আর একদিন পরই পূর্ণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর উপক্ষেপণের এক বছর৷ এই এক বছরে কি পেলো বাংলাদেশ? বাণিজ্যিক যাত্রা কতটুকু সফল হয়েছে? বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)-এর চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, ‘‘আসলে স্যাটেলাইট এক বছর হলেও আমরা বুঝে পেয়েছি গত নভেম্বরে, অর্থাৎ ৬ মাস আগে৷ এর আগে এটি ছিল ফ্রান্সের থ্যালাস এলিনিয়া স্পেসের নিয়ন্ত্রণে৷ তারা গাজীপুরে গ্রাউন্ড স্টেশনে আমাদের ঢুকতেই দেয়নি৷ আমরা পুরো নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার পর বেশ কিছু চুক্তি ইতিমধ্যে করেছি৷’’
টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর যাত্রার শুরুতেই বাংলাদেশের সবগুলো টিভি চ্যানেল এই স্যাটেলাইট থেকে সেবা নেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি করেছে৷ রবিবার থেকে তারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে সম্প্রচার শুরু করবে৷ এ ব্যাপারে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে৷
আগামী ১৯ মে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান৷ ওই দিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বহুমুখী ব্যবহারের উপর কয়েকটি প্রদর্শনী হবে৷ এর মধ্যে রয়েছে, অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেনে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, সব টিভি চ্যানেলকে স্যাটেলাইটের আওতায় আনা এবং ভাসানচরে (যেখানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কথা রয়েছে) ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হবে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই৷ এছাড়া স্যাটেলাইট থেকে কেবল টিভি দেখার সেবা ‘ডাইরেক্ট টু হোম’ বা ডিটিএইচ সেবাও নিশ্চিত করা হবে৷’’
টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে সেবা নিলেও কারিগরি কিছু সমস্যা থাকছেই৷ সময় টেলিভিশনের সম্পাদক আহমেদ জুবায়ের বলেন, ‘‘আগে যেমন আমরা অফিসের উপরে যে ডিশ আছে সেটা দিয়েই স্যাটেলাইটে আমাদের ডকুমেন্টগুলো পাঠিয়ে দিতাম, এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সি ব্যান্ডের না হওয়ার কারণে বেশ কিছু সমস্যা পোহাতে হবে৷
প্রথমত, আমাদের অফিসের উপরে যে আর্থ স্টেশন আছে সেটা দিয়ে আমরা চালাতে পারব না৷ এর জন্য প্রতিটি স্টেশনকে এক কোটি টাকা করে খরচ করতে হবে৷ যদিও স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ আমাদের আর্থ স্টেশন থেকে ক্যাবল দিয়ে সংযোগ নিয়েছে গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশনে৷ সেখান থেকে তারা স্যাটেলাইটে পাঠাচ্ছে৷ এভাবেই সবগুলো টিভি চ্যানেল থেকে ডকুমেন্ট যাচ্ছে৷ এতে ক্যাবল কাটা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ অবশ্য বিকল্প তিনটি লাইন করা হয়েছে, একটা কাটা গেলে যাতে অন্যটা দিয়ে কাজ চালানো যায়৷
এতে কি খরচ বাড়ছে, না কমছে? জবাবে জনাব জুবায়ের বলেন, ‘‘এখনও টাকা-পয়সার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি৷ তারা বলেছে, প্রথম তিন মাস ফ্রি৷ এরপর ঠিকমতো হলে আমাদের সঙ্গে চুক্তি হবে৷ আমরা প্রতিটি টিভি চ্যানেল প্রতি মাসে ২২ থেকে ২৪ হাজার ডলার দেই৷ এখন সেই টাকা আর বিদেশে পাঠাতে হবে না৷ এটা কিন্তু ভালো দিক৷ তবে অবশ্যই ঠিকভাবে কাজটা হওয়া দরকার৷ এখন দেখা যাক কী হয়৷’’
২০১৮ সালের ১১ মে রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স৷ আগামী ১৫ বছরের জন্য মহাকাশের থাকবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১৷
বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘‘ব্যাংকের এটিএম বুথ আর অনলাইনে অর্থ লেনদেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আওতায় আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
আগামী ১৯ মে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ এই স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ ব্যাবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যে এর পরীক্ষামূলক কাজও শেষ হয়েছে৷ এরপর পর্যায়ক্রমে সবগুলো এটিএম বুথ কোনো ধরনের ব্রড ব্যান্ড সংযোগ ছাড়াই এই স্যাটেলাইটের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ড. শাহজাহান মাহমুদ৷ তিনি বলেন, এতে সাইবার অপরাধ কমে যাবে৷
ড. শাহজাহান মাহমুদ আরো বলেন, ‘‘ফিলিপাইন্স ও নেপাল ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কেনার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা চালু সহজ হবে৷ ইতিমধ্যে সে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে৷ হাতিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়েছে৷
এর ধারাবাহিকতায় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হলে সেখানেও ইন্টারনেট যোগাযোগসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কয়েকটি জরুরি সেবা নিশ্চিত হবে৷ এর মধ্যে আছে টেলি মেডিসিন এবং টেলি এডুকেশন সেবা৷ ঢাকায় বসেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন৷ একইভাবে ঢাকা থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাও সম্ভব হবে৷’’
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ টিআইএম নুরুল কবির বলেন, ‘‘এই স্যাটেলাইট উৎপেক্ষপণের ফলে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় চলে গেছে৷ পাশাপাশি দেশে স্পেস সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হয়েছে৷ আগে তো এটা নিয়ে পড়ার কথা আমাদের ভাবনাতেই ছিল না৷
এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন গাজীপুরের দায়িত্ব নিয়েছে আমাদের ছেলে-মেয়েরাই৷ এটা অবশ্যই আশার কথা৷ পাশাপাশি আমরা দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা ভাবছি৷ সেটা করতে হলে অবশ্যই প্রথমটির বাণিজ্যিক যাত্রা সফল হতে হবে৷ সেক্ষেত্রে আরো বেশি তৎপর হতে হবে৷ প্রচারণাটা চালাতে হবে৷ এখানে একটু বেশি মনোযোগ দরকার৷’’
এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার সঙ্গে মর্যাদার আসনে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ৷ ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়৷
এর জন্য ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়৷ এর মধ্যে সরকারি অর্থ ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা আর বিদেশি অর্থায়ন ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যদিও শেষ পর্যন্ত স্যাটেলাইট উড়াতে সর্বমোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা৷ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মিত হয়েছে ফ্রান্সের থ্যালাস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে৷-ডয়চে ভেলে
এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১১ মে ২০১৯, ৮:৪৭ অপরাহ্ণ ৮:৪৭ অপরাহ্ণ
মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…
ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…