আবহাওয়া

সামনে নির্বাচন, কীভাবে সনাক্ত করবেন ‘ভুয়া খবর’?

মুঠোফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে এখন নতুন শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি। যেকোনো আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বস্তুনিষ্ঠ খবরের মাঝে দুই একটা ভুয়া খবর ভাইরাল হওয়া এখন আর নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমগুলোয় এই ভুয়া খবর ঠেকানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার ঢাকার হোটেল আমারিতে “বাংলাদেশের নির্বাচনে ভুয়া খবর প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে বি বি সি বাংলা।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব ঠেকাতে সরকার এরইমধ্যে ‘গুজব শনাক্তকরণ সেল’ গঠন করলেও ভুয়া খবর ঠেকাতে শুধু আইনের কড়াকড়ি যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এক্ষেত্রে তারা সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণের ওপর জোর দেন। নির্বাচনে ভুয়া সংবাদ প্রতিরোধের বিষয়ে ওই সেমিনারে গণমাধ্যম-কর্মীদের পাশাপাশি এতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের শিক্ষার্থী জয়া মৈত্র বলেন, “স্টুডেন্টদের মধ্যে ফেসবুক থেকে নিউজ কালেক্ট করার প্রবণতা বেশি। আর সেখানেই ফেক নিউজ বেশি হয়ে থাকে। আজকে জানতে পারলাম যে কিভাবে ফেক নিউজ আইডেন্টিফাই করবো। এগুলো কারা ছড়াচ্ছে, কেন ছড়াচ্ছে সেগুলো বুঝতে পারলাম।”

ভুয়া খবর সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ফ্যাক্ট চেক বা খবরের সত্যতা যাচাইয়ের গুরুত্ব উপলব্ধ করা জরুরি বলে মনে করেন সাংবাদিক নওয়াজ ফারিন অন্তরা।

তিনি বলেন, “আমরা প্রায়ই খবরের বিভিন্ন তথ্য ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে নেই, অন্য সাংবাদিকদের থেকে নেই। সেটা কতোটা রিলায়বল সেটা ভেবে দেখা উচিত। এক্ষেত্রে ফ্যাক্ট চেক করাটাকে আরও গুরুত্ব দেব।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত: সেমিনারে অংশ নেন মাহফুজ আনাম, নাগরিক টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, জুয়েল এবং মানবাধিকারকর্মী তাহমিনা রহমান। কিভাবে ভুয়া খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এক্ষেত্রে সচেতনতার জায়গাগুলো কোথায় এ ব্যাপারে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেদের মতামত দেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন, সাংবাদিকদের সচেতন ভূমিকার ওপর জোর দেন। “ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রবণতা এখন এতোটাই বেড়ে গেছে যে আমরা আমাদের বিশ্বাসের জায়গাটা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা এখন সত্য বা বস্তুনিষ্ঠটার চাইতে গুজব বা আবেগ-তাড়িত খবরগুলোর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছি।”

“এখন মানুষের চেহারা কণ্ঠ সবই বদলে দেয়ার মতো প্রযুক্তি এসেছে। এতে মিথ্যা থেকে সত্যটা আলাদা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক বলিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন। ”

গীতি আরা নাসরিনের সঙ্গে একমত পোষণ করে মাহফুজ আনাম, প্রত্যেককে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় রাখার তাগিদ দিয়েছেন। এ অবস্থায় খবরের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমের পরিবর্তে মূলধারার বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যমের প্রতি নির্ভরশীল হওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।

মাহফুজ আনাম বলেন, “আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার একটা বিরাট উপায় হয়েছে এই সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম। তাই এটার ভাল দিকটাকে ধরে রাখতে হবে। আবার এটাও সত্যি যে কেউ যখন স্বাধীনতা পায়, কখন সেই স্বাধীনতা অপব্যবহারের একটা প্রবণতা তৈরি হয়।”

দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন মত প্রকাশের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “কোন খবর পাওয়ার পর সেটার নীচে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে বা শেয়ার করার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে।”

ভুয়া সংবাদ ছড়ানো ঠেকাতে যে আইন রয়েছে, সেটা নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেটা দেখাও জরুরি বলে মনে করেন মাহফুজ আনাম। এসব ক্ষেত্রে কোন সংবাদ আর কোনটা মতামত সেই পার্থক্য করাটা জরুরি বলে মত দেন নাগরিক টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক।

তিনি বলেন, “আমরা এমন একটা সময়ে বসবাস করছি যেখানে সত্যকে ঝাপসা করে দেয়া হয়। কিন্তু সত্য সত্যই। এটার কোন কম বা বেশি হতে পারেনা। মিথ্যা যতো দ্রুতই ছড়াক না কেন। সত্যই পারে সেই ঢল ঠেকাতে।”

“তাছাড়া আমাদের মগজও দুষিত হয়ে গেছে। আমরা সেটাই দেখি, সেটাই পড়ি যেটা আমরা দেখতে চাই, পড়তে চাই, শুনতে চাই। তাই আমি কি পড়বো, কাদের বন্ধু বানাবো, কাদের কথা বিশ্বাস করবো সেটার ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা সবচেয়ে জরুরি।” এদিকে ভুয়া খবর ছড়ানোর বিরূপ প্রভাবের কথা তুলে ধরেন ফখরুদ্দিন জুয়েল।

তিনি বলেন, “ফেক নিউজের কারণে কেউ রাজনৈতিকভাবে, কেউ সামাজিকভাবে আবার কেউ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আগে ফেক নিউজ ছড়ানোটা অনেক জটিল ও ব্যয়বহুল ছিল এখন ফ্রি সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এটা কোন ব্যাপারই না। অনেকে এসব নিউজ ভাইরাল করে আয়ও করছে। তাই সচেতনতাটাই সবচেয়ে জরুরি।” ভুয়া খবর ছড়ানো ঠেকাতে গণমাধ্যম বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মী তাহমিনা রহমান।

“গণমাধ্যম যদি কোন খবর প্রকাশ বা প্রচারের আগে তাদের তথ্যগুলো বার বার যাচাই করে। বস্তুনিষ্ঠতার ক্ষেত্রে আপোষহীন থাকে তাহলে ফেক নিউজ বাজারে টিকবে না। কারণ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের কাছেই ফেক নিউজের পরাজয় হয়। ”

ভুয়া খবর কি এবং কিভাবে ছড়ায়? এছাড়া সেমিনারের শুরুতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া খবর এবং সেগুলো নিয়ে আলোচনা এবং কিভাবে এ ধরণের খবর সনাক্ত করা যায় বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন সময়ের বেশ কয়েকটি ভাইরাল খবরের ওপর আলোকপাত করা হয়। যার অনেক তথ্যই অতিরঞ্জিত হয়ে ভাইরাল হয়েছিল।

এরমধ্যে রয়েছে, রামুর বৌদ্ধ মঠে ভাঙচুর, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে হতাহতের সংখ্যা, নাসির নগরের হিন্দু মন্দিরে হামলা এবং সবশেষ ঝিগাতলায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে হত্যা ও ধর্ষণের গুজব ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাগুলো। মূলত তিনটি উপায়ে এই ভুয়া খবরগুলো ছড়িয়ে থাকে। ১. ফেসবুক ২. ইউটিউব ৩. ভুয়া ওয়েবসাইট ৪. গণমাধ্যম।

আর এসব মাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া খবরগুলো ইউজারদের লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের কারণে ভাইরাল হয়ে যায়। আবার অনেক গণমাধ্যম এসব সামাজিক মাধ্যমের তথ্য যাচাই বাছাই না করেই খবর প্রকাশ করে।

ভুয়া খবর ছড়ানোর কারণ: ভুয়া খবর ছড়ি পড়ার পেছনে তিনটি কারণকে তুলে ধরা হয়। ১. বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কোণঠাসা করা। ২. ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া। ৩. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল।

ভুয়া খবর সনাক্তের উপায়: পাঁচট উপায়ে সনাক্ত করা সম্ভব ভুয়া খবর। ১. কমন-সেন্স ব্যবহার করুন। ২. খবরের কন্টেন্ট বা তথ্য নিয়ে সন্দেহ হলে, প্রতিটি যাচাই করুন। ৩. অনলাইনে সার্চ দিয়ে যাচাই বাছাই করে দেখতে পারেন। ৩. খবরের তথ্যসূত্র বা ছবি/ভিডিওর উৎস বের করুন। ৪. খবরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ