দেশ ছেড়ে ২২ বছর কলকাতায় বসবাস। মাঝে বার কয়েক দেশে এসেছেন। যদিও অনেকেই মনে করছেন তিনি ২২ বছর পর এবার দেশে ফিরলেন।
যাহোক, নৃত্যপটিয়সী আর সুঅভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষকে গত রবিবার এফডিসিতে সংবর্ধনা দিয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। সেখানে শিল্পী-কলাকুশলীদের মাঝে আবেগঘন পরিবেশের সৃষি্ট হয় পুরনো এই সহকর্মীকে নিয়ে। তার কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, কেন চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়? কেনই বা আর ফিরে আসলেন না?
এক সময়ের প্রিয় কর্মস্থল এফডিসির শিল্পী সমিতির অফিসে বসে অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘আমার কোনোদিন কারও প্রতি ক্ষোভ ছিল না। ফলে বিশেষ কোনো কারণ কিংবা ব্যক্তির কারণে আমি পালিয়ে যাইনি। মজার বিষয় হলো, আমি ওখানে (কলকাতায়) দুইদিনের জন্য গিয়ে ফেঁসে গেছি। আর ফেরা হলো না। এর পেছনে আর কোনো কিন্তু নেই।’
ফরিদপুরের ভাঙ্গার সন্তান অঞ্জু এসময় আরও বলেন, ‘এটা আমার দেশ। এখান থেকেই নিঃশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছি। সেই নিঃশ্বাস নিয়েই বেঁচে এখনও আছি। যেখানেই থাকি বাংলাদেশ আমার হৃদয়ে আছে।’
তবে আসলেও কি অঞ্জু কোনো কারণ ছাড়াই দেশ ছেড়েছিলেন? পুরনো কথাবার্তা আর পত্রিকায় ছাপা হওয়া খবর-সাক্ষাৎকার অবশ্য তা বলে না। অন্তত ২০১৬ সালের জুলাইতে ছাপা হওয়া প্রতিবেদনে কিন্তু অন্যরকম বয়ান রয়েছে।
ওই বছর মে মাসে ঢাকা থেকে কয়েকজন সাংবাদিক কলকাতা যান। সেখানে অঞ্জুর সঙ্গে দেখা করেন তারা। তাদের প্রশ্নের জবাবে তখন অঞ্জু বলেন, ‘দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না আমার। স্বল্প সময়ে ক্যারিয়ারের রমরমা অবস্থা দেখে অনেকেই আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। মানে ফিল্মি পলেটিক্সের শিকার হই আমি। তাই বাধ্য হয়েই কলকাতায় স্থায়ী হই।’ এসময় তিনি আরো জানান, দেশে খুব একটা আসেন না এবং আসারও ইচ্ছা নেই।
আরো জানা গেছে, ‘রু’ আদ্যাক্ষরের এক চিত্রনায়কের সঙ্গে প্রেম ছিল তার। কিন্তু ১৯৮৫ সালে প্রেমিক নায়ক অন্যত্র বিয়ে করলে মন ভেঙে যায় অঞ্জুর। ওই বছরেই বিয়ে করেন তাকে সিনেমায় আনা পরিচালক এফ কবির চৌধুরীকে। নাম ও ধর্ম বদলে নিজে ফারজানা কবীর নাম নেন। তবে এই বিয়েটি টিকেছিল মাত্র চার মাস।
এরপর অঞ্জুকে অনেক হতাশার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। শাবনাজের মতো নতুন প্রজন্মের নায়িকাদের আগমনে তার অভিনীত ছবিও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হতে থাকে। অবশ্য ১৯৮৯ সালে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ চরম সাফল্য দেখায় যার ধারবাহিকতায় তার ক্যারিয়ারে ফের হাওয়া লাগে। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী ছিল না- মানে তার ক্যারিয়ারের প্রদীপ যেন নিভে যেতে থাকে। আগের মতো ক্রেজ ছিল না আর। একই সঙ্গে ফিল্মি পলিটিক্স আর স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে তার ক্যারিয়ার তখন পথহারা পথিক যেন।
১৯৯৫ ‘নেশা’ নামের ছবিতে কাজ করছিলেন। সাঈদুর রহমানের পরিচালনার এই ছবিটির কাজ অসমাপ্ত রেখেই ১৯৯৬ সালে কলকাতা চলে যান অঞ্জু। সেই দু’দিনের যাওয়া এখন ২২ বছরে ঠেকেছে।
১৯৮২ সালে এফ, কবীর চৌধুরীর ‘সওদাগর’ সিনেমার মাধ্যমে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ তার- সচরাচর বাংলাদেশি ছবির তুলনায় তখনকার বিচারে নায়িকা চরিত্রের বেশ খোলামেলা আর ভালগার ধরনের প্রকাশ ছিল ছবিটিতে।
এসময়ে এই ধরনের ছবি তৈরি হতে থাকে একের পর এক যা তরুণ আর শ্রমিক শ্রেণির দর্শককে চুম্বকের মতো টানতে থাকে। অর্থাৎ, বাংলাদেশি সিনেমায় ‘চাকভুম চাকভুম’ মশলাদার নৃত্যগীতের ধারক-বাহকদের অন্যতম কুশীলব অঞ্জলী ঘোষ ওরফে অঞ্জু ঘোষ (এই ধারাবাহিকতাকে পরবর্তীতে ময়ূরী-মুনমুনরা চরম অতলে বা শিখরে নিয়ে যান)।
তবে অঞ্জু ঘোষ সুঅভিনেত্রী; তার প্রমাণ রয়েছে ‘প্রাণ সজনী’, ‘বড় ভাল লোক ছিল’ নামের সিনেমাগুলোতে। আর বেদের মেয়ে জোছনাতে তার অভিনয় দেখে প্রশংসা করেছেন খোদ অমিতাভ বচ্চন। বিখ্যাত এইচএমভি’র মতো প্রতিষ্ঠান তাকে গোল্ডেন ডিস্ক দিয়ে সম্মাননা জানিয়েছে। কলকাতায় ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ আর বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভের ‘হাম’ ছবিটি একই সঙ্গে মুক্তি পায়।
কিন্তু হাম মার খেয়ে যায় জোছনার কাছে। অমিতাভ বাধ্য হয়ে দেখতে চান কী আছে বেদের মেয়েতে। সিনেমাটি দেখে তিনি অঞ্জুর অভিনয়ের প্রশংসা করেন বলে জানান অঞ্জু ঘোষ নিজে।
চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক যাত্রামঞ্চে তিনি বেশ সফল ছিলেন। সেখান থেকে সিনেমায় এসেও সফল। তার সময়ে তিনি দর্শকমহলে বেশ জনপ্রিয় আর নির্মাতাদের কাছে চাহিদাসম্পন্ন হিরোইন ছিলেন। নরম গরম, আবে হায়াত, রাজসিংহাসন জাতীয় ছবিগুলোতে তিনি একশ্রেণির দর্শকদের নয়নের মণি ছিলেন।
দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি বেদের মেয়ে জোছনায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটি পরে কলকাতাতে রিমেক হয় সেখানেও নাম ভূমিকায় ছিলেন তিনি। বাংলাদেশি জোছনাতে নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন আর সেখানে ভারতীয় জোছনাতে তার নায়ক ছিলেন তাপস পাল।
এদিকে জানা গেছে, এবার বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েই অঞ্জু ঘোষ ঢাকা এসেছেন। চমক হিসেবে এখানকার নতুন কোনও ছবিতে অভিনয়ের ঘোষণাও আসতে পারে। ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমা প্রযোজনা করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ৬:১২ অপরাহ্ণ ৬:১২ অপরাহ্ণ
মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…
ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…