রাজধানীর শ্যামপুরের জুরাইনের বাঁশপট্টি এলাকায় দুই বছর আগে থেকে নিহত শেখ ইসলাম পাভেলের ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল তুহিন ওরফে বাঘা তুহিন। ফুফুর বাড়ির ছাদে উঠে গভীর রাত পর্যন্ত ফুফাতো ভাইদের সঙ্গে নিয়ে আড্ডা দিত সে।
পাভেলদের বাসার জানালা ও বারান্দায় টর্চলাইটের আলো মেরে বিরক্ত করত। পাভেলের বোনের গায়েও টর্চলাইটের আলো মারত সে। এ নিয়ে পাভেল ও তুহিনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে কয়েক দফা।
‘স্থানীয়ভাবে তিনবার সালিশ বৈঠকে বসেও তুহিনকে দমানো যায়নি। অবশেষে বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তুহিন ও তার ফুফাতো ভাইদের হাতে প্রাণ দিতে হলো পাভেলকে (২২)।
নিহত পাভেল ও অভিযুক্তদের বাড়ি শ্যামপুরের জুরাইনের মাজারগেট এলাকায়। এজাহারভুক্ত আসামিরা একে অপরের আত্মীয় এবং স্থানীয় অধিবাসী। তুহিন ও এরফান আপন দুই ভাই। এরফান বড়, তুহিন ছোট। তাদের বাবা নাজিম পরিবহন শ্রমিক।
মাসুম, শাহিন ও রাব্বি তুহিন-এরফানের আপন ফুফাতো ভাই। এদের মধ্যে আবার শাহিন-মাসুম দুই ভাই। তাদের বাবার নাম আসাদুজ্জামান। রাব্বি তাদের খালাতো ভাই। রাব্বি এবার জেএসসি পরীক্ষার্থী। সে তুহিনদের বাসায় থাকে।
গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর শ্যামপুরের জুরাইনের বাঁশপট্টি এলাকায় তুহিন, এরফান, রাব্বি ও মাসুমসহ ৫-৬ জন পাভেলকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ৯টায় মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মনির হোসেন বাদী হয়ে তুহিন, এরফান, মাসুম, শাহীন, রাব্বি ও তুহিনের বাবা নাজিমকে আসামি করে শ্যামপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় ৭-৮ জনকে।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আসামিদের একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জানতে চাইলে শ্যামপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার পরপরই আসামিরা পালিয়েছে। তাদের ধরতে পুলিশ অভিযানে রয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি।
নিহত পাভেলের খালু হারুন মিয়া বলেন, দুই বছর ধরে পাভেলের বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছে তুহিন। এ নিয়ে তিনবার সালিশ করা হয়েছে। প্রত্যেক সালিশে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে তুহিন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আর উত্ত্যক্ত করবে না। কিন্তু এর পরও থামেনি সে।
এ নিয়ে কয়েক মাস আগেও পাভেলের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। সে সময় পাভেলকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল তুহিন ও তার ফুফাতো ভাইরা। এত কিছুর পরও পুলিশকে না জানানোর কারণ জানতে চাইলে হারুন বলেন, একই এলাকার হওয়ায় থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি তারা।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন জুরাইনের মাজারগেট ও বাঁশপট্টি এলাকার একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, আপন ভাই ও ফুফাতো ভাইদের নিয়ে নিজস্ব গ্যাং গ্রুপ গড়ে তোলে তুহিন। ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ছিল সে।
পথেঘাটে তার সমবয়সী এবং বয়সে ছোটদের মারধর করত সে। আনুমানিক ছয় বছর আগে রাস্তায় মারামারির অভিযোগে তাকে ধরতে এলে সে এক পুলিশ সদস্যের হাতে কামড় দিয়ে পালিয়ে যায়।
এর পর এলাকাবাসী তাকে 'বাঘা তুহিন' নামে ডাকতে শুরু করে। পরে তাকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে জুরাইন রেলগেট এলাকায় আল মদিনা বেকারির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বছর দুয়েক আগে ওই কাজ ছেড়ে দেয় সে।
এলাকায় সিনিয়র-জুনিয়র নিয়েও প্রায়ই নানাজনের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হতো। নিজেকে সিনিয়র দাবি করলেও বয়সে সে পাভেলের বোনেরও ছোট। এর পরও সে পাভেলের অনার্স পড়ূয়া বোনকে উত্ত্যক্ত করত বিভিন্ন সময়।
আশপাশের কয়েকজন ভাড়াটে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় প্রতিদিন রাত সাড়ে ৮টা বা ৯টার দিকে তুহিন মাসুমদের বাড়ির ছাদে উঠত। তার সঙ্গে কখনও মাসুম, কখনও রাব্বি, কখনও বা অন্য কেউ থাকত।
রাত ২টা বা আড়াইটা পর্যন্ত তারা ছাদে আড্ডা দিত এবং সেখান থেকে পাভেলদের ৫ তলার ফ্ল্যাটে এবং তার বোনকে লক্ষ্য করে টর্চলাইটের আলো মারত। দিনের বেলায়ও ছাদ থেকে পাভেলের বোনকে উত্ত্যক্ত করত সে।
নাম ধরে অশ্নীল কথাবার্তাও বলত তারা। তুহিন দুরবিন দিয়ে পাভেলদের বাসা পর্যবেক্ষণ করত। বিষয়টি একাধিকবার তুহিন ও মাসুমের পরিবারকে পাভেলরা জানিয়েছে। এর পরও উত্ত্যক্ত করা বন্ধ করেনি সে। শনিবারের আগের দিনও পাভেলের বোনকে উত্ত্যক্ত করে তুহিন।
শনিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বাঁশপট্টি এলাকায় তুহিনের সঙ্গে দেখা হয় পাভেলের। এ সময় পাভেল তার বোনকে উত্ত্যক্ত করার কারণ জানতে চান তুহিনের কাছে। একপর্যায়ে তুহিনের গালে থাপ্পড় মারেন তিনি।
তুহিন সেখান থেকে চলে যায়। তবে ১০-১৫ মিনিট পর সে, এরফান, রাব্বি, মাসুম ও শাহিনসহ ৫-৬ জনকে সঙ্গে করে এসে পাভেলকে ঘিরে ধরে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে তারা।
তুহিনদের বাসা থেকে নিহত পাভেলদের বাসার দূরত্ব আনুমানিক একশ' গজ। তবে উভয়ের বাসায় যাওয়ার গলি আলাদা। তুহিনের বাসা থেকে পাভেলদের বাসার মাঝখানে কয়েকটি বাড়ি। তাই ফুফাতো ভাই শাহিন ও মাসুমদের তিন তলা বাড়ির ছাদে উঠে আড্ডা দিত সে। কারণ সেখান থেকে পাভেলদের বাসা কাছাকাছি।
এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ৬ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ
মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…
ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…