আন্তর্জাতিক

হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিচ্ছেন এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা!

হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিচ্ছেন এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা। কারণ বোমা হামলা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার হিন্দুরা। এমনটাই ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের নয়াবাজারের ভাটপাড়া এলাকায়।

খবর রটেছিল যে, কিছু লোক হামলা করতে আসছে। কখন কোন দিক থেকে যে গুলি ছুটে আসবে, কেউ জানে না। ভাটপাড়া জুড়ে আতঙ্ক আর অবিশ্বাসের পরিবেশ।

এই পরিস্থিতিতে হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিচ্ছেন এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা। এদের মধ্যে রয়েছেন মোহম্মদ খুরশিদ, জইনুল হক, আনোয়ার আলি, মোহম্মদ উকিলসহ আরো অনেকেই।

তারা বলছেন, বাইরে যেখানে যতই গণ্ডগোল হোক না কেন, মন্দিরের গায়ে তারা কাউকে আঁচড় কাটতে দেবেন না। এ জন্য সবসময় নজর রাখছেন তারা। সেই আশ্বাসে ভর করেই এলাকার শিবমন্দির আগলে পড়ে রয়েছেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তুলসীপ্রসাদ।

ভাটপাড়া থানা থেকে কিছুটা দূরেই নয়াবাজার এলাকা। তার উপর দিয়ে যে রাস্তা চলে গেছে, তা এনসি রোড নামে পরিচিত। এই এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দাই মুসলিম সম্প্রদায়ের। সেখানেই রয়েছে পুরোনো শিবমন্দির।

দু’বেলাই মন্দিরে পুজো-অর্চনা হয়। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তুলসীপ্রসাদ মন্দিরের মধ্যেই একটি ঘরে বসবাস করেন। তার ঠিক একশো মিটার ব্যবধানে রয়েছে ঈশাক সরদার মসজিদ।

ভাটপাড়ায় লোকসভা ভোটের সময় শুরু হওয়া রাজনৈতিক হিংসায় সাম্প্রদায়িক রং লেগে যাওয়ায় যখন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, তখন মুসলিম এলাকার মধ্যে নিশ্চিন্তে দিনযাপন করছেন তুলসীপ্রসাদ।

তুলসীপ্রসাদ জানান, এখানকার বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। কিন্তু আমরা সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকি। ১৯৭১ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তখন থেকে আজ পর্যন্ত কোনও ঝামেলা হয়নি।

ঈশ্বর ও আল্লার কাছে প্রার্থনা করি, এবারেও যেন কিছু না হয়। সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা শান্তিতে থাকুন। কোনও গণ্ডগোলে পা দেবেন না। এদিকে, ঈশাক সরদার মসজিদের ইমাম মৌলানা মহম্মদ নিশারও সব ধর্মের মানুষের কাছে শান্তির আবেদন রেখেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের মসজিদের পাশেই মন্দির রয়েছে। অন্য কোথাও মসজিদে কেউ বোমা মেরেছে বলে আমাদের এলাকার মন্দিরে পাল্টা হামলা হোক, সেটা আমরা চাই না। হিন্দু-মুসলিম সবাই আমরা একসঙ্গে থাকি। সবাইকে বলবো, শান্তিতে থাকুন।

শুক্রবার দুপুরে মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে এসেছিলেন আনোয়ার আলি। তিনি বলেন, গণ্ডগোলের জেরে এলাকার মানুষ সবাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কাজে যেতে পারছেন না। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। যদি আমাদের এলাকার কেউ গণ্ডগোল করে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কোনও কিছু হলেই গোটা মহল্লাকে কেন দায়ী করা হবে?

আমাদের মসজিদের পাশেই মন্দির রয়েছে। এত গণ্ডগোলের মধ্যেও ওখানে একটা ইটের টুকরো পড়তে দিইনি। অনেক হিন্দু পরিবার আছে। তারা কোনও দিন অসুবিধা বোধ করেননি।

জইনুল হক নামের একজন এলাকাবাসী বলেন, আমরা সবাই এখানে কষ্টে রয়েছি। আমাদের অসুবিধার কথা কেউ শুনতে চাইছে না। ছেলেমেয়েরা গত দু’মাস ধরে স্কুলে যেতে পারছে না।

মেয়েরা বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না। এখানকার বেশিরভাগ লোক পাটকলে কাজ করেন। কাজে না গেলে খাবে কী? যা হওয়ার হয়েছে। এখনে আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই।

পেশায় জুট মিলের শ্রমিক আকরাম বলেন, ‘বিজেপি’র লোক বলছে, তৃণমূল গণ্ডগোল করছে। তৃণমূল অভিযোগ করছে, বিজেপি গণ্ডগোল করছে। তার ফল ভুগতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে। দু’পক্ষই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মিটমাট করুক। আমরা শুধু চাইব, এলাকায় শান্তি ফিরে আসুক।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২২ জুন ২০১৯, ১২:৩৭ অপরাহ্ণ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ