রাজনীতি

বিএ পাশ মুক্তিযোদ্ধা যখন ভিক্ষুক! বিস্তারিত...

মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছে বাঙ্গালি জাতির সূর্য সন্তান। ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি আমাদের কাছে অনেক বড় মাহাত্ম্যময়। সেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধাকেও অপমান করা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। ঠিক তেমনি যদি একজন ভুঁয়া মুক্তিযোদ্ধাও থাকে, তারা যদি সমান সম্মান দাবি করেন সেটা হবে দেশ জাতির সঙ্গে প্রতারণা।

সকল শহীদের সঙ্গে প্রতারণা। তারপরেই বর্তমানে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। আর তারাই রাষ্ট্রীয় সব সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমানে করুণ অবস্থা। এমনকি কেউ কেউকে জীকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেঁচে নিতে হয়েছে। ২০১৭ সালে তেমনই একজন মুক্তিযোদ্ধার দেখা মিলেছিলো চট্টগ্রামে।

মুক্তিযোদ্ধা১১৩চট্টগ্রামের গোল পাহাড় মোড়ে এই বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে ভিক্ষা করার ফাঁকে সংবাদপত্র পড়তে দেখে মুসলেহউদ্দিন মোহাম্মদ বদরুল নামে এক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আগ্রহ নিয়ে তাঁর কাছে গিয়ে জানতে পারেন তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা!

একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে ভিক্ষা করতে দেখে তিনি তার জন্য অর্থের সাহায্য চেয়ে নিজের ফেসবুক পেইজে সরকার বরাবর একটি খোলা লেখেন। সেখানে লেখা ছিলো-

১০ জুলাই, ২০১৭

আজ সকাল ১১ টার দিকে গোল পাহাড় মোড় হয়ে মিমি সুপার মার্কেটের দিকে যাচ্ছিলাম। রাস্তার বাম দিকে সংবাদপত্র পাঠরত এক বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষুক দৃষ্টিগোচর হল। সামান্য কিছু পথ গিয়ে গাড়ী থামিয়ে পাঠক ভিক্ষুকের নিকটবর্তী হলাম। না, কোন দিকে খেয়াল নেই। নিবিষ্ট মনে ‘ আমাদের সময় ‘ এর উপর চোখের চাহনি।

মাথায় হাতের আলতো পরশ লাগাতেই লাঠিতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। শুরু হল প্রশ্নত্তোর পর্ব।

প্রশ্নঃ কি নাম আপনার ?

উত্তরঃ আবদুস সাত্তার

প্রশ্নঃ বাড়ী কোথায় ?

উত্তরঃ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, বয়রা গ্রাম।

আলাপ প্রসংগে জানলাম, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৬৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বিএ পাশ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনীতে থেকে যুদ্ধ করেছেন। সংসারে কেউ নেই। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘদিন মেডিকেলে ছিলেন। বর্তমানে চট্টগ্রামে ২৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে। রাতে থাকেন দামপাড়া পেট্রোল পাম্পের বারান্দায়। এই ভাবে যায় দিন- মাস- বছর।

মুরুব্বীর সাথে কথা বলার সময় বেশীর ভাগ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন শুদ্ধ ইংরেজীতে।

৭৬ বছর বয়সী এই অসহায় মানুষটির জন্য খুবই মায়া হলো। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল ক্ষমতায়। সদাশয় সরকারের নিকট সবিনয় নিবেদন, সরকারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সঠিক তথ্য গ্রহণ পূর্বক যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আসলেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা, তা’হলে শিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষুকটিকে পুনর্বাসন করে বাকী জীবন সম্মানজনক ভাবে অতিবাহিত করার সুযোগ দিয়ে জাতির শ্রেষ্ট সন্তানদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা হোক।

এরপর তিনি ১২ জুলাই, ২০১৭ সালে এই মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন।

সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘গত ১০ জুলাই ‘১৭ সোমবার ‘সরকারের নিকট সবিনয় নিবেদন ‘ শীর্ষক একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। নিবেদনটি ছিল একজন সত্তরোর্ধ মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষুককে মানবেতর জীবন- যাপন থেকে অব্যাহতি দিয়ে জাতির শ্রেষ্ট সন্তানের মর্যাদায় পুনর্বাসনের জন্য এবং এও বলেছিলাম, তিনি আসলেই মুক্তিযোদ্ধা কি না সরকারী বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে সঠিক তথ্য অবগত হওয়ার জন্য।

কারণ, দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য যাঁরা জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন সেই রকম একজন সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা যদি আজ পথে পথে ভিক্ষা করেন তা’ জাতির জন্য লজ্জাজনক। আলহামদুলিল্লাহ, আমার প্রদত্ত স্টাটাসের ওপর পনেরো হাজার লাইক, দুই হাজার কমেন্ট ও দশ হাজার শেয়ার হয়েছে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের সংখা অগণিত। আমি অত্র পোষ্টের মাধ্যমে সকলের নিকট সবিনয় কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মুক্তিযোদ্ধা দাবীদার একজন বয়স্ক লোককে ভিক্ষা করতে দেখে মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব সরকারকে অবহিত করে আমি আমার নাগরিক দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। এখানে বাহবা নেয়ার কিছু নেই। নিজে মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম বলে সেদিনের সেই অনেক নারকীয় ঘটনার স্মৃতি চোখের পাতায় ভাসে।

যাক, নীচের ছবিতে প্রদর্শিত বৃদ্ধ ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে ভিক্ষার হাত পেতে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্ঠা করছেন কি না তা’ও ভেবে দেখতে হবে। সেই জন্যই আমি নিবেদন করেছি তাঁর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।

পোষ্টটি আমার ফেসবুক ওয়ালে প্রকাশের পর কিছু কিছু কমেন্টে সরকারের ওপর দোষারোপ করা হয়েছে। যা’ মোটেও উচিৎ হয়নি। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর কোনো সরকারই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভাবেন নি। ৭৫ থেকে ৯৬ দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওযামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রচলন তো আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হয়েছে। দশ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বর্তমান সরকারই করেছে। সুতরাং, যে কোন বিষয়ে মন্তব্য করার আগে চিন্তা- ভাবনা করা দরকার বলে মনে করি।

মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার আবদুস সাত্তারকে চট্টগ্রামের গোলপাহাড়স্থ Mfc রেষ্টুরেন্টের সামনে, হযরত সৈয়দ বদনা শাহ্ মাজার, প্রবর্ত্তক মোড়, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মোড় ইত্যাদি স্থানে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়।

এরপর তিনি আবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে এই মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে সকলের জ্ঞাতার্থে আরেকটি পোস্ট দেন । সেখানে লিখেছিলেন-

সকলের সদয় জ্ঞাতার্থে।

গত ১০ জুলাই ২০১৭ নীচে প্রদর্শিত ছবিতে পত্রিকা পাঠরত বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষুক আবদুস সাত্তার সম্পর্কে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম যিনি নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবী করেছিলেন। পোষ্টটি আমার ফেস বুক ওয়ালে দেয়ার পর ২৩ হাজার লাইক, ৪ হাজার কমেন্ট ও ১৫ হাজার শেয়ার হয়েছিল।

অনেক শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তিবর্গ কথিত মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষুক আবদুস সাত্তারের ভরণ- পোষনের দায়িত্বভার গ্রহণ সহ নিজ উদ্যোগে পুনর্বাসনের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। গত ১৭/০৯/১৭ আবদুস সাত্তারের সাথে প্রবর্তক মোড়ে দেখা হলে তিনি জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের দামপাড়াস্থ এস, আলম বাস কাউন্টারে তাঁর রাত যাপন হয়। কোন সহৃদয় ব্যক্তি যদি তাঁকে খোঁজ করেন, প্রত্যহ রাত ৯টার পর ০১৮৫৬৪৩০২০৪ মোবাইল নম্বরে ওনাকে পাওয়া যাবে।

তথ্যসূত্র : ফেসবুক ।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ