আবহাওয়া

যত যানজট-যত ট্রাফিক সিগন্যাল-তত আয়

ট্রাফিক সিগন্যালে থামার সংকেত (লাল বাতি কিংবা ট্রাফিক পুলিশের ইশারা) পেয়ে যখন গাড়িগুলো থেমে যায়, তখন চলতে শুরু করে কিছু মানুষের জীবিকার চাকা। ঠাণ্ডা পানি, শসা, গাজর, চিপস, বাদাম, শিক্ষা উপকরণ ও ফুলসহ নানা পণ্য নিয়ে সেখানে চলে তাদের প্রতিদিনের জীবিকাযুদ্ধ। ঢাকার রাস্তায় চলতে গিয়ে যানজটের মুখোমুখি হতেই হবে এটা এখন নিত্যনিয়তি রাজধানীবাসীর। সেই যানজট আবার আহারের জোগান দেয় কিছু মানুষের।

রাজধানীতে পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষের সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছেই নেই। তবে, ঢাকার রাস্তায় তাদের যে উপস্থিতি তাতে সংখ্যাটা যে বিশাল-বিপুল হবে, সেটা আন্দাজ করা যায়। হতদরিদ্র এই মানুষগুলোর আয়ের একটি বড় উৎস রাজধানীর বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্ট। কোনো গন্তব্যে যাওয়ার পথে যানজটে আটকা থাকা কিংবা ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে থাকার সময় যাত্রীদের কানে আসে ওই মানুষগুলোর হাঁকডাক- ‘এ…ঠান্ডা পানি, জুস’, ‘শসা-গাজর’, ‘৫ টাকা ১০ টাকা চিপস’।

রাজধানীর বিজয় সরণি ট্রাফিক সিগন্যালে প্রতিদিনের জীবিকাযুদ্ধ সবুজের। তিরিশের বেশি বয়সী সবুজ তিন সন্তানের জনক। ঢাকার সিগন্যাল পয়েন্টে তার জীবিকার সংযোগ ১০ বছরের। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জিনিস ফেরি করেন তিনি। কেননা সব সময় তার আয়-রোজগার সমান হয় না। মাঝে মাঝে বেশ মন্দা যায় ব্যবসা। তখন সময়ের চাহিদা বুঝে পণ্য বদলান তিনি।

গরমের চাহিদা মেটাতে সবুজ এখন বিক্রি করেন হাতপাখা। কল্যাণপুর পোড়া বস্তির বাসিন্দা সবুজ বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বেচাকেনা খারাপ। ১০-২০টা বেচি। গরম বেশি পড়লে কোনো দিন ১০০-১২০টাও বেচছি। গরম বাড়লে বেচাকেনাও বাড়বে।’ আশা সবুজের। সবুজেরা সময় বুঝে পণ্য বদলালেও খুশির মতো শিশুরা তা করতে পারে না। এদের কাছে সহজলভ্য হলো ফুল। তাই এটিই এদের সব সময়ের পসরা-পণ্য।

বিজয় সরণি সিগন্যালে গোলাপ ফুল বিক্রি করে নয়-দশ বছরের মেয়ে খুশি। সিগন্যাল পয়েন্টে লাল বাতি জ্বলে উঠলে কিংবা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামার সংকেত দিতেই শশব্যস্ত হয়ে পড়ে সে। ছুটে যায় সিগন্যালে দাঁড়ানো গাড়িগুলোর দিকে। একটার পর একটা কাচের সামনে তুলে ধরে তার ফুলের পসরা। আকুল চোখে তাকায় গাড়ির ভেতরে বসা যাত্রীদের দিকে, যদি কেউ দু-একটা ফুল নেয় তার কাছ থেকে। বিনিময়ে যা পাবে তা যে দরিদ্র মায়ের সংসারে বড় প্রয়োজন। এই বয়সেই খুশি হয়ে উঠেছে পরিবারের অর্থ জোগানোর সদস্য।

ট্রাফিক সংকেত পেয়ে গাড়ি চলতে শুরু করলে ফুটপাতে উঠে আসে খুশি। তখন তার সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। কেমন বিক্রি হয়- জানতে চাইলে ফুল পসারী খুশি বলে, ‘কেউ কেনে, কেউ কেনে না। জোর করলেও অনেকে কেনে না। কয়েকজনে আবার ফুল নেয় না, ট্যাকা দিয়া যায়।’ টাকা দিয়ে কী করো? খুশির জবাব, ‘ট্যাকা মায়রে দেই, মায় বাজার করে। আব্বায় নাই, আমগো হালাইয়া থুইয়া গেছে গা।’

রাজধানীর মহাখালী সিগন্যালে পানি বিক্রেতা বশির ও মনির। একই স্থানে পানি বিক্রেতা পাওয়া গেল আরো কয়েকজনকে। গরমে ঠান্ডা পানির চাহিদা বেশি। তাই অধিকাংশ হকারই এখন বিক্রি করছেন ‘জীবনের অপর নাম’ পানি। দুই বছর ধরে এখানে পানি বিক্রি করছেন বশির। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার শুরু থাইকা গরমে পানি বেচি। শীতে অন্য কাম করি। পানি বেইচা ডেলি থাকে চার-পাঁচ শ টাকা।’

কদিন আগেও শসা-গাজর বেচতেন মনির। এখন ফেরি করেন পানি। তিনি বলেন, ‘এখন গরম না অনেক। পানি বেশি চলে। ঠান্ডা পানি সবাইর লাগে। এর লাইগা পানি বেচি। ডেইলি পাঁচ-ছয় কেইস (প্রতি কেইসে ২৪টি) বেচি। মাঝে মাঝে বেশিও যায়। বাসে উডলে বেশি বেচা হয়।’ তাদের কি কোনো ‘ট্যাক্স’ দিতে হয় না? হয়। তবে সরকারি ট্যাক্স না। মনির যেমন বলেন, ‘বাসে উঠলে পরে হ্যালা হেলপারদের টাকা দিতে হয়। তখন লাভ বেশি থাকে না।’ কিন্তু এ ছাড়া উপায়ও নেই মনিরদের। হেলপারদের দাবি না মেটালে পরবর্তী সময়ে ওই বাসে আর উঠতে দেয়া হয় না তাদের।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২০ এপ্রিল ২০১৮, ৩:২৭ পূর্বাহ্ণ ৩:২৭ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ