রেসিপি

নওশাবার মুক্তি চায় ওরা!

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলার সময় ফেসবুক লাইভে এসে দুই ছাত্রকে হত্যা এবং একজনের চোখ তুলে নেয়ার মিথ্যা প্রচারের ঘটনায় গ্রেফতার অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

গত ৪ আগস্ট রাতে র‌্যাবের হাতে আটক নওশাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফা রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আর তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় ১৩ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়েন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার এই নায়িকা।

পড়ে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও সেখানেই আছেন তিনি। নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।

বর্তমানে নওশাবার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপাতত তিনি ভালোই আছেন। তবে তার মাথা ব্যাথা ও কোমরে সমস্যা রয়েছে। যেদিন তাকে ভর্তি করা হয় সেদিনই আমরা তার এমআরআই করেছি। পরে তাকে পুরাতন ভবনের ৪৩ নম্বর কেবিনে নেওয়া হয়।’

এদিকে গ্রেফতার নওশাবার মুক্তি চেয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে টেলিভিশন শিল্পীদের সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘ। সংঘের পক্ষ থেকে সভাপতি শহীদুল আলম সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিমের স্বাক্ষরিত এই বিবৃতি টেলিভিশন শিল্পী ও পরিচালকদের নিজ নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করতে দেখা গেছে।

শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিমের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘একটি মানবিক আবেদন’ শিরোনামে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজী নওশাবা আহমেদ গত ০৪.০৮.১৮ তারিখে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ভুল তথ্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে

লাইভ ভিডিওটি শেয়ার করেন তা যে পুরোপুরি ভুল ছিলো তা ইতোমধ্যে নওশাবা স্বীকার করেছে এবং এই জন্য সে ভীষণ অনুতপ্ত। সে বুঝতে পেরেছে তার ভিডিওর কারণে অনেক বড় কিছু হতে পারতো।’

বিবৃতিতে নওশাবার মুক্তি চেয়ে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী, মাদার অব হিউম্যানিটি, সংস্কৃতিবান্ধব, জননেত্রী শেখ হাসিনা, আপনার কাছে বিনীত আবেদন, যেহেতু নওশাবা তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী এবং তার বিগত জীবনে এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যা রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবতাবিরোধী।

বরং নানাবিধ সামাজিক, মানবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সে জড়িত, এটা আমরা সবাই জানি। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেও নওশাবা বলিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। দু’দিন পরেই ঈদ, নওশাবার ছয় বছরের কন্যা সন্তান আছে, শারীরিকভাবেও সে অসুস্থ।’

‘আমরা সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমরা বিশ্বাস করি সব আইনি প্রক্রিয়া পার হয়ে নওশাবা তার স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবে। অভিনয় শিল্পী সংঘ এর সব সদস্য,

অভিনয় শিল্পীদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে বিনীত আবেদন, কাজী নওশাবা আহমেদকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে মায়ের কোলে তার সন্তানকে ঈদ করার সুযোগ করে দিন।'

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট ফেসবুক লাইভে এসে নওশাবা উদভ্রান্তের মতো বলতে থাকেন, এই মাত্র দুই জন ছাত্রকে হত্যা এবং একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। তিনি কথাগুলো এমনভাবে বলছিলেন যেন তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন।

কিন্তু নওশাবা কথা বলছিলেন উত্তরা থেকে আর তিনি ঘটনার কথা বলছিলেন জিগাতলার।

এই অভিনেত্রী সেদিন বলেন, ‘আমি কাজী নওসাবা আহমেদ, আপনাদের জানাতে চাই, একটু আগে জিগাতলায় আমাদের ছোটভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। আপনারা সবাই একসাথে হোন।

প্লিজ ওদের প্রটেকশন দেন। বাচ্চাগুলো আনসেভ অবস্থায় আছে। প্লিজ আপনারা রাস্তায় নামেন। প্লিজ আপনারা রাস্তায় নামেন এবং ওদের প্রটেকশন দেন। এটা আমার রিকোয়েস্ট।’

নওশাবা আরও বলেন, ‘আমি এ দেশের একজন মানুষ, নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাছে রিকোয়েস্ট করছি যে, জিগাতলায় একটু আগে একটি স্কুলে একটি ছেলের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে।

একটু আগে ওদের অ্যাট্যাক করা হয়েছে। ছাত্রলীগের ছেলেরা সেটা করেছে। প্লিজ প্লিজ ওদের বাঁচান। তারা জিগাতলায় আছে। আপনারা এখই নামবেন। আপনাদের বাচ্চাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান। এটা আমার রিকোয়েস্ট।’

‘যে পুলিশরা আছে, তারা অবশ্যই বাচ্চাদের প্রটেকশন দেন। আপনারা প্লিজ কিছু একটা করেন। সরকার যদি দায়িত্ব নিতে না পারে, তাহলে জনগণ কিসের জন্য আছেন আপনারা। আমরা ৭১-এ পেরেছি, ৫২-এ পেরেছি এবারও পারব। আমাদের দরকার নাই কাউকে।’

আটক হওয়ার আগে আবার ফেসবুক লাইভে এসে নওশাবা বলেন, তিনি ব্যবহৃত হয়েছেন। একজনের কথায় বিশ্বাস করে ওই লাইভে এসেছেন তিনি।

পরে র‌্যাবকে নওশাবা জানান, রুদ্র নামে একজনের কথায় তিনি ওই ফেসবুক লাইভে আসেন। ওই তরুণের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ৩ আগস্ট শাহবাগে।

এর মধ্যে ফেসবুক লাইভে গুজব ছড়ানোর অভিযোগের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় নওশাবাকে গত ৫ আগস্ট চার দিন এবং ১০ আগস্ট দুই দিনের রিমান্ড নেয় পুলিশ।

১৩ আগস্ট রিমান্ড শেষে এই অভিনেত্রীকে ঢাকা সিএসএম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে দুইজন নারী পুলিশ কন্সটেবলের সহায়তায় আদালতের দ্বিতীয় তলায় উঠানো হয়।

কিন্তু তিনি মারাত্মকভাবে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় আদালতের এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। সে সময় চিকিৎসা শেষে ফিরিয়ে আনা হলেও রাতে তাকে আবার ভর্তি করা হয়।

সেদিনের সেই গুজব নওশাবা ছাড়াও দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে বহুজনে ছড়িয়েছেন। এদের মধ্যে ৫১টি মামলায় মোট ৯৭ জনকে আটক করার তথ্য গত ১৬ আগস্ট জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এদের মধ্যে পাঁচজন নারী।

তবে নওশাবা যার কথা শুনে লাইভে আসেন, সেই রুদ্রকে আটক করা গেছে কি না, তা এখনও জানায়নি পুলিশ। আর নওশাবার কাছ থেকে কী তথ্য উদঘাটন করা গেছে, সেটিও প্রকাশ পায়নি এখনও।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২০ আগস্ট ২০১৮, ২:২৮ অপরাহ্ণ ২:২৮ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ