ভূমধ্যসাগরের তিউনিশিয়া উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হাফেজ মো. শামীম আহমদের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার উপজেলার বাদে ভূকশিমুল গ্রামে চলছে শোক।
নৌকাডুবির পর বেঁচে যাওয়া সহযাত্রী তালতো ভাই মাছুমের সঙ্গে একটি বয়া ধরে শামীম দীর্ঘ প্রায় ৫ ঘণ্টা সাঁতার কাটেন। একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে বয়া থেকে হাত ফঁসকে যায় শামীমসহ আরো কয়েকজনের। মাছুমসহ আরো কয়েকজন বেঁচে গেলেও নৌকায় থাকা অনেকেই মারা গেছেন। নিকট আত্মীয়রা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন প্রিয়জনের লাশ কখন বাড়িতে আসবে।
তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় ৭৫ জন অভিবাসন প্রত্যাশীর মধ্যে শামীমও রয়েছেন। ওই নৌকায় ৫১ জন বাংলাদেশির মধ্যে ১৪ জন জীবিত উদ্ধার হলেও ৩৭ জন এখনো নিখোঁজ। ওই দুর্ঘটনায় শামীম নিখোঁজ রয়েছেন।
হাফেজ মো. শামীম আহমদের মা রাজনা বেগমের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। এখন বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন পুত্রশোকে। ৭ মে মায়ের কাছে ফোন দিয়ে শামীম জানান, পরের দিন ৮ মে ফ্রান্সের উদ্দেশে রওনা দেবেন। এরপর থেকে শামীমের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।আত্মীয়স্বজনরা ঘটনার পর থেকে বাদে ভূকশিমুলের বাড়িতে আসছেন দেখা করে একটু সান্ত্বনা দিতে।
নিহত শামীমের বড় ভাই হাজি আবু সাইদ বাচ্চু জানান, শামীম ছিলেন কোরআনে হাফেজ। সিলেট গোটাটিকরের একটি মাদ্রাসায় পড়ছিলেন। গত বছর তাঁর দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। তাঁর বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে ঘরের কারো জানা ছিল না।
পরিবারের কাউকে না জানিয়েই শামীম লিবিয়ায় চলে যান। লিবিয়া থেকে আপন তালতো ভাই সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরীফগঞ্জ কদুপুরের মাছুম ও মারুফসহ আরো বেশ কয়েকজন নৌকায় উঠেন ইতালি হয়ে ফ্রান্সে বসবাসকারী শামীমের দুই ভাই সেলিম ও সুমনের কাছে যাওয়ার জন্য।
ভূমধ্যসাগরের তিউনিশিয়া উপকূলে নৌকাডুবি হলে সাগরের পানিতে এ তিনজন একটি বয়ায় দীর্ঘ প্রায় ৫ ঘণ্টা সাঁতার কাটেন। একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে বয়া থেকে হাত ফঁসকে শামীম ও তালতো ভাই মারুফ সাগরে নিখোঁজ হন। মাছুমসহ আরো কয়েকজন বেঁচে যান। বেঁচে যাওয়া মাছুম ও নিখোঁজ মারুফ দুই ভাই।
সাত ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামীম ছিল সবার ছোট। কোরআনের হাফেজ শামীম গত কয়েক বছর রমজানে তারাবির নামাজের ইমামতি করেন বাড়ির কাছে বায়তুছ সালাম জামে মসজিদে।
শামীমের এক ভাই সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ছাড়া সবাই থাকেন প্রবাসে। দুই ভাই ফান্স আর তিন ভাই থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে। বড় ভাই হাজি আবু সাইদ বাচ্চু সৌদি আরবে থাকলেও এখন আছেন দেশে।
বাদে ভূকশিমুল গ্রামের বশির উদ্দিন, রফিক মিয়াসহ অনেকেই জানান, শান্ত ও মার্জিত স্বভাবের সদা হাস্যোজ্জ্বল শামীম তাদের গ্রামের বায়তুস সালাম জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি তাঁর বাড়ির পাশের ওই মসজিদটিতে রমজান মাসে তারাবির নামাজের ইমামতি করতেন। তাঁরা জানান, শামীমের এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে গ্রামবাসী শোকাহত। তাঁর এ মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যদের মতো এলাকায়ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁরাও শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
শামীমের সাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে ভূকশিমুল মোহাম্মদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আফজল হোসেন ও হাফেজ রেজাউল করিম জানান, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসার প্রথমদিকের ব্যাচের ছাত্র ছিলেন হাফেজ আহসান হাবীব শামীম।
২০১৩ সালে তাঁর হিফজ শেষ হলে অনেক মসজিদেই তারাবির নামাজ বেশ সুনামের সঙ্গে পড়িয়েছেন। হাফেজি শেষ হওয়ার পর শামীম সিলেটের একটি আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। নম্র ও ভদ্র স্বভাবের তাদের এই প্রিয় ছাত্রের এমন দুর্ঘটনায় তাঁরা শোকে বিহ্বল। ওই শিক্ষকরা জানালেন, নিখোঁজের খবর আসার পর থেকেই তাঁরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোরআন খতম শেষে দোয়া করছেন।
শামীমের বড় ভাইয়ের ছেলে কামরান হোসেন ও মেয়ে ফারজানা ইসলাম দিপা কেঁদে কেঁদে বলে, ছোট চাচ্চু তাঁদের খুবই প্রিয় ছিলেন। প্রায় তিন মাস আগে বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে বের হন। তিনি এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পড়বেন তা তারা কল্পনাও করতে পারছে না।
নাহিদ কেঁদে কেঁদে বলে, ‘আমার প্রিয় বাইসাইকেলটি বিকেল বেলায় আর কখনই চালাবেন না চাচ্চু- এই বাস্তবতাটি মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’ শামীমের পরিবার অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন লাশ বাড়িতে আসবে। তারা সরকারের কাছে দাবি করছে, দ্রুত যেন লাশ দেশে আনা হয়।
এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৪ মে ২০১৯, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ
মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…
ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…