আবহাওয়া

চিল্লাপাল্লা কইরেন না, এটা সরকারি হাসপাতাল!

আমিই সিএনজি থেকে নামিয়ে তাকে জরুরি বিভাগের বেডে নিয়ে যাই, কেউ ধরে না-এগিয়েও আসে না। একটা বেড-ও ছাড়ে না। এরপর চিৎকার শুরু করলাম, তখন হাসপাতালের কয়েকজন বলে, ‘এটা সরকারি হাসপাতাল, এখানে চিল্লা-পাল্লা করলে কোনো লাভ হবে না। দরকার হলে বেসরকারিতে নিয়ে যান।’ বলছিলেন রোজিনাকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নজরুল ইসলাম। পেশায় তিনি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।

তিনি বলেন, মেয়েটাকে রং রোড দিয়ে মহাখালি থেকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে এলাম। (সিএনজি চালিত অটোরিক্সা) সিএনজিতে কিছুক্ষণ বসিয়ে রেখে কাঁধে নিয়ে বের হলাম। জরুরি বিভাগের সামনে তখন কত মানুষ দাঁড়ানো অথচ কেউ এগিয়ে এলো না। কাউকে পেলাম না, একটু সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, কাঁধে করে রোজিনাকে নিয়ে হাসপাতালে ভেতরে ঢুকি। আমার পুরো শরীর রক্তে ভেজা। আমিতো তাকে পাজাকোলা করে পুরো রাস্তা নিয়ে গিয়েছি। আমি তার আত্মীয় না-আমিও পথযাত্রী, একটু ধরেন। জরুরি বিভাগের বাইরে আমি রোজিনাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, একটা লোক এগিয়ে এলো না।

গত ২০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়িতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রাধীন বিআরটিসির (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৫৭৩৩) ডাবল ডেকার বাস রোজিনা আক্তারকে ধাক্কা দেয়। রোজিনা পড়ে গেলে বাসটি তার ডান পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে রোজিনার ডান পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পথচারীরা উদ্ধার করে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন।

পঙু হাসপাতালে পাঁচদিন চিকিৎসার পর গত ২৫ এপ্রিল রোজিনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (২৯ এপ্রিল) সকাল ৭টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। রোজিনার মৃত্যু সংবাদে সেখানে ছুটে আসেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নজরুল ইসলাম। সে দিনে ঘটনা সর্ম্পকে তিনি বলেন, বিআরটিসি বাসটি মহাখালি থেকে এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিল। রাস্তা পার হবার জন্য অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল, রোজিনাও সেখানে ছিল। রাস্তা পার হবার জন্য হাত দিয়ে অনেক বার সিগনাল দিয়েছে।

সেখানে রাস্তা পার হবার জন্য অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, আমিও ছিলাম সঙ্গে। সিগন্যাল দেখে চালক ব্রেক করে, গতিও কম ছিল কিন্তু দেখার পরও বাস তাকে ধাক্কা দেয় এবং পরে চাকা পায়ের ওপর তুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বাসযাত্রীদেরসহ বাস চালককে আটক করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু মেয়েটা রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল, চারিদিকে কত মানুষ। সবাইকে সে অনুরোধ করছিল হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। বরং, আমি যখন রোজিনাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাই, তখন সবাই নিষেধ করছিল আমাকে।

আমি যখন রোজিনাকে গিয়ে ধরি তখন বরং আমাকে শুনতে হয়েছে, আমি কি তাকে চিনি কি-না, এটা রোড অ্যাক্সিডেন্ট-পুলিশ কেস হবে। মেয়েটা যদি আমার হাতে মারা যায় তাহলে সারাজীবন আমাকে এর দায় বহন করতে হবে। কিন্তু আমি পারিনি, সিএনজি করে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসি। অথচ হাসপাতালে যাবার পরও আমরা চিকিৎসক পাচ্ছিলাম না। অনেক চিৎকার করেছি-কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে দুইজন চিকিৎসক আসেন এক্সরে হয়। এরপরই সবাইকে জানানো হয় ফোন করে।

হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রথমেই তাকে নজরুল ইসলাম এক ব্যাগ রক্ত দেন পরে দেওয়া হয় আরও পাঁচ ব্যাগ রক্ত। রোজিনার মৃত্যুতে বিহ্বল চোখে নজরুল ইসলাম বলেন, সিএনজিতে পুরোটা পথ আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতে এসেছি। সাহস দিয়েছি, কোনওভাবেই যেন জ্ঞান না হারায় সে চেষ্টা করে গেছি। হাসপাতালে ভর্তি হবার পরও ওর সঙ্গে আমার প্রতিদিন কথা হতো।

রাস্তার উদ্ধারকারী থেকে আমি ওর ভাই হয়ে উঠেছিলাম বলে চোখ মোছেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিআরটিসি বাসের চালক যদি একটু মনোযোগী হতো। আমি বলবো যদি ইচ্ছা করতো তাহলেই তিনি রোজিনাকে বাঁচাতে পারতেন। মেয়েটাতো সিগন্যাল দিয়েছে, সে তো দেখেছে, কিন্তু তাতে আমল দেননি, তিনি ইচ্ছে করলেই মেয়েটাকে বাঁচাতে পারতো। সব দোষ বাস চালকের। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

নজরুল ইসলাম যখন কথা বলছিলেন তখন পাশেই বিলাপ করছিলেন রোজিনার বাবা রসুল মিয়া। তিনি বলেন, মামলা কইরা আর কী হইবো, আমার মেয়েটা তো চইলে গেল, তারে তো আর ফেরত পামু না। আর তাদের সঙ্গে তো আমরা পারমুও না। আমরা গরীব মানুষ, মামলা হইবো। কয়দিন পর ছাইড়া দিবো, জামিনে বের হইবো, তারপর আপিল। কি হইবো মামলা কইরে, বাস মালিকের সঙ্গে পারা আমাদের সাধ্য না- বলেন রসুল মিয়া।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২৯ এপ্রিল ২০১৮, ৩:৫৮ অপরাহ্ণ ৩:৫৮ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ