চাকরি

সংলাপ ব্যর্থ হলে অসহযোগ?

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে অনুষ্ঠেয় সংলাপকে ঘিরে সরগরম হয়ে আছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার সময় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সংলাপ থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নিশ্চয়তা আশা করা হচ্ছে। কিন্তু সংলাপের পাশাপাশি দেশের রাজনীতিতে ঘটে চলেছে একের পর এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা যা আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে।

সংলাপের ডামাডোলের মধ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট।

এর পরদিনই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার সাজা ৫ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। পরপর দু দিন দুটো মামলায় কারাদণ্ডের আদেশ আসায় খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার সম্ভাবনা এখন তিরোহিত।

এছাড়া দলীয় চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নিজেদের গঠনতন্ত্রের ৭ম ধারা বাতিল করে দুর্নীতিবাজদের দলের নেতৃত্বে থেকে নির্বাচন করার সুযোগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। কিন্তু একটি রিট মামলার রায়ে গতকাল বুধবার বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এই রায়ের ফলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা এক প্রকার শেষ হয়ে গেল। এখানেই শেষ নয়। আজ সংলাপে যাওয়ার দিনও কারান্তরীণ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ৬ ঘণ্টার অনশনও করেছে বিএনপি।

এছাড়া আজকে সংলাপের দিনটিতেই নির্বাচন কমিশনাররা নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে গেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, একথাও জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন।

এমন প্রেক্ষাপটে আজকের সংলাপের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসাকে একটি অবাস্তব স্বপ্ন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

দুই পক্ষ যদি সমন্বয় এবং ছাড় দেওয়ার মানসিকতার মাধ্যমে একটি জায়গায় আসতে পারে তাহলেই কেবল সমঝোতা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগের দিক থেকে সমন্বয় ও ছাড় দেওয়ার মানসিকতার প্রদর্শন না ঘটলে মাত্র একদিনের সংলাপে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ অত্যন্ত ব্যস্ত থাকবেন। আজ ১ নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে, পরদিন ২ নভেম্ভর বিকল্পধারার সঙ্গে এবং ৫ নভেম্বর জাপা নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট-ইউএনএর সঙ্গে সংলাপে বসবেন।

আর ৪ নভেম্বর ময়মনসিংহ সফরের কারণে ঢাকায় থাকবেন না তিনি। জানা গেছে, এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। তাই এই স্বল্পতম সময়ে তেমন কোনো জাদুকরি ফলাফল সংলাপ থেকে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সংলাপে যাই হোক না কেন আওয়ামী লীগের তিনটি ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এগুলো হলো বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি। কিন্তু এই তিনটি দাবিই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম দফার মধ্যে সংযুক্ত হয়েছে। একেও সংলাপ সফল হওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু নির্বাচনে যাওয়ার শর্তে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল সংসদ ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নিলেও নিতে পারে।

এমন অবস্থায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অনেকেরই ধারণা, যদি ঐক্যফ্রন্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ বা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি থেকে সরে না আসে তাহলে এই সংলাপ সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও সংলাপ সফল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন না।

সংলাপ সামনে রেখে গতকাল বুধবার বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আজ বৃহস্পতিবার অনশনের পরেও নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি নেতারা বৈঠকে বসেন। সেখান থেকে স্পষ্টভাবে তাঁরা বিএনপিকে আন্দোলনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, যদি সংলাপ ব্যর্থ হয় কিংবা রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের আগেই যদি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে তাহলে ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলনে না গেলেও বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, সেই আন্দোলনের কর্মসূচি হবে অত্যন্ত কঠোর।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সংলাপ হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত। আমরা আমাদের আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছে।

আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে আমরা পরপর দুইদিন কর্মসূচি দিয়েছি। সরকার বিএনপি নিধনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নির্বাচনে যেন বিএনপি অংশগ্রহণ করতে না পারে এবং খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে অপসারণ করার জন্যই সরকার একটি নীল নকশা রচনা করেছে।

কাজেই আমাদের জন্য আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপে যাই হোক না কেন আমরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’ বিএনপির এই নেতা আভাস দিয়েছেন, আবার দেশে হরতাল, অবরোধ, অসহযোগের মতো কর্মসূচিগুলো ফিরে আসতে পারে।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি হরতাল, অবরোধ, অসহযোগের মতো কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত মোটামুটি স্থির করে ফেলেছে এবং এ ব্যাপারে তৃণমূল পর্যায়ে নির্দেশনা পর্যন্ত দেওয়া হয়ে গেছে।

ঢাকার বাইরে বিএনপির অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে যেন তাঁদের ঢাকায় আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।বিএনপির অন্যতম নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে যদি তফসিল ঘোষণা করা হয় তাহলে আমরা ঐক্যফ্রন্ট বা অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করবো না।

বিএনপি কোনো দুর্বল দল নয়, বিএনপি অন্যের ওপর নির্ভরশীল নয়। কাজেই আমাদের যেটুকু শক্তি আছে সেটুকু শক্তি দিয়েই আমরা আন্দোলন করবো।’ বিএনপির কঠোর আন্দোলনের পরিকল্পনায় সংলাপের দিনেও পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছে দেশের জনগণ।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১ নভেম্বর ২০১৮, ৬:৩৭ অপরাহ্ণ ৬:৩৭ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ