মুক্তমত

কি অদ্ভুত আপনাদের ‘জঙ্গি সনাক্তকরণ পদ্ধতি : তুহিন মালিক

ড. তুহিন মালিক: ‘দাড়ি রাখা কিংবা টাখনুর উপরে কাপড় পরা যদি জঙ্গিবাদের লক্ষণ’ হয়, তাহলে তো ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে সবাই আমরা জঙ্গি! গতকাল দেশের প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে জঙ্গি সনাক্তকরণের ২৩টি উপায় জানিয়ে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যায়বহুল বিজ্ঞাপনে জঙ্গি চেনার অন্যতম কয়েকটি বৈশিষ্ট্যে বলা হয়েছে—

ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুনা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া, ধর্মীয় উপদেশমূলক কথাবার্তা বলা, অতিমাত্রায় ধর্ম চর্চার প্রতি ঝোঁকা, দাড়ি রাখা ও টাখনুর উপর কাপড় পরিধান করা, সুনির্দিষ্ট কিছু মসজিদে নামাজ পড়া, বিভিন্ন মুসলিম দেশে চলমান মুসলিম নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন থাকা…. ইত্যাদি। জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার ৪টি ধাপের কথা বলা হয়েছে এই বিজ্ঞাপনে। এর প্রথম ধাপেই রয়েছে-তাওহীদ, শিরক, বেদাত, ঈমান, আকীদা, সালাত, ইসলামের মূলনীতি, দাওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা।

আশ্চর্য, এর সবই তো আমরা মুসলিমের মধ্যে বিদ্যমান। মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুনা করে, ধর্মীয় উপদেশমূলক কথাবার্তা বলে, ধর্ম চর্চার প্রতি ঝুঁকে এবং এমনকি বিভিন্ন মুসলিম দেশে চলমান মুসলিম নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে, বেশীমাত্রায় কিংবা অস্বাভাবিকভাবেই। তাওহীদ, শিরক, বেদাত, ঈমান, আকীদা, সালাত, ইসলামের মূলনীতি ইত্যাদি নিয়ে চিন্তাভাবনা, পড়াশুনা ও প্রতিপালনের চেষ্টাও করে। তাহলে এরা সবাই কি জঙ্গি?

ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেও উগ্রবাদী কর্মকান্ড বিদ্যমান থাকলেও শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মকেই কেন জঙ্গি মতাদর্শের উৎস হিসেবে দেখালেন? জঙ্গি সনাক্তকরণের ২৩টি তালিকা কি শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের জন্যই বরাদ্দকৃত? ইসলাম ধর্মের আবশ্যকীয় ও আনুসাঙ্গিক বিধানাবলীকে জঙ্গিবাদের কারণ বলে চিহ্নিত করতে চাচ্ছেন কোন যুক্তিতে? আপনারা নিজেরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দাবি করছেন। অথচ আপনারা নিজেরাই আবার সাম্প্রদায়িকতার বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেশের চলমান শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাচ্ছেন!

আল্লাহর সাথে শিরকবিহীন শুদ্ধ তাওহীদের শিক্ষা ও চর্চাকে জঙ্গিবাদের কারন বলে চিহ্নিত করার মত চরমতম ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস কোথায় পেলেন? ‘জঙ্গী সনাক্তকরণ পদ্ধতি নির্ধারণের’ এখতিয়ার আপনাদেরকে কে দিয়েছে? এটা রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। আপনাদের নয়। আজ আপনারা আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে যাদেরকে জঙ্গি নির্ধারণ করছেন, কাল এরকম আরো অনেকে করতে থাকলে অচিরেই এটা একটি ব্যর্থ ও গোলযোগপূর্ণ রাষ্ট্রে রূপ নিবে!

এভাবে একটি বেসরকারী সংগঠনের জঙ্গী সনাক্তকরণ পদ্ধতি নির্ধারণ করে পাবলিকলি প্রচার করা বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। এটা সুস্পষ্ট ধর্মীয় অবমাননার শামিল। যা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ। যা আইসিটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ দেশের বিদ্যমান আইনেও গুরুত্বর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সম্প্রতি হলি আর্টিসানের ঘটনা নিয়ে মোস্তাফা সরওয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ নামের একটি চলচ্চিত্রের প্রমোতে অভিনেতা জাহিদ হাসান ও তিশার শুধুমাত্র একটি হিজাব-দাড়ি সম্বলিত ছবি থাকার কারনে বাংলাদেশে এ ছবিটি সেন্সর পায়নি। জঙ্গির মত স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়ে দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন নাকি জড়িত। আর এটাই যদি সরকারের পলিসি হয়, তাহলে দেশের প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে জঙ্গি সনাক্তকরণের এমন স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলো কোন শক্তিতে?

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৪ মে ২০১৯, ৪:৪২ অপরাহ্ণ ৪:৪২ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ