আবহাওয়া

কীভাবে এলো বাংলা নববর্ষ?

নববর্ষ উদযাপনের প্রাচীনতম উদাহরণ মেসোপটেমীয় সভ্যতায় পাওয়া যায়। মেসোপটেমীয়রা খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দ নাগাদ নববর্ষ উৎসব চালু করেছিল। মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে বিষুবীয় দিনে (দিনরাত সমান)এই নববর্ষ উদযাপিত হতো। বিষুবীয় দিনকে উপলক্ষ করে আরও অনেক সভ্যতায় নববর্ষ উদযাপিত হতো।

নববর্ষ উৎসব কেবল বছরের শুরুর দিনে হয় এমন নয়। বছরের শেষ দিনটিকেও উৎসবে রাঙানোর রেওয়াজ ছিল প্রাচীনকালে। সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করার আগেও বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হতো।

নববর্ষ ১১ বাংলা সন চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের কাছ থেকে খাজনা আদায়। সেদিক থেকে পহেলা বৈশাখ সেই অর্থে বাঙালির খুশির দিন নয়। জুলুমের দিন।

পান্তা-ইলিশ কখনোই নববর্ষসংশ্লিষ্ট বিষয় ছিল না। এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি বুর্জোয়া মানসের উৎকট উপহাস মাত্র। ১লা বৈশাখের দুটি অনুষ্ঠান যেমন পূণ্যাহ ও হালখাতা হলো বেনিয়া মনোবৃত্তির ফসল।পূণ্যাহ অনুষ্ঠানে জমিদাররা খাজনা নিত। আর হালখাতার কথা সবাই জানি। আগেকার দিনে পহেলা বৈশাখের আগমন নিয়ে মানুষ থাকত উদ্বিগ্ন।

পার্বত্য এলাকার উপজাতীয় জনগোষ্ঠী বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে বৈসাবী নামে। খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দ পর্য়ন্ত জানুয়ারি নামে কোনো মাসের অস্তিত্বই ছিল না। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ অব্দে রোমে প্রথম ১লা জানুয়ারিতে নববর্ষ উদযাপন করা হয়। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে যৌক্তিক সংস্কার করেন এবং ১লা জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন নির্ধারণ করেন।

৫৬৭ খ্রিষ্টাব্দে যাজক কোর্ট পয়লা জানুয়ারির নববর্ষ উদযাপনকে খ্রিষ্টীয় চেতনার পরিপন্থী বলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১ জানুয়ারির পরিবর্তে ২৫ ডিসেম্বরকে নববর্ষ ঘোষণা করা হয়। ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডরের আবারও সংস্কার করা হয় এবং জানুয়ারির প্রথম দিন ধরা হয় নববর্ষ। পারসিক (বর্তমান ইরান)নববর্ষের নাম নওরোজ, যার অর্থ নতুন দিন।

পারস্য সভ্যতায় নওরোজ চালু করে জরথ্রুস্টিয়ানরা। জরথ্রুস্টিয়ানরা হলো অগ্নিপূজারী। সূর্য হলো তাদের দেবতা। বছরের সবচেয়ে বড় দিন, যেদিন সূর্য তার সর্বোচ্চ প্রখরতায় লম্বভাবে পৃথিবীতে উত্তাপ দেয়, সেদিনটিই নওরোজ। নওরোজ মধ্য এশিয়ার অনেক দেশের জাতীয় দিবস।

আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আজারবাইজান, কসোভো, কিররগিজস্তান, ইরান, ইরাক, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, মঙ্গোলিয়া, উজবেকিস্তান প্রভৃতি দেশে নওরোজের দিন সাধারণ ছুটি থাকে। পৃথিবীতে একসাথে সবচেয়ে বেশি মানুষ সবচেয়ে উৎসবমুখরতায় উদযাপন করে চীনা নববর্ষ।

চীনা নববর্ষ ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উদযাপিত হয়। চীন ছাড়াও হংকং ব্রুনাই, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, ম্যাকাও, মরিশাস, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশে চীনা নববর্ষ পালিত হয়। এসব দেশে এ উপলক্ষে অন্তত তিনদিনের রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকে।

হিজরি নববর্ষ পালিত হয় মহররম মাসের প্রথম দিন। ৬২২ সালে মহানবী (স) এর মদিনায় হিজরতকে উপলক্ষ করে হিজরি সাল গণনা শুরু।হিজরি সাল চান্দ্র, তাই মাসের প্রথম দিন নির্ধারিত নয়।চাঁদ দেখা সাপেক্ষে মাস গণনা শুরু হয়্ তাই হিজরি নববর্ষ কখনোই পূর্বনির্ধারিত নয়। হিজরি সালকে ইসলামিক সালও বলা হয়। ইসলামে নববর্ষ পালন করার কোন বিধান নেই। কাজেই হিজরি নববর্ষ সবচেয়ে অনাড়ম্বর। লেখক: ফাতিহুল কাদির সম্রাট, ১৬তম বিসিএস ক্যাডার।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৪ এপ্রিল ২০১৮, ৬:১২ পূর্বাহ্ণ ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ