খাদ্যমন্ত্রীর মদদে বেপরোয়া কাউন্সিলর হোসেন

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে পাঁচ আওয়ামী লীগের নেতার বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছে ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ও কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পারভেজ হোসেন বিপ্লবের নেতৃত্বাধীন অর্ধশত ক্যাডার বাহিনী।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কামরাঙ্গীর চর থানা এবং ওয়ার্ড কমিটিতে হামলার শিকার ওই আওয়ামী লীগ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখায় কাউন্সিলর মো. হোসেন ও বিপ্লবের নেতৃত্বে ক্যাডারবাহিনী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালায়।

হামলার সময় বাড়ির আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার করেন তারা। শুধু তাই নয়, এ সময় লুটপাটও চলে। ৬টি মোটর সাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টার দিকে হামলাকারীরা অতর্কিতে বাড়ির গেট ভেঙে ঢুকে পড়েন। মিছিল করে একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে তাণ্ডব চালানো হয়।

ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, থানা এবং ওয়ার্ড কমিটিতে চাহিদা অনুযায়ি পদ-পদবি না পেয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের নির্দেশেই কাউন্সিলর মো. হোসেন ও তার ক্যাডার বিপ্লব এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

জানা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন খান, সদ্য ঘোষিত কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল হাসান,

৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী জামাল দেওয়ান, একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার এবং ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান দেওয়ান বাবুর বাড়ি ভাংচুর করে গাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।

একই সময়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন সরকারের স্ত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর (৫৫-৫৬-৫৭) শিউলি হোসেন সরকারের কার্যালয়।

ওই ঘটনার বিষয়ে কামরাঙ্গীর চর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী সোলায়মান মাদবর বলেন, আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে ক্ষুদ্ধ কাউন্সিলর হোসেনসহ তার ক্যাডাররা।

সবার বাড়িতে গিয়ে দেখলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীরা যেমন তাণ্ডব চালিয়েছে, ঠিক সেভাবে হামলা চালিয়েছে ওরা। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের কারণেই কামরাঙ্গীরচর আওয়ামী লীগটাকে শেষ করে দিচ্ছে হোসেন ও বিপ্লব। আওয়ামী লীগের ওপর মহলের এদিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত।

ঘটনার সময় বার বার কামরাঙ্গীর চর থানার ওসি শাহীন ফকিরসহ পুলিশকে এমন তাণ্ডবের বিষয়ে ফোন করা হলেও ওসি শাহীন ফকির কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো কাউন্সিলর হোসেন ও তার ক্যাডার বাহিনীকে নানাভাবে সহযোগীতা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ডানহাত কাউন্সিলর মো. হোসেন ও বিপ্লব এবং কামরাঙ্গীরচর থানা ওসি শাহীন ফকির অন্ধভাবে খাদ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এইসব ঘটনা সমর্থন করে যাচ্ছেন।

একটি আর দুটি নয়, কাউন্সিলর হোসেন ও বিপ্লবের ক্যাডাররা এ পর্যন্ত ২০টির বেশি হামলা করেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর।

থানা আওয়ামী লীগে যুগ্ম সম্পাদক আবুল হাসান বলেন, থানা কমিটির পদে ২৪ নম্বর সদস্য রাখায় ক্ষুদ্ধ হয়ে কাউন্সিলর মো. হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লবসহ অর্ধশত মানুষ এসে আমার বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে। তাদের হামলায় আমার বাড়ির প্রতিটি জানালার কাচ ভেঙে ফেলে এবং আসবাবপত্র গুড়িয়ে দেয়।

তাদের হামলার ভয়ে আমার ছোট্ট মেয়ে এবং স্ত্রী ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পুলিশকে ফোন দিলেও কোন সহযোগিতা ওই সময় পাওয়া যায়নি।

বাড়ির গ্যারেজে থাকা দামি দুটি মোটর সাইকেলও আগুনে পুড়িয়ে দেয় ওরা। আমাদের কী দোষ আমরা জানি না। তবে এতোটুকু জানি যে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ বলেই আমরা কমিটির পদ পেয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক থানা আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কাউন্সিলর মো. হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব খাদ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের কমিটি দেয়ার খবর শুনে আমাদের নেতাদের ওপর এভাবে হামলা করতে পারে। আর ওসি শাহীন ফকির মন্ত্রীর কথার বাইরে যান না। উল্টো তাদের হামলা ভাংচুরের মদদ দিয়ে যাচ্ছে।

এই ওসিকে কাজে লাগিয়ে কামরাঙ্গীরচরে ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে হোসেন ও বিপ্লব। মন্ত্রীর এমন আচরণে সাধারণ নেতাকর্মীরা কেউ তার পক্ষে নেই।

কামরাঙ্গীর চর থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের কারণেই কামরাঙ্গীর চর থানা আওয়ামী লীগের করুণ অবস্থা। শুধু কাউন্সিলর হোসেন ও বিপ্লবের সব অপকর্ম তিনি সায় দিয়ে যাচ্ছেন।

ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর আওয়ামী লীগই নয়- বেশিরভাগ নেতাকর্মীরাই জিম্মি তাদের কাছে। কোনো ঘটনারই বিচার করেনি খাদ্যমন্ত্রী। এই খাদ্যমন্ত্রীর কারণেই ধীরে ধীরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকেই মাঠ থেকে নিরব হয়ে আছেন।

৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার বলেন, খাদ্যমন্ত্রীর ইশারায় কাউন্সিলর হোসেন ও বিপ্লব, মশিউরসহ ক্যাডাররা দলবল নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর চালায়। একই সময় প্রধান শিক্ষক সেলিম মিয়ার ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে শেষ করে দেয়। আমরাদের অপরাধ আমরা কেন আওয়ামী লীগের কমিটিতে আছি।

সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান দেওয়ান বাবু বলেন, ছাত্রলীগ এবং সেচ্ছাসেবক লীগ করেই এখন ওয়ার্ড কমিটির পদ পেয়েছি। এই পদ পাওয়ার কারণেই আজ কাউন্সিলর মো. হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লবসহ ক্যাডাররা আমার বাড়িতে ভয়ংকর তাণ্ডব চালায়।

বাড়ির বিশাল গেট ভেঙে প্রবেশ করে এবং বাড়ির সাতটি সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলার আগে ফুটেজে সবার ছবি আছে। বাড়িতে থাকা দুটি নতুন মোটর সাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়। থানার পুলিশের সহযোগীতা চেয়ে পাইনি।

থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন সরকার বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার জন্য বলেছি, আমি থানায় আছি। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। খাদ্যমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি আমাদের সবাইকে আগামীকাল ডেকেছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন কাউন্সিলর হোসেন ও বিপ্লবসহ তার অনুসারিরা। এর আগে অনেক আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলা-মারধর করেছে।

শেষ পর্যন্ত আমাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করে আগুন দিয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামই ওদের কলকাটি নাড়ছেন। তার ইন্ধন পেয়েই ওরা এসব করে গেলেও কিছুই করে না প্রাশাসন।

তবে এ বিষয় নিয়ে লালবাগ জোনের সহকারি কমিশনার (এসি) মো. সালাউদ্দিন সাহেব এসেছেন। তিনি বিষয়টি মনিটরিং করছেন। কাউন্সিলর হোসেন ও বিপ্লবসহ হামলাকারিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

অপর আরেক নেতা বলেন, প্রথমে খাদ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রথমে মামলা নিতে গড়িমসি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ডিসি এবং এসির কঠোর অবস্থানের কারণে মামলার প্রস্ততি চলছে। কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি শাহীন ফকিরের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট ২০১৮, ৫:২৬ অপরাহ্ণ ৫:২৬ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ