সম্প্রতি বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন নামকরা সুপারশপ স্বপ্নের এক বিক্রয়কর্মী শরিফুল ইসলাম (৩৩)। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে সে অনেক তথ্য দিয়েছেন।
সেই জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমেই সিআইডিকে শরিফুল বলেন, ‘আমাকে ধরেছেন, কিন্তু আমার মতো আরও ১০০ জনের জন্ম হবে। যারা এ কাজ করতে পারবে। যতদিন না ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা বদলাবে, ততদিন এ রকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
এদিকে বুধবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর মালিবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম কার্ড জালিয়াতির বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে শরিফুলকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তিনি পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতির মূল হোতা বলে জানান কর্মকর্তারা। তিনি বছর পাঁচেক আগেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর দেড় বছর কারাগারে ছিলেন।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, ১৪০০ ক্লোন কার্ড, একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড রিডার ও রাইটার, তিনটি পজ মেশিন, গ্রাহকদের তথ্য চুরিতে ব্যবহার করা ডিজিটাল হাতঘড়ি, দুইটি মিনি কার্ড রিডার ডিভাইস, ১৪টি পাসপোর্ট, আটটি মোবাইল সেট, একটি ক্রেডিট কার্ড, পরচুলা ও তিনটি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্র্যাক, সিটি, ইবিএল, ইউসিবিএল এবং ব্যাংক এশিয়া তাদের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনা সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের নজরে আনে। এরপর তদন্তে দেখা যায় গ্রাহকেরা যখন সুপার শপ ও ডিপার্টমেন্টাল সেন্টারে যায়, তখন চক্রটি কৌশলে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করে। এরপর এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয় তারা।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, শরিফুল ইসলাম স্বপ্নের বনানী শাখায় কাজ করার সময়ে নিজের হাতঘড়িতে সংযুক্ত বিশেষ মিনি কার্ড রিডারের মাধ্যমে গ্রাহকের কার্ডের অভ্যন্তরীণ তথ্য নিয়ে নিতেন। তারপর গ্রাহক যখন পিন নম্বর দিতেন তখন কৌশলে পিন নম্বর দেখে নিতেন। আর গ্রাহক চলে গেলে রিপ্রিন্ট দিয়ে কপিটা সংগ্রহ করে তার পেছনে পিন নম্বরটা লিখে রাখতেন।
বাসায় ফিরে শরিফুল ল্যাপটপ এবং ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্যাবলী ‘ভার্জিন’ বা খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন এটিএম কার্ড তৈরি করতেন। এরপর এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতেন। আর বুথ থেকে টাকা তোলার সময়ে সিসি ক্যামেরায় যেন চেনা না যায় সে কারণে শরিফুল পরচুলা ও রোদ চশমা ব্যবহার করতেন।
শরিফুল স্বপ্নে চাকরি করলেও তার আসল উদ্দেশ্য ছিল ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি। কারণ, গ্রাহকদের একটি বড় অংশই এখন কার্ড দিয়ে বিল পরিশোধ করেন। আর এই জালিয়াতির টাকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন শরিফুল। তিনি চলাচলের জন্য একটি টয়োটা এলিয়েন মডেলের গাড়ি ব্যবহার করতেন। তার ব্যাংকের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তিনি এই কাজ করে কয়েক কোটি টাকা রোজগার করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল জানায়, মেহেরপুর জেলার বোয়ালীয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে মাধ্যমিক এবং ২০০৩ সালে গাংনী ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য রাশিয়া যায় সে। সেখানকার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনির্ভাসিটি থেকে মাইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি নিয়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসেন।
রাশিয়ায় থাকাকালে রুমমেট ইভানোভিচের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির কৌশল শেখেন শরিফুল। পরে চীন থেকে একটি ক্লোন মেশিন, ঘড়িসহ জালিয়াতির সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন।
সুপারশপ স্বপ্নের হেড অব মার্কেটিং আফতাবুল করিম তানিম, হেড অব সেলস মো. সামসুদ্দোহা শিমুল এবং মহাব্যবস্থাপক করপোরেট অ্যান্ড সেলস) মিজানুর রহমান লিটন সিআইডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তানিম সাংবাদিকদের বলেন, বানানী শাখার একজন গ্রাহক অভিযোগ করেছিলেন, পস অপারেটর শরিফুল ইসলাম গ্রাহকদের বিল পরিশোধের পর স্লিপে কিছু একটা লিখে রাখেন। ওই অভিযোগ পাওয়ার পর খোঁজ নিতে গেলে শরিফুল নিরুদ্দেশ হন। পরে স্বপ্নের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
একই ধরনের জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৩ সালে দুইটি মামলা হয় শরিফুলের বিরুদ্ধে। তখন তিনি ১৮ মাস কারাগারে ছিলেন। এরপর কিছুদিন ছাত্র পরামর্শক ফার্ম খুলেন। সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে আবারও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন।
এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২৬ এপ্রিল ২০১৮, ৩:২২ অপরাহ্ণ ৩:২২ অপরাহ্ণ
মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…
ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…