ম্যাকেঞ্জি

আফগানিস্তানের পতনের জন্য মূলত দায়ী ট্রাম্পের চুক্তি: ম্যাকেঞ্জি

আফগানিস্তানের পতনের জন্য মূলত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে তালেবানগোষ্ঠীর ২০২০ সালের চুক্তি দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের এক শুনানিতে এই মন্তব্য করেছেন দেশটির সেনাবাহিনীর মেরিন শাখার কমান্ডার জেনারেল ফ্র্যাংক ম্যাকেঞ্জি।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অপ রিপ্রেজেন্টেটিভসের আর্মড সার্ভিস কমিটির ডাকা এক শুনানিতে আফগানিস্তান পরিস্থিতির সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন জেনারেল ফ্র্যাংক ম্যাকেঞ্জি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নির্বাহী কমিটি চিফস অব স্টাফসের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি। নিজ স্বাক্ষ্যে ম্যাকেঞ্জি বলেন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানগোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের। সেই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, ২০২১ সালের ৩১ মে’র মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

পরিবর্তে তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সামনে যে কয়েক মাস মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর সেনা সদস্যরা আফগানিস্তানে আছেন, তাদের ওপর কোনো প্রকার হামলা চালাবে না তালেবান। ট্রাম্প প্রশাসন ও তালেবান বাহিনীর মধ্যে স্বাক্ষরিত সেই চুক্তিই আফগানিস্তানের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থাকে কফিনে ঢোকানো নিশ্চিত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন ফ্র্যাংক ম্যাকেঞ্জি।

মার্কিন সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ এই কর্মকর্তা বুধবারের সাক্ষ্যে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ভুল ছিল, (চুক্তিতে) মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দিনক্ষণ উল্লেখ থাকার বিষয়টি। এর একটি মনস্তাত্ত্বিক তাৎপর্য ছিল তালেবানদের কাছে। ‘সেনা প্রত্যাহারের দিনক্ষণ উল্লেখ থাকার ফলে কিভাবে এবং কবে থেকে দেশ দখলের অভিযান শুরু করবে- সে বিষয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে তালেবান।’

চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের দিনক্ষণ ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই কফিনে আর একটি পেরেক ঠোকেন বলেও মনে করেন ম্যাকেঞ্জি। ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টু্ইন টাওয়ারে হামলার জেরে ওই বছর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী। তার ২০ বছর পর, ২০২১ সালের এপ্রিলে সেই অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বাইডেন এই ঘোষণা দেওয়ার একমাস পর আফগানিস্তান দখলের অভিযান শুরু করে তালেবান বাহিনী এবং মাত্র তিন মাসের মধ্যে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে দেশটির প্রায় সবগুলো প্রদেশ নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার পর গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলও দখল করে নেয় তালেবান। আফগানিস্তানের তালেবান বাহিনীর সাম্প্রতিক এই উত্থানের জন্য বিশ্বজুড়ে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা চলছে। বলা হচ্ছে, দেশটি থেকে তড়িঘড়ি করে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারই তালেবানদের ক্ষমতা দখলে সহায়তা করেছে।

আগের দিন মঙ্গলবার একই বিষয়ে শুনানি করেছিল কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের আর্মড ফোর্স কমিটি। সেখানে ফ্র্যাংক ম্যাকেঞ্জি ও মার্ক মিলি বলেছিলেন, আফগানিস্তান থেকে একসঙ্গে সব সেনা প্রত্যাহার না করে দেশটিতে অন্তত আড়াই হাজার মার্কিন সেনার একটি দল রাখার পরামর্শ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দিয়েছিলেন তারা, কিন্তু বাইডেন তাদের পরামর্শে কর্ণপাত করেননি।

তাদের বক্তব্যর প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি ওই দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট সেনাবাহিনী ও শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের অকপট পরামর্শকে সবসময়ই মূল্যায়ন করেন। তবে তার মানে এই নয় যে সবসময় তিনি তাদের পরামর্শ মেনে চলবেন।’ ‘যদি আগস্টের পরও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি থাকত, সেক্ষেত্রে তালেবানদের সঙ্গে ফের যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত যুক্তরাষ্ট্রের।’

শেয়ার করুন: