আবহাওয়া

রাজীবের জীবনের দাম মাত্র ৪০ হাজার টাকা!

রাজধানীতে দুই বাসের চাপে হাত হারিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা দিয়েই দায় শেষ করেছে স্বজল পরিবহন ও বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। ওই টাকা দেওয়ার পর দুই বাসের মালিকদের পক্ষ থেকে আর কোনও যোগাযোগ রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন রাজীবের বড়খালা জাহানারা বেগম।

জাহানারা বেগম বলেন, রাজীবের চিকিৎসায় আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু কোর্ট থেকে রায় দেওয়ার পর বিআরটিসি এবং স্বজল পরিবহনের পক্ষ থেকে আমাদের মাত্র ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর চেয়েও অনেক বেশি টাকা শুধু শমরিতা হাসপাতালেই খরচ হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ আরও ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা ৬০ হাজার টাকার মতো পেয়েছি। এর বাইরে আর কোনও টাকা আমরা পাইনি। রাজীবের চিকিৎসায় আমাদের আরও কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ হয়েছে। গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কাওরান বাজারে দুই বাসের মাঝে আটকা পড়ে হাত হারানোর পর রাজীবকে রাজধানীর পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক রাতেই তার চিকিৎসা খরচ দাঁড়ায় ৬০ হাজার টাকা।

এদিকে বিআরটিসি ও স্বজল পরিবহনের দেওয়া ৪০ হাজার টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজীবের চিকিৎসার ব্যয় বহন করে। প্রথমে মেডিক্যালের বাইরে থেকে কেনা ওষুধ নিজেদের খরচে কিনে টাকার রশিদ রাখতে বলা হলেও পরে পরিচালকের নির্দেশে সেই খরচ বহন করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া গত ১৭ এপ্রিল রাত ১২টা ৪০ মিনিটে রাজীব মারা যাওয়ার পর তার লাশ ফ্রিজিং অ্যাম্ব্যুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে নিতে প্রায় ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। সেই টাকাও তাদের বহন করতে হয়েছে। ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার পর এ পর্যন্ত বিআরটিসি বা স্বজল পরিবহনের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি।

উল্লেখ্য, রাজীবের হাত হারানোর পরদিন ৪ এপ্রিল এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তার চিকিৎসার খরচ বহন করতে দুই বাস মালিককে নির্দেশ দেন। এছাড়া রাজীবের কৃত্রিম হাত প্রতিস্থাপন করা হলে সেই খরচও দুই বাস মালিককে বহন করার আদেশ দেন আদালত।

একইসঙ্গে রাজীবকে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়। রায়ের পরবর্তী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, পুলিশ প্রধান, ডিএমপি কমিশনারসহ আট বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কোর্টের আদেশের পরেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত একটা মানুষের চিকিৎসায় মাত্র ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার মানে হচ্ছে, রাষ্ট্রের সঙ্গে তামাশা করা। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনিরের দুর্ঘটনাসহ আরও দুটি ঘটনার মামলায় আদালত প্রায় তিন কোটি টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। একটা মানুষ জীবনে যে পরিমাণ আয় করার কথা সেটা ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার পাওয়ার কথা। উন্নত বিশ্বেও এভাবেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১:৫৯ অপরাহ্ণ ১:৫৯ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ