকাতিও করি নাই।’

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২৬ মে ২০২১, ১১:৫৭ অপরাহ্ণ ১১:৫৭ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ