ঘটনাটি গত কোরবানির ঈদের পর। ওই সময় কানাডায় অবস্থানকালে এই প্রতিবেদক ‘বেগমপাড়া’র দুর্নীতিবাজদের বেশ কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। ওই সময় কানাডার টরন্টোয় বসবাসরত বাঙালিরা একটি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করে। ড্যানফোর্থ এভিনিউয়ের কিছু দূরে অনুষ্ঠিত একটি পার্কের সেই অনুষ্ঠানে বাঙালি পরিবারের শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিল।
স্থানীয় সংসদ সদস্যও এসেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। কিন্তু অনুষ্ঠানে আসতে দেওয়া হয়নি হঠাৎ ফুলেফেঁপে ওঠা বাঙালি দুর্নীতিবাজদের, যাঁরা কিনা বাংলাদেশের অবৈধ অর্থের বিনিময়ে কানাডার টরন্টোতে বাড়ি-গাড়ি বানিয়েছেন।
এটি তো গেল সামাজিক অনুষ্ঠানে বয়কটের ঘটনা। বাংলাদেশ থেকে যেসব দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা কানাডায় বিত্তশালী হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বয়কট করা হয়।
তাঁদের বেশির ভাগই একপ্রকার সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। উপায় না দেখে তাঁদের বেশির ভাগ কানাডিয়ানদের সঙ্গেই বেশি মিশে থাকেন। আবার অনেকে টরন্টো ছেড়ে অন্য শহরের দিকে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন। ফলে কানাডার টরন্টো খ্যাত বেগমপাড়া এখন আরো বড় হচ্ছে।
নানা শহরে এসব দুর্নীতিবাজ বসতি স্থাপন করছেন।
বেগমপাড়া বলতে মূলত কানাডার টরন্টোর বিভিন্ন অঞ্চল বা শহরকে বোঝানো হয়, যেসব স্থানে বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা অর্থ পচার করেন বা অবৈধ অর্থে সেখানে আবাসন, গাড়ি কিনে বসবাস করছেন। খুব দ্রুত বাড়ি, গাড়ি কেনা এসব বিত্তশালী স্থানীয় বাঙালিদের সহজেই নজর কাড়েন। ফলে কয়েক বছর ধরে এই শহরে বসবাসরত দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে বসবাসরত বাঙালিদের দূরত্ব তৈরি হয়। সামাজিকভাবে এসব দুর্নীতিবাজকে এড়িয়ে চলা শুরু করে অন্য বাঙালিরা।
শুধু তাই নয়, টরন্টোর বাঙালিপাড়া খ্যাত ড্যানফোর্থে রোডে বিভিন্ন শপ ও স্থানে প্রকাশ্যে দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। এই পরিস্থিতিতে এসব দুর্নীতিবাজ ও অর্থ-সম্পদের মালিক কর্মকর্তারা কানাডার বিকল্প শহরে স্থানান্তরিত হতে থাকেন। গত দুই বছর ধরেই অনেক দুর্নীতিবাজ পরিবার কানাডার ক্যালগেরি শহরে স্থানান্তরিত হয়েছে। এটি কানাডার আলবার্টা প্রভিন্সের রাজধানী।
এখানে তুলনামূলক ট্যাক্স কম ও সুযোগ-সুবিধাও বেশি। এ ছাড়া এখানকার স্থানীয় বাঙালিরা এসব দুর্নীতিবাজের বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানেন না। ফলে সমাজে মিশে যেতে পারছেন এসব দুর্নীতিবাজ। তাই নিরাপদ বসবাসের বিকল্প হয়ে উঠছে ক্যালগেরি। ফলে বেগমপাড়া সম্প্রসারিত হচ্ছে কানাডার আরো একটি শহরে।
এ বিষয়ে কানাডায় গত প্রায় দুই দশক ধরে বসবাসরত মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসার পরপরই কয়েক দিনের ব্যবধানে গাড়ি ও বাড়ি কিনলেই আমরা বুঝতে পারি তাঁর অর্থের উৎস। তিনি যে বাংলাদেশে অবৈধভাবে টাকা কামিয়েছেন সেটি প্রমাণিত হয়ে যায়। ফলে এসব মানুষকে স্থানীয় বাঙালিরা বয়কট করে বা সামাজিকভাবে এড়িয়ে চলে। আর দুর্নীতিবাজ এসব মানুষের সামাজিক বন্ধনও খুব দুর্বল। চক্ষুলজ্জার ভয়ে এঁরা সাধারণত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন না। এ জন্য অনেকে এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন।’