অর্থনীতি

মাশরাফিকেও তো একদিন আমিনুলের ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে, তাই না?

ছবির একজন মাশরাফি বিন মর্তুজা, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা। অন্যজনকেও হয়তো অনেকেই চেনেন, যারা চেনেন না, তাদের জন্যে জানিয়ে রাখি, এই ভদ্রলোকও একজন অধিনায়ক।

ফুটবল খেলতেন, ছিলেন গোলবারের নিচে বিশ্বস্ত প্রহরী। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা গোলকিপার কে, এই প্রশ্নের জবাবে বেশিরভাগের উত্তর একটাই হবে- আমিনুল। তার খেলা যারা দেখেছেন, তাদের অনেকেই একবাক্যে স্বীকার করে নিতেন, দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক ছিলেন আমিনুল। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে সাফ ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন তিনি, তাকে বলা হতো ‘দ্য লাস্ট সুপারস্টার অফ বাংলাদেশ ফুটবল’। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন প্রায় তেরো বছর ধরে, সফলতার সঙ্গেই সামলেছিলেন গোলবার।

বাংলাদেশের সাবেক কোচ জর্জ কোটান বলেছিলেন, তার দেখা সেরা গোলরক্ষক আমিনুল। ২০০৪ সালে ইংলিশ লীগের ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডে ট্রায়ালে ডাক পেয়েছিলেন আমিনুল, কিন্ত শেষমেশ ব্যাটে বলে মেলেনি ঠিকঠাক। ক্যারিয়ারের লম্বা সময় ধরে মোহামেডানে খেলেছেন, গোলবার সামলেছেন আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা বা ব্রাদার্স ইউনিয়নের মতো ক্লাবগুলোরও। জাতীয় দলের হয়ে তার পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত, ২০০৩ সাফের ফাইনালে মালদ্বীপের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে পেনাল্টি কিক ঠেকিয়ে নায়ক হয়েছিলেন আমিনুল।

ভূমিকা বেশি হয়ে যাচ্ছে, উপরের ছবিটার রহস্য ব্যাখ্যা করা যাক এখন। ২০১০ সালে ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। খেলার মাঠ ছাড়ার পরে আমিনুল এসেছিলেন রাজনীতির মাঠে, যোগ দিয়েছিলেন বিএনপিতে। দলটার কেন্দ্রীয় কমিটিতে ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন আমিনুল। মাশরাফির সাথে আমিনুলের মিলটা এখানেই। দুজনেই জাতীয় দলের হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে আমিনুলের ভাগ্যটা খুব বেশি সুপ্রসন্ন ছিল না।

গত বছরের ডিসেম্বরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে গিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আদালত থেকে তার ফেরার পথে দলটির নেতাকর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। তাদের সরিয়ে দিতে গেলে বঙ্গবাজার এলাকায় তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। আমিনুল হকও তখন সেখানে ছিলেন, ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করেছিল পুলিশ।

তার বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল পোড়ানো এবং ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলা করা হয়েছিল, পুলিশ তার দশদিনের রিমান্ডও চেয়েছিল। দীর্ঘ চৌত্রিশ দিন জেল খাটার পরে মুক্তি পেয়েছিলেন আমিনুল। মাশরাফির মতো আমিনুলও দেশের হয়ে খেলেছেন, বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। খেলোয়াড়ি জীবনে আমিনুলের ইমেজ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন কখনও, বরং ঝামেলা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করতেন বলেই জানি।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। কাল যদি দেশের রাজনৈতিক পটভূমি কোন কারণে পরিবর্তিত হয়, মাশরাফিও নিশ্চয়ই এমন কোন পরিণতির সম্মুখীন হতে পারেন। এই গোটা কালচারটার পরিবর্তন দরকার আসলে। মাশরাফি আর আমিনুলকে এক কাতারে রাখছি না, তবে আমার মনে হয়, আমিনুলেরও খানিকটা সম্মান প্রাপ্য। দেশকে তো তিনিও কিছু না কিছু দিয়েছেন। ফুটবলটা আমাদের দেশে ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় নয়, সফলতাও নেই বলার মতো, তাই হয়তো তিনি সবার ক্যাপ্টেন হয়ে উঠতে পারেননি।

কিন্ত বিরোধী দল করার অপরাধে জাতীয় দলের একজন অধিনায়ক জেল খাটবেন, মামলার ঝামেলা মাথায় নিয়ে তাকে ঘুরতে হবে, এটা ভাবতে খারাপ লাগে। এই ঘটনাটা তো মাশরাফির সাথেও ঘটতে পারতো, কিংবা হয়তো কখনও ঘটতেও পারে। তখন আমাদের কেমন লাগবে? ক্রীড়াক্ষেত্রে আমিনুলের অবদানটা হয়তো মাশরাফির পর্যায়ে নয়, গ্রহনযোগ্যতার বিচারেও মাশরাফি অনেক বেশি এগিয়ে থাকবেন। কিন্ত দুজনেই তো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, মাশরাফি তো এখনও করছেন।

রাষ্ট্র তো একজনের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করতে পারে না। নাগরিক হিসেবে আমি এমন একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি চাই, যেখানে মাশরাফি আর আমিনুল, দুজনেই সম্মানের সাথে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করতে পারবেন। অপরাধে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ না করলে ‘অজ্ঞাতনামা’ দুস্কৃতিকারী হিসেবে যেখানে কাউকেই জেলে যেতে হবে না, মামলার খড়্গ মাথায় নিয়ে জীবন কাটাতে হবে না।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ৫:৫২ অপরাহ্ণ ৫:৫২ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ