ভারত

আপনার সন্তান কি মাদকাসক্ত? জানুন লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো

মাদকাসক্ত হওয়ার সব চাইতে ঝুঁকিপূর্ণ সময় কৈশোর। এ সময়ে বন্ধুত্ব, নতুনকে জানার আগ্রহ, আবিষ্কারের নেশা থেকেই খারাপ সঙ্গ বা বন্ধুর পাল্লায় পড়ে ছেলেমেয়েরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

অনেক সময় পরিবারের লোকজনের অগোচরে তাদের জীবন মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ে। পরে অনেক মা-বাবাই আক্ষেপ করেন, আমরা বুঝতে পারিনি। আমাদের ছেলে কবে মাদকাসক্ত হয়েছিল।

তাই প্রত্যেকেই ছেলেমেয়েদের বিষয়ে খুব ভালোভাবে নজর রাখা উচিৎ। নয়তো অসময়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারে আপনার প্রিয় সন্তানকে। জেনে নিন এমন কিছু বিষয় যা থেকে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন, আপনার সন্তান মাসকাসক্ত কি না!

যদি সন্তানের কোনো বিষয় আপনাকে চিন্তিত করে, তাহলে বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রী, সঙ্গী, বিশ্বস্ত শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলুন। দুশ্চিন্তা শেয়ার করুন। ফলে আপনি বেশি কনফিডেন্ট হবেন ও আপনার সন্তানকে সাহায্য করার জন্য কার্যকরি পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবেন।

এছাড়া কিছু কিছু লক্ষণ আছে, যা দেখে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার সন্তান মাদকাসক্ত কি না? আসুন জেনে নেই বিষয়গুলো, যা থেকে আপনি আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।

ঘুম বেড়ে যাওয়া: আবেগের উত্থান-পতন জীবনের অংশ। টিনেজার বা কিশোরদের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঘটে। যদি আপনার কিশোর সন্তানের মধ্যে টেবিলে ঘুমিয়ে পড়া কিংবা স্কুলশেষে দীর্ঘ ন্যাপ বা ঘুম যাওয়ার মতো অভ্যাস দেখা দেয়, তাহলে তা দেরিতে ঘুম যাওয়ার কারণে নয়। সন্দেহ করতে পারেন, সে মাদকে জড়িয়ে পড়ছে।

বেশি উত্তেজিত দেখাবে: যদি আপনার কিশোর সন্তান রিল্যাক্স হতে না পারে অথবা কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়া নার্ভাস বা ভীত থাকে এবং অযথা উত্তেজিত হয়ে পড়ে, তাহলে সন্দেহ করতে পারেন সে মাদক সেবন করছে। আপনার কিশোর সন্তানের মধ্যে অত্যধিক ক্লান্তি বা উত্তেজনা কিংবা উভয় দেখা দিলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেন।

কথা বলা বন্ধ করে দেয়া: অভিমান করা বা বিরক্ত হওয়া এবং কথাবার্তা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিশোরদের কমন বৈশিষ্ট্য। যদি আপনার কিশোর সন্তান আপনার সঙ্গে সব রকম কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আপনার তার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা উচিত। মাদক ব্যবহার করার কারণে সে এমনটা করতে পারে। আপনি নীরবে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

বন্ধু পরিবর্তন করা: কিশোরদের ব্যবহারে সঙ্গীদের প্রচুর প্রভাব পড়ে। তাই সে কি রকম বন্ধু নির্বাচন করছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এবং আপনার পরিবারও কিশোর সন্তানের ব্যবহারে প্রভাব ফেলেন, যা সে অ্যাডমিট করতে পারে বা নাও পারে। যদি আপনার কিশোর সন্তান এমন বন্ধু নির্বাচন করে যারা মাদক বা অ্যালকোহল সেবন করে, তাহলে তাকে তাদের সঙ্গে মেশার বিষয়ে সাবধান করুন।

এটা বলতে দ্বিধায় ভুগবেন না যে, তাদের কেউ কেউ খারাপ কাজে প্রভাবিত। আপনার সন্তান আপনাকে এড়িয়ে যাতে তাদের সঙ্গে মিশতে না পারে সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকুন। যদি আপনার সন্তান তাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে, তবে তারও মাদক সেবনের ঝুঁকি থাকে।

ব্যয় বেড়ে যাওয়া: আপনার সন্তানের অর্থ ব্যয়ের কারণ আপনি বুঝতে না পারলে বা আপনাকে না জানালে, তবে এটাকে জরুরি সতর্ক সংকেত হিসেবে ধরে নিতে পারেন। তাদের যে কোনো অজ্ঞাত ব্যয় কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি করে, যেমন- প্রতি সপ্তাহে তুমি কত টাকা খরচ কর, তুমি কাদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাও বা ঘুরতে যাও?

যদি আপনি লক্ষ্য করেন, আপনার সন্তানের হাত থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ চলে যাচ্ছে, তাহলে সন্দেহ করতে পারেন যে সে মাদক সেবন করে বা অস্বাভাবিক কোনো কিছু করে।

তাদের অজ্ঞাত ব্যয়ের উৎস অনুসন্ধানে কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং খারাপ উৎস পাওয়া গেলে তা থেকে আপনার সন্তানকে দূরে রাখার উপায় অবলম্বন করুন।

স্কুলওয়ার্ক কমে যাওয়া: যদি আপনার কিশোর সন্তানের স্কুলওয়ার্কের মান বা স্কুলওয়ার্ক কমে যায় অথবা হঠাৎ করে আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে মাদককে সন্দেহ করতে পারেন।

যে কাউন্সেলর আপনাকে ডেকেছেন তার সঙ্গে কথা বলুন এবং স্কুলের সবার সঙ্গে কথা বলে আপনার সন্তানের সমস্যা সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন।

খাদ্যাভাসে পরিবর্তন: যদি আপনার কিশোর সন্তান হঠাৎ করে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং দ্রুত ওজন হ্রাস পায় বা বৃদ্ধি পায়, তাহলে ড্রাগকে এর একটি কারণ ভাবতে পারেন।

কোকেন বা অ্যাম্ফিট্যামাইনের মতো উত্তেজক কোনো কিছু সেবনে ওজন হ্রাস পেতে পারে। এমনকি কিছু কিশোর ওজন কমানোর উদ্দেশে এসব মাদক সেবন করে।

এমনটি দেখতে পেলে পিডিয়াট্রিশিয়ানকে সন্তান নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানান। প্রায়ক্ষেত্রে পিডিয়াট্রিশিয়ানদের অ্যাডিকশন সমস্যার জন্য ভালো রেফারেল নেটওয়ার্ক থাকে এবং তারা আপনার সন্তানকে চিকিৎসার জন্য এমনভাবে মোটিভেট করতে পারেন যা আপনি পারেন না। আপনার সন্তানের সঙ্গে মাদক বা অ্যালকোহল সম্পর্কে আলাপ করতে যেন ভুলে না যান।

প্রিয় কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা: নতুন কাজ এবং লক্ষ্য নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে আপনার কিশোর সন্তানকে অনুমতি দেওয়া উচিত।

কিন্তু, আপনার সন্তান হঠাৎ করে কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললে বা আগ্রহ একেবারেই অনুপস্থিত থাকলে, তা মাদক সমস্যার সম্ভাব্য ইঙ্গিত হতে পারে।

ক্লান্তি, উদাসীনতা এবং কোনো কিছু করার জন্য মোটিভেশনের অভাবের জন্য দায়ী গাঁজা। আপনার সন্তান কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহ হারালে অথবা হোমওয়ার্ক, স্পোর্টস, ক্লাব ও দলের কার্যক্রমে লেগে থাকতে ব্যর্থ হলে আপনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

গাঁজা এবং অন্যান্য মাদক কোনো কিশোরের উদ্যোম থামিয়ে দেয় বা হ্রাস করে, তার অ্যাকাডেমিক উজ্জ্বল সম্ভাবনা এবং সামাজিক দক্ষতা অর্জনে বাধা দেয়।

স্বাস্থ্য অধিকতর খারাপ থাকা: যদি তার রক্তরাঙ্গা চোখ, বিস্তৃত পিউপিল বা শরীরে খোঁস-পাঁচড়া থাকে, তাহলে মনে করতে পারেন, সে মাদক সেবন করে।

ঘনঘন ব্লাডি নোজ বা রানি নোজ অথবা মুখ, ঠোঁট বা হাতে যেকোনো ধরনের ক্ষত হতে পারে কোকেন বা মিথঅ্যাম্ফিট্যামাইন ব্যবহারের লক্ষণ।

শরীরের কোনো অংশ ঢেকে রাখার মানে হলো আপনার সন্তান কোনো শারীরিক সমস্যাকে আপনার কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করছে। আপনার সন্তানকে পর্যবেক্ষণ করে কোনো পিডিয়াট্রিশিয়ান বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান এবং প্রয়োজনে রেফারেল বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।

সতর্কতা:

অ্যাডিকশন গোপনে বিস্তৃত হয়। তাই আপনার কিশোর সন্তানের ব্যাগে অজ্ঞাত পিল, পাইপ, সিরিঞ্জ বা অন্যান্য উপাদান পাওয়া গেলে অন্যান্য স্থানেও খুঁজে দেখুন। আপনার সন্তানের রুম বা জিনিসপত্র চেক করতে দ্বিধা করবেন না।

তার বন্ধুবান্ধব বা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলুন। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই ছেলেমেয়েদের প্রাইভেসি রেসপেক্ট করেন। কিন্তু, ড্রাগ সমস্যার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে। তা না হলে তাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

আপনার সন্তানকে ড্রাগ অ্যাডিকশন থেকে মুক্ত করতে কোনো অ্যাডিকশন সাইকিয়াট্রিস্ট বা রেফারেল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

মাদকাসক্ত
সে মাদকের সঙ্গে জড়িত হোক বা না হোক, আপনি শব্দগতভাবে কিংবা শারীরিকভাবে তাকে আঘাত দেবেন না। কিন্তু, একেবারে কেনো কিছু বলবেন না তাও নয়। আপনি কৌশলে কিন্তু কোমল ভাষায় কথা বলতে পারেন। যেমন: আমি জানি, তুমি এখন আমার সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাচ্ছো না। কিন্তু, মনে রাখবে আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। তোমার যে কোনো প্রয়োজনে আমি সাহায্য করতে পারি ইত্যাদি।

প্রয়োজন হলে শিক্ষক, প্রশাসক, প্রশিক্ষক এবং সেবাদাতার পুরো নেটওয়ার্কের সঙ্গে কথা বলুন, যারা আপনার সন্তানের সমস্যার কারণ উদঘাটন করতে সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজনে কনসালটেশনের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে যান।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৪ এপ্রিল ২০১৮, ৬:২১ পূর্বাহ্ণ ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • ইসলাম

ইবনে সীরীনের মতে স্বপ্নে মা হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

মা হারানোর স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? স্বপ্নে একজন মাকে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি দর্শনের মধ্যে রয়েছে…

২০ এপ্রিল ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ
  • স্বাস্থ্য

ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা

ঘন ঘন প্রস্রাব হল স্বাভাবিকের চেয়ে অতি মাত্রায় প্রস্রাবের চাপ বা প্রস্রাব করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক…

৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
  • লাইফস্টাইল

তরমুজ খাওয়ার পর কোন ভুলে পেট ফুলে ওঠে?

বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মকালীন এই ফল সবারই প্রিয়। বিশেষ করে রমজানে এই ফলের কদর…

৬ এপ্রিল ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ণ