এবারের ঈদে ‘বড় ছেলে’ নামক নাটকটি যখন সারাদেশের মানুষকে আবেগ এর জায়গাটিতে অবস্থান করে নিয়েছে ঠিক তখনই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের গণরুমে সত্যিকার এক বড় ছেলেকে আবিস্কার করলাম।
কিছু রুঢ় বাস্তব সত্যের কারণে তার নাম, ছবি প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে এটুকু জানুন নাটকের বড় ছেলে কেবল নাটকের স্কৃপ্টে সীমাবদ্ধ থাকলেও যাকে নিয়ে লিখছে তার অস্তিত্ব পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। সে আমার বন্ধু। আমরা একই সাথে একই হলের একই রুমে থাকি।
বড় ছেলে নাটকের মহড়ায় হাজারো বড় ছেলের কষ্টের ঘটনা চাপা পড়ে যায়। তানিম( ছদ্মনাম) আর আমরা হলের একি রুমে থাকি, প্রায় ২২ জন এক রুমে। ফারস্ট ইয়ারে পড়াশোনার চাপ নেই, ফলে সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে আর সোহরাওয়ারদিতে ঘুরাফেরা করি।
রাতে হলের রুমে ফিরে প্রায়ই লক্ষ করতাম একটি ছেলে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। যদি জিজ্ঞেস করতাম কিরে ঘুরতে গেলেনা তখন সে এটা সেটা ওজুহাত দেখাত, আমরা ওরে নিয়ে নানান মজা করতাম। কইতাম হালা তুই কি মেয়ে নাকি যে ঘুরতে বেরোস না। ও হাসির ছলে উড়িয়ে দিত আমাদের কথা।
একদিন কথা বলতে বলতে ও আমারে বলল দোস্ত একটা কথা বলি কাউকে বলিস না। আমি বললাম, বল। ও বলল দোস্ত তোরা যখন সন্ধ্যায় ঘুরতে যাস আমি তখন রিক্সা চালায়।
রিক্সা না চালাইলে আমি খামু কি? আমার বাবাও রিক্সা চালায়। আমি জাস্ট স্তব্ধ হয়ে যাই তানিমের কথা শুনে। আমি শুধু শুনতে থাকি, কিছু বলিনা। এইসব মুহূর্তে কি বলতে হয় আমি জানিনা।
তানিমের ছোট দুই ভাই, ওর মা আর বাবা, এদেরকে নিয়েই সংসার। ও প্রায়ই আমার সাথে ওর মায়ের আর ছোট দুই ভাইয়ের গল্প করত। ছোট ভাই দুটি বড় হলে কি করবে এইসব ছোট ছোট স্বপ্নের কথা।
এক ঈদে ছোট দুই ভাই তানিমের কাছে বেল্ট কিনে দেয়ার আবদার করে। দেখেছি কয়েক বেলা না খেয়ে কিভাবে ছোট ভাই দুটির জন্য বেল্ট কিনে নিয়ে যেতে। শুনলাম গত বছর এরা এসএসসি পাস করেছে।
একবার তানিমের আব্বা আসল হলে চিকিৎসা করাতে। রাতে রুমে এসে দেখি আংকেল আর তানিম, সাথে আরেক জন। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই বলল বাবা আমরা গরীব মানুষ, রিক্সা চালাই।
আল্লাহ তোমাদের সাথে আমার তানিমরে পরিচয় করায়ে দিছে। আমি বললাম আংকেল এটা কি বলেন আপনি। আপনি আমার বাবার মত। প্লিজ এসব বইলেন না। তানিম আর আমরা বন্ধু, ভাইয়ের মত।
বিশ্বাস করুন এই তানিমের বাবার মত এরকম বিনয়ি চোখ জোড়া আমি আর দেখেনি কোন দিন। আংকেলের হাটুর অপারেশনের পর আরো কিছুদিন রিক্সা চালাতে হয়েছিল তানিমকে। ওর ছোট ভাই দুটির পড়াশোনার খরচ মিটাতে, সংসারের বোঝা টানতে।
তখনো ক্যাম্পাসে আড্ডা বসত বন্ধুদের, টিএসসিতে চলত বন্ধুদের গিটারের টুংটাং, নাট মন্ডলে নাট্য উৎসবে যোগদিত বন্ধুরা। তানিম তখন মুখে মাস্ক লাগিয়ে নীলক্ষেত থেকে পলাশীর উদ্দেশ্যে রিক্সা টানায় ব্যস্ত।
মাস্ক লাগাত পাছে কেউ চিনে ফেলে..তানিমের কি কাউকে ভাল লাগত, লাগলেও কি বলতে পেরেছিল তাকে। নাকি কারো হাত ধরে বলেছিল দেখিস একদিন আমরাও..। এটাই জীবন।
কেউ সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নিয়ে নিজেকে আবিস্কার করে অন্ধকারে। আর কেউ বা শত অভাব আর প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজেকে আলোকিত করে। বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা এইসকল সংগ্রামী ‘বড় ছেলেদের জন্য।
এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৮ মে ২০১৮, ৫:৪৯ অপরাহ্ণ ৫:৪৯ অপরাহ্ণ
মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…
ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…